পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।
কুড়োনীর নাকফুল

দীপা ফিরোজ
রোদ বাতাসে বরফ সকাল,
হিমঘরে কার বাস
সবুজ ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরে উদ্ভাস।
নুয়ে পড়া গাছের ডালে
নিত্যি চড়ুই আসে
পূব পবনের বাতাস যেমন মুখ লুকিয়ে হাসে।
গাছের পাতা খয়েরী রংগে
ধূলোয় লুটায় বেশ
এলোমেলো উড়ে চলে কুড়োনীদের কেশ।
হঠাৎ কখন কুড়োনী তাই
ভেবে হয় আকুল
হারিয়ে গেছে পাতার মাঝে ছোট্ট নাকের ফুল।
চোখের জলে কুড়োনী তাই
হচ্ছে একাকার
শীতের রোদে চোখের জলে দৃশ্য চমৎকার।
শহুরে বাবুর ক্যামেরাতে
দৃশ্য বন্দী হয়
দুঃখ প্রবন ছবিটাতে শহুরে বাবুর জয়
কুড়োনী আর কয়না কথা
প্রবল করুন শোকে
নাকফুল তার হারিয়ে গেছে শুকনো পাতার ফাঁকে।
বরুণ ও চন্দ্রলেখা

রূপা ফারজানা
চ: বনে যাচ্ছি
সঙ্গে যাবে?
ব: বনে? না গো,
বাঘে খাবে!
চ: যাচ্ছি সাগর পাড়
না বলো না আর।
ব: যেতাম তবে
সেই যে কবে
ভুলেছি সাঁতার!
চ: সাহারা ও থর ডিঙোতে চাই
চলো এবার মরুর দেশে যাই।
ব: বেদুঈন তো নই
মরুর তপন কেমন করে সই?
চ: পাহাড় দেবো পাড়ি
না গিয়েছো যদি তবে
আড়ি আড়ি আড়ি!
ব: আড়িই দিও তবে।
পাহাড় গিয়ে প্রাণ খোয়াবো?
তেইশ পেরোলাম সবে!
চ: তুষার ভালুক, মেরুর প্রভা
দেখবো এসব দিব্য শোভা।
ব: পড়লে তুষার ঝড়ের রোষে
নাকটা জমে পড়বে খসে!
চ: আচ্ছা তবে দু’জন মিলে
অস্তাচলের প্রান্তে দাঁড়াই,
পা বাড়ালেই অভিকর্ষ
অতল মহাশূণ্যে হারাই।
ব: কী যে বলো!
হারিয়েই তো আছি,
তোমার চোখের অমানিশায়
সব হারায়ে বাঁচি।
ঘুম হয় লাশকাটা ঘরে

সাবরিনা শারমিন চৌধুরী
নির্ঘুম সহস্র নিশিযাপন, হাজারটি নিশিতগন্ধা ভোর শেষে
পূবের আকাশে আবীরখেলা প্রারম্ভকালে
একদিন ঘুমাবার সাধ হলো আমার।
একদিন ঘুমাবার সাধ হলো আমার।
সন্ধ্যার আলো নিভে গেলে – মদিরা গ্লাসে
ভুলগুলো ভুলে থাকার নিয়মিত অভ্যাসে
টেনে দিলাম ছেদ।
হেমলকের সবুজাভ রসায়ন আদরে অক্লেশে
আহ্লাদিত দেহে আমার গেছে কখন মিশে।
আমার শয্যা তখন লাশকাটা ঘরে মৃত্যুশীতল হিমে।
বিনিদ্র এক পূর্ণ জীবন অপেক্ষায় থেকে
প্রশান্তচিত্তে নিবিড় ঘুম হয় লাশকাটা ঘরে।
হেমলকের খোঁজে দেহখানি কাটাকুটির অমোঘ কালে
দ্রাক্ষালতার মতো জড়ানো হাসি ঠোঁটের কোণে খেলে
ঝরে যেতে যেতে দু’টি স্বপ্নপদ্ম তখনও রয় অমলিন
বকুলগন্ধা বুকে মুনিয়ার প্রেম থাকে কিছু বাকী।
নির্ঘুম সহস্র নিশিযাপন, হাজারটি নিশিতগন্ধা ভোর শেষে
ঘুমহীন হৃদয়ে বেদনার বাঁশী গেছে থেমে।
আমার শয্যা তখন লাশকাটা ঘরে
প্রশান্তির ঘুম হয় মৃত্যুশীতল হিমে।
বাউন্ডারি কিংবা নো ম্যানস ল্যান্ড

