ফেইসবুক।সবার কাছেই জনপ্রিয় এই শব্দটি। তাই প্রাণের বাংলায় আমরা সংযুক্ত করলাম ফেইসবুক কথা বিভাগটি।এখানে ফেইসবুকের আলোচিত এবং জনপ্রিয় লেখাগুলোই আমরা পোস্ট করবো।আপনার ফেইসবুকে তেমনি কোন লেখা আপনার চোখে পড়লে আপনিও পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের ই-মেইলে।

প্রভাতী দাস
ইংরেজীতে একটা কথা আছে, ‘every cloud has a silver lining’। ভাবার্থ করলে বলা যায়, সকল দুঃখের মধ্যেও কিছুনা কিছু সুখ লেপ্টে থাকে। অনেকের কাছেই হয়তো আপাত অর্থহীন কথাগুলো, কিন্তু কঠিন সময়গুলো কিছু নতুন শিক্ষা যে দেয় সেটি স্বীকার করে নিতেই হবে।
করোনা প্যান্ডেমিকে বাস করতে গিয়ে, গত শতাব্দীর অতিমারী, ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ নিয়ে পড়ছিলাম। প্রায় প্রতিটি ঐতিহাসিক অতিমারী বা মহামারীর পরে একটা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। ১৯১৮ তে শুরু হয়ে ১৯২০ এ এসে স্প্যানিশ ফ্লু শেষ হয়। আর ১৯২৯ সালে শুরু হয়, গ্রেট ডিপ্রেশন। স্প্যানিস ফ্লু বা দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন দুটো নিয়ে পড়াশোনা করাই খুব কষ্টের, মন খারাপ হয় বড়। কিন্তু সেই সিল্ভার লাইনিং এর মতো সেখান থেকেও ভালো কিছু কিন্তু বেরিয়ে এসেছিলো, পড়ছিলাম ডিপ্রেশনের সময় সাধারন আমেরিকান জীবন নিয়ে। জানলাম, আমাদের সকলের প্রিয় ‘পটলাক’ এর জন্ম সেই ডিপ্রেশনের সময়, ‘কিচেন গার্ডেন’এর আইডিয়াও সেই সময়েরই। সারা সপ্তাহ কাজের পর শুক্র বা শনিবার পাঁচপদ রাঁধার ভয়ে ভীত আড্ডাবাজ কর্মজীবিদের আড্ডা বাঁচিয়ে রেখেছে এই ‘পটলাক’ বা ‘ওয়ান ডিশ পার্টি’। সবাই এক এক পদ রান্না করে গুছিয়ে নিলেই হলো, পাঁচ বা সাতপদ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যরাত পর্যন্ত দেদারছে আড্ডাও দেয়া যায়, লাইফ সেভার না হলেও আড্ডা সেভার তো বটেই।
এই করোনা প্যান্ডেমিকের সিলভার লাইনিং টা ঠিক কী হবে, সেটা হয়তো ইতিহাসই বলবে, কিন্তু আপাত মনে হচ্ছে, জুম বা অন্যসব ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মকেই প্রথম স্থান দিতে হবে। আড্ডা তো শুধু নয়, গান, নাচ, নাটক, বেচাকেনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, অফিস-আদালত, শিক্ষা, চিকিৎ্সা থেকে রাষ্ট্র চালনা…সবই চলছে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম-এ।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি ভার্চুয়াল চিকিৎসা দিয়ে খুব বেশীদিন পোষাতে পারিনি, হাসপাতাল আর অফিসে যাওয়া শুরু করেছিলাম প্রথম সপ্তাহের পরই। তেমনি ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও খুব একট ভক্ত হতে পারিনি, তেমন আনন্দ পাই না। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে খুব অপ্রত্যাশিত কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছি শুধুমাত্র এই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের কারণেই। ‘কিডনি ডিজিজ’ নিয়ে কথা বলা ইচ্ছে অনেক কিন্তু সামান্য সময়ের জন্য দেশে গিয়ে সেটি আর হয়ে ওঠে না। জুম এর জন্য ঘরে বসেই এখন সে কাজটি করা যাচ্ছে অনায়াসে। কয়েক সপ্তাহ আগে এমন একটি কনফারেন্স শেষ করলাম। পাওয়ার পয়েন্টে প্রায় দুই ঘন্টার কেস বেসড প্রেজেন্টেশন শেষ হবার পর, ইমেইল আর টেক্সট-এ পাঠানো কমেন্ট গুলোর সঙ্গে সঙ্গে অংশগ্রহনকারীদের একজনের ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো ছবিগুলো হাতে পেয়ে আবারও সেই সিলভার লাইনিং এর কথাই মনে হলো…
ছবি: লেখকের ফেইসবুক থেকে