পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।

শ্রাবণী জুঁই
এই সমস্ত হাসি দেখো না
এই সমস্ত হাসির আড়ালে থাকে অন্য হাসি
সে হাসি দেখতে চেয়ো না
সে হাসি শুনতে চেয়ো না
শুধু এটুকুই জানো ভালোবাসার গায়েও পিঁপড়ের মিছিল, উঁইপোকার শব থাকতে পারে নিশ্চিন্তে শুয়ে
শুধু এটুকুই জানো পঙ্গপালে উজাড় প্রেমের কংকাল বয়ে বেড়ায় শতকরা পঁচাশি ভাগ মানুষ
শুধু এটুকুই জানো মিথ্যের অপর নাম হাওয়াই মিঠাই
এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে চিরকালই থাকবে তা।
মূর্খ মানব হাস্যজ্জ্বল হও
হও তৈলাক্ত হাসির মালিক
হও দীর্ঘ জিভের অধিকারী
নৈরাজ্যের পা চেটে চেটে করো চকচকে মজবুত এবং দীর্ঘমেয়াদি।
মূর্খ মানব চোখ ঢেকে নাও টিনের চশমায়
বুকে ঢেলে নাও নির্লিপ্ততার সীসা
যেন তোমার পাশেই পড়ে থাকা শবাধারকে করতে পারো নির্বিঘ্নে উপেক্ষা।
মূর্খ মানব অভিমান বাড়াও
বাড়াও অভিযোগ ও সন্দেহ
চোখের ভাঁজে, অনিদ্রার কোডে লেখো তৃতীয় পক্ষের নাম এবং অভিযুক্ত করো বিপাকীয় বৈকল্যকে।
মূর্খ মানব প্রেমে অপ্রেমে
ধর্মে অধর্মে, হিংসায় বঞ্চনায় জীবন কাটিয়ে দাও
কাটিয়ে দাও ক্রীতদাসের জীবন
সবই করো শুধু প্রশ্ন করবে না
দ্বিতীয় বার ফিরে চাইবে না
আরও একবার খতিয়ে দেখবে না লাভ লোকসান।
সবই করো শুধু ভ্রুকুটি করো না
মনোযোগী হয়ো না
খুঁজো না লাল নীল হলুদ কিংবা বেগুনি হাসির মানে।
কেননা;
এই সমস্ত হাসির আড়ালে থাকা অন্য হাসিতে
থাকে মৃত্যু থাকে মিথ্যেবাদী সত্য
থাকে কক্ষপথ হারানোর অবধারিত আশংকা।
মূর্খ মানব চোখ ফিরিয়ে নাও
মন ফিরিয়ে নাও
ভাবতে বসো না ভুলেও
কেননা তুমি এবং তোমরা ভয় পেতে পারো
বিদ্রোহী হতে পারো, নির্ভিক হতে পারো
কিংবা হতে পারো আত্মঘাতী ভীষণ রকম
মানুষ।

আফরিন আহমেদ
কফিনের রং সাদা
তো যা বলছিলাম, একটা চন্দ্রের ছবি
তোলার বড়ই খায়েশ ছিল! কিন্তু
দালানের ঘেরটোপে চব্দ্র তো দূরে
থাক, টুকরো আকাশটা কাত হয়ে গেল!
আর হেলানো আকাশে হেলান দিতে
চেয়ে, আনমনে আমি পা টা হড়কে
দশতলা থেকে সোজা নিচে। তারপর
থেকে কেবল হৈচৈ আর হৈহৈ। ঘোরের
মাঝেও ঘুম আসে না। কতগুলি
শব্দ লুকোচুরি খেলে নিউরনের
সাথে… মিরাকল, লাইফ সাপোর্ট, ফলোআপ,
অবজারভেশন, আই সি ইউ, ইমার্জেন্সি,
হিসটরি… হ্যাঁ আমি তো ইতিহাসের
ছাত্রীই ছিলাম। কিন্তু কিছু মনে
পড়ছে না কেন? কী কী জানি অত
সব পড়েছিলাম? আচ্ছা মাস্টার্সের ওই
বইয়ের মলাট টা কী রঙের ছিল?
মাথাটার ভিতর লক্ষ জোনাক জ্বলে।
কেবল আমি নিভে যাই। নিভে যেতে
যেতেও টের পাই, কোথায় যেন একটা
লক্ষ্মীপ্যাঁচা একস্বরে ডেকে যাচ্ছে…

