চল্লিশের দশকের কথা। সাদাত হাসান মান্টোর নৌকা গিয়ে ভিড়লো মুম্বা্ইয়ের ফিল্মপাড়ার ঘাটে। সিনেমার চিত্রনাট্য লিখতে চান পাঠকের হাড় হিম করে দেয়া গল্পকার। সেখানকার ‘ফিল্মিস্তান’ স্টুডিওতে চাকরিও মিলে গেলো মান্টোর। তিনি জুটি বাঁধলেন বিখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক অশোক কুমারের সঙ্গে। ধীরে ধীরে দু’জনের মাঝে গড়ে উঠলো গভীর বন্ধুত্ব। অশোক কুমারই তখন তৈরি করেছিলেন ‘ফিল্মিস্তান’ স্টুডিও। মান্টো বন্ধুর জন্যই সিনেমার গল্প লিখবেন বলে স্থির হলো। কিন্তু শুধুই কি চিত্রনাট্য? মান্টো সিনেমায় অভিনয়ও করেছিলেন।
মান্টোকে তখন সাহিত্যের পৃথিবী চেনে গল্পকার হিসেবে। যার গল্প চাবুকের মতো আছড়ে পড়ে পাঠকের মনে। তুলে আনে জীবনের এমন সব রূঢ় দিক যা সাধারণ পাঠক সাবধানে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে। সময়টা ছিলো ১৯৪৬ সাল। তখনও ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়নি। ফিল্মিস্তান স্টুডিও একটি নতুন সিনেমা নিয়ে কাজ শুরু করে। নাম ‘আট দিন’। চিত্রনাট্য লেখেন সাদাত হাসান মান্টো। সেই সিনেমায় অশোক কুমার অভিনয় করবেন বিলে ঠিক করেন। সিনেমাটি পরিচালনার দায়িত্বও ছিলো তার কাঁধেই। কাজ এগিয়ে চলছে সিনেমার। হঠাৎ গোলমাল বাঁধলো একটি চরিত্রে অভিনেতাকে নিয়ে। মানসিক ভাবে এলোমেলো এক ফ্লাইট অফিসারের চরিত্র।কিন্তু অভিনেতা আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারেন না। ভয়ে, অস্থিরতায় অভিনয়টাই তিনি আর করতে পারছিলেন না। পরিচালক পড়ে যান মহা বিপদে। সিনেমা শেষ করবেন কীভাবে? ভাবতে ভাবতে অশোক কুমার দ্রুত চলে যান মান্টোর কাছে। মান্টো তখন লেখায় মগ্ন।বন্ধুকে হাত ধরে টানতে টানতে আশোক কুমার নিয়ে আসেন একেবারে ক্যামেরার সামনে। ওই ফ্লাইট অফিসারের চরিত্রে মান্টোকে অভিনয় করতে হবে।মান্টোর মাথায় সেদিন বোধ হয় আকাশ ভেঙে পড়েছিলো।কিন্তু শেষ পর্যন্ত বন্ধুর চাপাচাপিতে সেই চরিত্রে অভিনয় করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
‘আট দিন’ সিনেমাটি ১৯৪৬ সালেই মুক্তি পায়। আর অভিনেতা-অভিনেত্রীর তালিকায় লেখা হয় সাদাত হাসান মান্টোর নাম। এর পরে অবশ্য মান্টো আর অভিনয় করার জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি। দেশ ভাগ, দাঙ্গার আগুন মান্টোকে ছিটকে ফেলেছিলো ভিন্ন আবহে। তিনি সব ছেড়ে নিজের লেখাকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন। সে অবশ্য ভিন্ন গল্প।সমাজের রূঢ় আঘাত, ব্যক্তিগত জীবনে মদ্যপানের নেশা মান্টোর জীবনের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিলো। আহত লেখককের কলমে তখন জীবন ফুটে উঠেছিলো আশ্চর্য সুন্দর হয়ে।
প্রাণের বাংলা ডেস্ক
তথ্যসূত্রঃ প্রহর, কলকাতা
ছবিঃ গুগল