
আহসান শামীম
কোথায় যেন সুরের ছন্দপতন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ।অনুশীলনে-মাঠে এমন কী সংবাদ সম্মেলন কক্ষেও চেনা মুখগুলো কেমন যেন অচেনা।গত বিশ্বকাপ ফুটবল আর্জেন্টিনার মেসির মূর্তি ভেঙ্গেছিল মেসির শহরের মানুষরাই। এ নিয়ে মেসি কোন মন্তব্যই করেনি।নিজের খেলার দিকেই মনোনিবেশ করেছিলেন।
কোন কথা-সমালোচনা কিছুই হজম করতে পারছেন না ক্রিকেটাররা।হাসিমুখের জায়গায় কথাবার্তায় কেমন যেন উদ্ধত্ আর আক্রমণাত্মক ভঙ্গি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। এমন চাপ আর কথার ফুলঝুড়ির মাঝে আজ টসে জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ।ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে ব্যাট হাতে নামার পর শুরু হয় একের পর এক উইকেট বির্সজন এর উৎসব শেষ হয় ১২৪/৯ উইকেটে।২৯ বল হাত রেখেই ৮ উইকেটে জয় তোলে ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশ এই উইকেটে আগেও খেলেছে, ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে টস জিতে বাংলাদেশ কি ভাবে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেয় বোঝা কষ্টকর।বুঝতে গেলে আয়নায় মুখ দেখতে হবে।
দলের এমন বেহাল অবস্থা দেখে বিশ্ব ক্রিকেটেরও বিস্ময় প্রকাশ করে নানা উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।কে শোনে কার উপদেশ।ধারাবাহিক ব্যর্থ লিটন আজ আবারও ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে একাদশের সুযোগ পেয়ে ৯ রানে সাজঘরে ফেরেন।অথচ দলে অনুর্ধ ১৯ চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক ওপেনার আকবর দলে খেলার সুযোগ পান না।শেষ দশ টি-টুয়েন্টি ম্যাচে লিটন দাস ১৪০ রান করেন মোট ১২০ বল খেলে।
মুশফিকের কথিত “আয়না’র” সামনে যদি বাংলাদেশ টি-২০ দল দাঁড়ায় তাহলে দেখা যাবে এক ঘোলা প্রতিবিম্ব। না, আয়না ঘোলা নয়। ঘোলাটে বাংলাদেশের টি-২০ পারফরম্যান্স। আয়নাতে বাংলাদেশ টি-২০ দল নিজেদের দেখবে যখন, নিশ্চিতভাবেই সাদা-কালো পারফরম্যান্স পড়বে চোখে।
কোনো আন্তর্জাতিক টি-২০ টুর্নামেন্ট এখনও জেতেনি বাংলাদেশ। প্রাপ্তি বলতে ২০১৬ টি-২০ এশিয়া কাপ ও ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে রানার-আপ হওয়া।
১৭ বছরে বাংলাদেশ খেলেছে ১১৭ আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ। জিতেছে মাত্র ৪৩ ম্যাচে, পরাজয়ের সংখ্যা ৭২। শতকরা জয়ের হার ৩৬.৭৬ দেশের বাইরে আরও নিস্প্রভ বাংলাদেশ দল, ৬৭ ম্যাচে মাত্র জয় ১৯ ম্যাচে। র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম দশ দলের মাঝে এ শতকরা জয়ের হার সর্বনিম্ন। আজ থেকে তিন বছর আগেই আফগানিস্তানের কাছে টি-২০ তে হোয়াইটওয়াশও হয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলেছে জিম্বাবুয়ের সাথে ১৬টা, এরপর নিউজিল্যান্ড ১৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছে ১২টা করে ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে ১১টা, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫, নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪, ওমান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২টা করে ম্যাচ। একবার করে মুখোমুখি হয়েছে কেনিয়া, নেপাল, হংকং ও পাপুয়া নিউগিনির সাথে।
পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করা দেশগুলোর মধ্যে শুধু আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেড টু হেডে এগিয়ে বাংলাদেশ। বর্তমান সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২ বার, হং কংয়ের বিপক্ষে ১ বার এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১ বার হারার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের।
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে আরো বিবর্ণ বাংলাদেশ দল। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে আর কোনো পূর্ণ সদস্যকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। হেরেছে আয়ারল্যান্ড, হং কং ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপে বড় দলের বেশির ভাগ ম্যাচেই থাকে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ । হাতে তিন উইকেট থাকা সত্ত্বেও ভারতের বিপক্ষে ২০১৬ সালের আসরে তিন বলে দুই রান করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। একই আসরে নিউজিল্যান্ডকে ১৪৫ রানে বেঁধে রেখে ৭০ রানে বাংলাদেশের সব খেলোয়াড় সাজঘরে ফেরে।চলমান বিশ্বকাপ এর মূল পর্বের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রান করার পরও ভুল সিদ্ধান্ত, লিটনের পর পর দুই সহজ ক্যাচ হাতছাড়া, পীচ না বুঝে একাদশ সাজানোর খেসারত হিসাব জয়ের বন্দর থেকে ছিটকে যায়।এসব ভুল কে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় শ্রীলংকা।
অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কঙ্কালসার অবস্থা।ওপেনিং জুটি দলের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা হলেও বাংলাদেশের জন্য ওপেনিং জুটি হলো সবচেয়ে শঙ্কার নাম ।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ ১৩ রানে সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার।বিশ্বকাপের আগে দেশের মাঠে অষ্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে মিরপুরের পীচে খেলে সাকিব নিজেই মন্তব্য করেছিলেন, “এমন পীচে খেললে যে কোন ব্যাটারই খেলা ভুলে যাবে।” ভারতে ক্রীড়া ভাস্যকর হার্শা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন,” বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ কি পীচে প্রস্তুত হচ্ছে।” মিরপুর পীচ ম্যাচ খেলিয়ে বিসিবি’র ব্যাংক আ্যকাউন্ট ৯০০ কোটি থেকে আরও বড় হতে পারে।স্টিভ রোর্ডস এর দীর্ঘশ্বাস আর মিরপুর পীচ বাংলাদেশের ক্রিকেট কে যে বিকলাঙ্গ করেছে সে বিষয়টা সেই ‘আয়নায়’ এখন জ্বলজ্বল করছে।
ছবিঃ গুগল