পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।
নি:সঙ্গ কুঠার

নূর হোসেন আল কাদেরী
চেতনার স্ফুলিঙ্গে জাগে- আমাদের হলুদ নি:শ্বাস,
নগ্ন তামার কন্ঠে সুরের প্রথম মূর্চ্ছনা,
আঘাতে আহ্লাদে ঝলসে যাওয়া ঈশ্বর ও
পর্বতচূড়ায় সাদা কালো জ্বলন্ত বিশ্বাস।
জীবন মানে তো রাস্তা ও সূর্যের নীরবতায়
শরীরে এঁকে রাখা প্রাচীনতম কল্পনা।
আমরা তো নির্মান করেছিলাম- একটি নি:সঙ্গ কুঠার;
নিমগ্ন ছিলাম সরোবরে
আর আমাদের চুম্বনে ছিলো- মরিচারোধী ভবিষ্যত ইস্পাত,
ঈশ্বরের সকল প্রতিদান, বজ্রাঘাত, প্রথাবিরোধী সব অভিশাপ।
তবু আমরা মুগ্ধ ছিলাম শিকারে ও প্রেমে
পেট্রোলের গন্ধ হয়তো বা নেশা ধরাতো আমাদের বুকে
কিন্তু তখনও আমরা জানতাম না
ডাইনোসার ও এককোষী এ্যামিবার গোপন সম্পর্কের কথা
তখনও ভাইরাল হয়নি পাউরুটি ও দই উৎপাদনের রসালো গল্প
পত্রিকার বিনোদন পাতা গুলো তখনও সেঁটে থাকতো তরুন তরুনীদের ব্যক্তিগত দেয়ালে;
তবু তখনও আমাদের জানা হয়নি- আমাদের নির্মিত কুঠারের আঘাতে
কতটা ক্ষতবিক্ষত ছিলাম আমরা- কতটা ক্ষতবিক্ষত ছিলো শরীর, মন ও আমাদের নি:সঙ্গ ঈশ্বর।
বিষণ্ণতার জবানবন্দি

শ্রাবণী জুঁই
জামানত বিহীন অভিমান দাঁড়িয়ে থাকে মধ্যম জীবনে
যেন একটা বিরাম চিহ্ন
যেন পথের মধ্যিখানে একটা মস্ত দেয়াল
যে দেয়াল জুড়ে ফুটে থাকা কাঁটা গুল্মের উজ্জ্বলতায় চোখ অন্ধ হতে চায়,
যেন বলতে চায় একা হও, একা হও
একা হয়ে যাও….!
লিখিত জবানবন্দিতে বিষণ্ণতা বলেছিল
প্রতিবার মানব জন্ম অস্বীকার করেছি
প্রতিবার উপেক্ষা করেছি যাপিত জীবনের ভার
তবুও কি পরিহাস দেখো
বার বার মানুষ হয়ে জন্মাতে হয়
অথচ আমি অনন্ত যৌবনা নদী হতে চেয়েছিলাম
স্রোতস্বিনী তন্বী তরুণী এক নদী হতে চেয়েছিলাম
তবুও কি পরিহাস দেখো
বার বার মানুষ হয়ে জন্মাতে হয়
বার বারই করতে হয় বৃত্তাকার ভ্রমণ।
জামানত বিহীন অভিমানে বিষণ্ণতা নদী হলেও হতে পারতো
যেমন হতে পারত সীমানা হারাবার প্রবল উল্লাস!
তবুও কি পরিহাস দেখো
বার বার মানুষ হয়ে জন্মাতে হয়
বার বারই দেয়াল ভাঙতে হয়….//
জলের কানাকানি