রুবাইয়াত নেওয়াজ খান (শুভ্র )
ভালোবাসা কেমন জানো?
ভালোবাসা কেমন জানো?আত্মসমর্পণের মতো!
ভালোবাসি বলে দেয়া মাত্রই শুরু হয়ে যায় –
যুদ্ধ ময়দানে সাদা পতাকার উড়া উড়ি!
“আমি তোমাকে ভালোবাসি” বলে ফেলা
আর বেয়োনেটের মুখে নিজেকে মেলে ধরা –
খুব একটা পার্থক্য নেই জানো?
তোমাকে কেউ ভালোবাসে জানো? বোঝো?
চাইলেই তাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করতে পারো!
কিংবা জেনেভা কনভেনশনের আওতায় –
করতে পারও অপমান, দেখাতে পারও অসহ্য করুণা!
তার কিছুই করবার নেই, ফিরে যেতে পারার সুযোগ নেই।
তুমি চাইলেই তার আত্মঅভিমান-
ভেঙে চুরমার করে দিতে পারও!!
তার মন নিয়ে ফুটবল খেলতে পারও,
অনুভুতি গুলো দিয়ে বানাতে পারও ছেলের হাতের ডাংগুটি!!
অনেক কিছুই কিন্তু তখন তোমার দখলে!!
জানোই তো,
ভালোবাসি বলে ফেলা মানুষেরা খুব অসহায়!
চাইলেই তার সে অসহায়ত্বের কেনাবেচা করতে পারও!
তুমি সব পারও তখন! সবকিছু পারার দল দখলে তোমার!
অথবা তুমি যদি চাও, নতজানু সে প্রেমিকের –
হাতদুটো বুকে জড়িয়ে বলতে পারও “আমিও ভালোবাসি!”
তার মাথা উঁচু করে দিতে পারও সগৌরবে,
এলোমেলো চুলে আদর দিয়ে বোঝাতে পারও তুমি আছো!
তার সাহস হতে পারও, আঁধার পথের আলো হতে পারও!
অগোছালো জীবনের মোড় ঘোরাতে পারা পথ হতে পারও!
তার তুলে দেয়া নীলপদ্মকে পরম যত্নে রেখে দিতে পারও!
সাজিয়ে দিতে পারও তার হাতে তোমার নীলপদ্ম মালা!!
হয়ে যেতে পারও তার অথবা কোন ইতিহাসে লিখা নাম!
ঊড়াতে পারও শান্তির সাদা পতাকা বহর,
হয়ে যেতে পারও মানুষ থেকে যুতসই ঈশ্বর!
এসব কিছু হোক বা না হোক,
অবশ্যই লিখে নিতে পারো নিজেদের নামে,
জীবনভর ভালোবাসাবাসির রঙিন উৎসব!!!

নুসরাত সুলতানা
আবর্তন
পলেস্তারা খসে যাওয়া দেয়ালের মত,
বের হয়ে যায় প্রেমিকের খোলস,
অতঃপর স্বামী,
তারপর কেবলই পুরুষ।
একটা জীবন কেটে যায় সমঝোতার
ব্যাকরণ বুঝতে!
এ এক জীবনের গল্প
আবার কোন জীবন প্রেম করেও
আদৌ জানে না প্রেমের কি চেহারা!
কেউ কেউ প্রেম, শরীর, কামনা বাসনা
কিছু বোঝার আগেই
পিতামাতার ইচ্ছেয়
বন্দী হয় চারদেয়ালে।
বাকি জীবন কেবল মানিয়ে নেয়া
সয়ে যাওয়া।
মাতৃত্ব কেবল উৎসর্গ আর বেদনা,
যেমন বীজ শেষ হয়ে বৃক্ষের জন্ম!
তারপর ও জীবন কেটে যায়;
কাম, ঘাম, লোভ, মোহ, রোগ,শোক
আর ছিটেফোঁটা আনন্দে!
সুখের রঙ কে কবে চিনেছে!
কে তার চেহারা দেখেছে!
সুখ সে তো সীমান্তের ওপারের
লাল টুকটুকে বউ যাকে ছুঁয়ে দিতে ভীষণ সাধ হয়!
তারপরও কে কবে মরতে চেয়েছে?
অসীম, অজানায় আজন্ম
মানুষ নামক শ্রেষ্ঠ প্রাণীটির ভয়!

সাবরিনা শারমিন চৌধুরী
মণিকার হাতে মেঘনীল চিঠি
আগুনাভ সূর্যটা ছুঁয়েছে তখন,
লীলাদের বাড়ির
পলেস্তারা খসে যাওয়া জানালার কার্নিশ,
বাবুদের লম্বা সুপুরি গাছের মাথায়
সোনারঙা আলো হাসছে মলমল হাসি,
মণিকার হাতে ছিলো তোমার চিঠি।
মণিকার প্রণয়ী কামিজের সবুজ বোতামে
হারিয়ে যাওয়া আমার বিশ্বাস,
মণিকার ডান হাতের প্লাটিনাম ঘড়িতে
থমকে যাওয়া তোমার নিশ্বাস,
মণিকার মোনালিসা আঙুলের নিপুণ বুননে সর্বগ্রাসী গল্প লেখা।
মণিকার হাতে তোমার চিঠি।
মণিকার মুখে চাঁপা ফুলের হাসি,
আমার বুকে মেঘনার গহীন ঢেউ।
মণিকার হাতে তোমার চিঠি, অধরে অমোঘ হাসির বিলাস,
আমার বুকে শীতের ঝড়, চোখে চমকে প্রণয়ের বিনাশ।
মণিকার হাতে তোমার চিঠি।
আধপোড়া রাঙতা কাগজে লেখা তোমার চিঠি,
রাঙতা কাগজে মেঘনীল কালিতে লেখা তোমার চিঠি।
মণিকার হাতে মেঘনীল চিঠি তোমার কণ্ঠস্বর,
মণিকার হাতে তোমার চিঠি মিহিন শব্দশর।