ফেইসবুক।সবার কাছেই জনপ্রিয় এই শব্দটি। তাই প্রাণের বাংলায় আমরা সংযুক্ত করলাম ফেইসবুক কথা বিভাগটি।এখানে ফেইসবুকের আলোচিত এবং জনপ্রিয় লেখাগুলোই আমরা পোস্ট করবো।আপনার ফেইসবুকে তেমনি কোন লেখা আপনার চোখে পড়লে আপনিও পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের ই-মেইলে।

শাম্মী মারজিয়া
শীত আসে, শীত চলেও যায়। আমার আর সরিষা ক্ষেত এ যাওয়া হয় না। ছেলেবেলায় শীতে গ্রামের বাড়ি গেলে সারাদিন সরিষার জমিতেই পড়ে থাকতাম।
আমাদের ভার্সিটির স্টেশনের দু’ধারের জমিতে শীতে সরিষা চাষ করতো। সকাল আটটায় যখন ট্রেন থেকে নামতাম, দেখতাম ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির তখন হলুদ ফুলের শরীরজুড়ে। সকালের সূর্যের আলো ও তাপ পড়লে মুক্তার মতো ঝিকমিকে শিশির কণা গড়িয়ে গড়িয়ে নামতো ফুলের গা বেয়ে। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম সকালের সোনা রোদে ঝলমল করতে থাকা মাঠভর্তি হলুদ সরিষা ফুল।
সন্ধ্যার ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে সূর্য ডোবার আগের সেই ‘কনে দেখা’ আলোয় হলুদ ফুলগুলোর রূপ দেখে ভ্রমরার মতো আমরাও মাতাল হতাম। সন্ধ্যার মিষ্টি হিম বাতাসে দুলে দুলে উঠতো ফুলের ডগা। ফিরে আসতে শুরু করতো শিশিরের দল। জমিয়ে বসতো ফুলে। আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের মধ্যে অন্যতম এটা।
পরদিন সকালে আবারো দেখা হতো সরিষা ফুল এর সঙ্গে। যেদিন দেরিতে ক্লাস থাকতো, ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতাম সরিষা ফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে। আবৃত্তি করতাম পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের কবিতা-
‘ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করতে খেলা প্রভাত হাওয়া ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।’
সরষে ফুল পাঁপড়ি নেড়ে আজো আমায় ডেকে যায়। আমিই শুধু যেতে পারি না তার কাছে। ফুল না দেখি, সরিষার শাক তো পাওয়া যায় এখানে। তাঁর গন্ধেই স্মৃতিরা ভীড় করবে মনে, এমন ভেবেই আনতে বলেছিলাম বরকে। অনেক খুঁজে সে নিয়ে এলো একগোছা সরিষা ফুল। তা দেখেই আমার মুখ ভরা হাসি। উপচে পড়া খুশি।
আহা্, কতোদিন পর দেখলাম সেই অপরূপ ফুল।
একবার হাতে নিয়ে দেখি। আবার শুঁকে দেখি। পাঁপড়ি গায়ে মাখি।
বুক ভরে নিলাম ফুলের মিষ্টি গন্ধ।
এমন সুন্দর সরিষা ফুল যে দেশের মাঠজোড়া, সে ফুলের মিষ্টি গন্ধে মাতাল হাওয়া, চোখে লেগে থাকে হলুদের মায়া, তবে সে দেশে জন্মে কেন আমি কৃতজ্ঞ হবো না!
ছবি: লেখকের ফেইসবুক থেকে