ফারহানা নীলা
অভিমন্যু
কতটা দূরে এলাম বলো তো! কে কাকে কতটা ছেড়ে এলাম!
কতটা সময় অপচয়ে জানা হয় একাকী ডাহুকের একাকীত্ব?
মেঘ বেয়ে নামে জল; হয়তো বৃষ্টি নামে ডাকো!
চোখের ইঁদারায় যে জল, তাকে কি নামে বলো ডাকো?
অভিমন্যু,
আজো সেই সাঁকো আছে,
আছে নীচে জলের ধারা,
আছে সাঁকোর বুকে আমাদের পদরেখা।
আজো যে পেরোতেই পারিনি এক সাঁকো দূরত্ব!
একপারে তুমি উজান খোঁজো; এই পারে আমি ভাটির টানে কেবলই দূরে যাই আর দূরে যাই!
অভিমন্যু,
একবার এসো দিগন্তরেখায়…. একবার জল আকাশের মেঠোপথে মিশে যাই আবার ততোধিক নীলে!
কালো মেঘে ভয় কি বলো!
আঁধারের সমার্থক যে কালো…. সেই রঙ তোমারও, আমারও!
চলো আজ তবে শ্রাবণের প্লাবনে ভেসে যাই…
সাঁকো পরিমাণ দূরত্বে থেকেই একবার হই দিগন্তরেখা ; ছু্ঁয়ে যাই বিষাদের গাঢ় নীল!
একবার তবে বলি জলের ব্যথা আকাশের কানেকানে!
কবিতা হবো

রুহেনা চৌধুরী
আমি একখানা কবিতা হতে চেয়েছিলাম ..
তোমার খাতায়…
সময়ের কলমে তুমি রচনা করবে শব্দকাব্য
আমি হবো শব্দের অক্ষর …
আকাশ দেখলেই তুমি অনুরণিত হবে আমাকে ভেবে..
নীল জোছনায় আমার ছায়া পাবে তুমি
ভোরের কাঁচা সোনা রোদ তোমাকে নন্দিত করবে আমার রূপে
আমি হবো তোমার কবিতার প্রতিপাদ্য ।
লিখবে ! একখানা কবিতা !
এলোমেলো যুক্তাক্ষর … হাসি কান্নার মনি মুক্তা
তোমার আমার সন্ধিপত্র , রাগ-অনুরাগ
লিখবে ! লিখবে দুটো লাইন !!!!!
চন্দ্রিমায় শুদ্ধ যাপন , ভালোবাসার বীজ বপন
কতশত সহস্র বাক্যের ভান্ডার থাকবে তোমার রচনায় …
আমাদের দুর্লভ যাতনা …পারবে কলমের আঁচড়ে তুলে নিতে !
কল্পনার অশুদ্ধ স্নানে ভেসে যাওয়া সময়ের কালি
তোমার মৌনতার বানানে বানানে হবে পরিশুদ্ধ
কে কবে ভেবেছে কবিতার পংক্তিমালায় কবি কাকে বর্ণিত করে !
শুধু পাঠকের অগোচরে জানে কবি আর সংগীনি
আমার না থাকাও তোমাকে করবে বিরল..
তোমার সম্বর্ধনায় আমি ওপার হতেও হবো গর্বিত …
একবার শুধু রচিত করো শব্দকাব্য.. আমি শৃঙ্খল মুক্ত করে
জন্ম জন্মান্তর কেবল সেই শব্দেই জড়িয়ে রবো …
সুগার কোডেড

শওকত আহসান ফারুক
সেদিন রাতদিন ছিলো মেঘলা আকাশ
বিষন্ন মন উতল হয়েছে হেমন্তের ভেজা বাতসে
নোনাপানি উচ্ছ্বসিত, উপসাগরে ঢেউ উঠেছে।
প্রাগৈতিহাসিক দিনগুলোতে
প্রাণীদের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিহিংসা
চরিতার্থ হয়েছে ব্যাপকবিস্তৃত লোভাতুর প্রলাপে!
পৃথিবীতে চিহ্নিত কিছু মানুষ এখনো অধর্ম প্রচার করছে,
সুগার কোডেড কুইনাইন।
অরণি,
জ্বরের জন্য তোমাকে একটি কবিতা লিখে দেবো
জলপট্টির প্রলেপে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে…!
হেমন্তের চাঁদ ঘোরলাগা আবর্তে,
ঘুরপাক খাচ্ছিলো বন্য হরিণীর ধ্রুপদি গন্ধ,
বিরহ পুরাতন হলে নক্ষত্র নিভে যায় গভীর রাতে।
ছবি: গুগল, অলংকরণ: শামীম জাহিদ