
শোনা যায়, সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলন চলার সময় কলকাতায় গড়ের মাঠে একজন উচ্চ পর্যায়ের নকশাল নেতার এনকাউন্টার দেখে ফেলেছিলেন উত্তম কুমার। ভোরবেলা মাঠে হাঁটতে যেতেন তিনি। আর তখনই সেই আলো না-ফোটা ভোরে একজন দৌড়াতে থাকা মানুষকে পেছন থেকে গুলি করে মারার দৃশ্যটা দেখে ফেলেছিলেন তিনি। সেদিন সেই আগুন ঝরানো নির্মম বন্দুকের মালিক ছিলো কলকাতা পুলিশের সদস্য। হুমকি এসেছিলো উত্তকুমারের কাছে-যা দেখেছেন ভুলে যান। তা না হলে বিপদ হবে।
সেদিন কে ছিলেন সেই নকশাল নেতা?নানান অনুসন্ধান আর গবেষণা বলে, সেদিন এনকাউন্টারে নিহত মানুষটি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, নকশাল নেতা সরোজ দত্ত। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি নিখোঁজই রয়ে গেলেন। তাঁর রহস্যজনক অন্তর্ধান অথবা মৃত্যুর ঘটনার কোনো কিনারা হয়নি। রাজনীতি থেকে দূরে থাকা মানুষ উত্তম কুমার কি সেদিন চিনতে পেরেছিলেন সরোজ দত্তকে? এই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যায়নি।
আবার এমনটাও শোনা যায়, ওই সময়ে উত্তমকুমারের নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে তাঁর নিজস্ব মেকআপ রুমে হানা দিয়েছিলো কয়েকজন সশস্ত্র যুবক।তারা হুমকি দিয়েছিলো। আর সেই ঘটনাতেই নাকি হকচকিয়ে গিয়ে উত্তম কলকাতা ছেড়ে মুম্বাই চলে গিয়েছিলেন। সেই ঘটনাগুলো নিয়ে উত্তম কুমার মুখ খোলেননি কখনও। ঘটনার দিনই তিনি নাকি মাথার চুল ছোট করে ছেঁটে বম্বে মেল-এ চড়ে বসেছিলেন। যাতে ট্রেনে তাঁকে দেখে কেউ চিনতে না পারেন।এই হুমকি দেয়ার ঘটনাটাও এক রহস্যের বাতাবরণের ভিতরেই রয়ে গেছে।
মুম্বাইতে গিয়ে কোথায় উঠেছিলেন উত্তম? শোনা যায়, ট্রেন থেকে নেমে তিনি চলে গিয়েছিলেন অভিনেতা অভি ভট্টাচার্যের বাড়িতে। সেখানে একদিন থেকেই তিনি জায়গা বদল করে চলে যান আরেক অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তখন মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজের সাত নম্বর রোডের বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে উত্তম কুমার এসেছিলেন সুপ্রিয়া দেবীকে সঙ্গে নিয়ে।কলকাতার ওই ঘটনায় এতটাই ভয় পেয়েছিলেন উত্তম কুমার, যে প্রায় ঠিকই করে ফেলেছিলেন আর কলকাতায় ফিরবেন না। তাঁর মনে হয়েছিলো, কলকাতায় তাকে আর ফিরতে দেয়া হবে না। বিশ্বজিতের ফ্ল্যাটে বসে উত্তম কুমার বিশ্বজিৎ-কে বলেছিলেন, ‘বিশু, চল, তুই আর আমি মিলে এখান থেকেই বাংলা ছবি বানাবো। আর এখানে বসেই বাংলা ছবির শুটিং করবো।’
প্রাণের বাংলা ডেস্ক
তথ্যসূত্রঃ এশিয়া নেট, কলকাতা, ইন্টারনেট
ছবিঃ গুগল
No Comment! Be the first one.