আফরিন আহমেদ
সীমারেখা পার হতে গেলে অনেক কিছু লাগে।
সবচেয়ে বেশি লাগে সাহস। ঘুম থেকে চোখ মেলেই
অন্য আকাশ দেখার মধ্যে অনেক সাহস লুকিয়ে
থাকে। সবাই তা টের পায় না হয়তো। কিন্তু সাহস ঠিক
ঘাপটি মেরে থাকে চোখের পাতায়।
সীমারেখা পার হতে গেলে অনেক কিছু লাগে।
একটা দুইটা শক্তপোক্ত লাগেজ ব্যাগ লাগে।
সহজে বহনযোগ্য, কিন্তু অনেক কিছু ভরলেও
ছিঁড়ে যাবে না মতোন একটা হ্যান্ডব্যাগ লাগে। তারপর
লাগে যোগ বিয়োগ গুণ এবং ভাগে
সিদ্ধহস্ত হওয়া। কী সাথে নেবে, আর কী কী
ফেলে আসবে… এই হিসেব না মিললে সারা জীবনের পস্তানি। তারও পর লাগে সময়। চড়া দাম দিয়ে
কেনা সময় বিনে পয়সাতেই বেশ
ফুরিয়ে যায় ব্যাগ গোছাতে গিয়ে।
সীমারেখা পার হতে গেলে অনেক কিছু লাগে।
পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়াও চড়া দামের টিকেট লাগে।
সেই টিকেট কিনতে গিয়ে আবার ক্রেডিট কার্ড লাগে অনেকের। আমি বেঁচে গেছি। আমার ব্যাংক একাউন্ট
নেই, ক্রেডিট কার্ডও নেই। আছে কেবল
সাহস আর ভয়। সীমারেখা পাড়ি
দেবার সাহস আর না পেরনোর ভয়।
সীমারেখা পার হতে গেলে অনেক কিছু লাগে।
গিঁটে গিঁটে ব্যথা নিয়ে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার
পর ঘণ্টা। আর ক্লান্তিহীন চোখে ক্লান্ত মানুষ দেখতে
হয় ইকোনমি ক্লাসের। আজকাল ইকোনমিক্স আর
ইকোনমির খুব ডিমান্ড। চাল ডাল তেল
নুন, ঈদের শাড়ি, পূজার থ্রিপিস সবই ইকোনমির
আওতায় থাকা চাই। ইকোনমি
নিজেই একটা আস্ত সীমারেখা।
আমি জীববিজ্ঞান এর ছাত্রী। ইকোনমিক্স আমার
পড়তে হয়নি। তাই ইকোনমিটা সামলাতে গিয়ে
হিমশিম খাই। ক্যালকুলাস, পাটীগণিত, বা বীজগণিত, জ্যামিতি এসব কোন কাজেই আসে না দেখছি।
খাবি খেতে খেতে আমার স্বপ্ন
সীমারেখা গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু চোখ মেললেই দেখি
নিজ ভূমের অচেনা আকাশ। এই
আকাশ দেখতে সাহস লাগে না। ভয়
নিয়েও দিব্যি দেখা যায় নিত্য।
প্রতিমার ক্রন্দন

রুহেনা চৌধুরী
জীবনে আরও একবার এভাবে দেখা হবে ভাবিনি আমি !!!
জানি , তোমারও ছিলো কল্পনাতীত …
কখনও বুঝিনি আগের চেয়ে আরও বেশী সাবলীল হবে
আমাদের কথোপকথন । তুমি ভেবেছিলে কি ?
কভু বুঝিনি দুই যুগ পর তোমাকে দেখেও মনে হবে
—এইতো সেদিন দেখেছি !
এতটুকু নড়চড় হয়নি পরিচিত অবয়ব ।
পরিবেশ বা লোকসমাজ তা মানবেনা , কারণ তারা বাস্তব তোমাতে
রোজ দেখে —আমুল পরিবর্তন
আর আমি দেখি ফেলে আসা তারুণ্য , সবিনয় শাসন
তুমিও হয়ত আর সবার মতো আমাকে দেখেছো আজ
পরিপূর্ণ এক নারী , কাঁচাপাকা চুল , লাবণ্য মলিন
তবু তোমার আড় চোখের চাহনি সেদিনের মতই ছিলো প্রশ্নবোধক !
মনে পড়ে !! চলে আসার আগে শেষ দেখা হয়নি আমাদের !
তুমি চাওনি । আমি বাস্তবতার তাগিদে ছেড়ে এসেছি
—তোমার শহর ,
যেতে যেতে শহরের শেষপ্রান্তের আকাশটা যেন ছেয়ে গিয়েছিলো
তোমার বিষন্ন সিগারেটের কালো নিকোটিনের ধোঁয়ায়..
তারপর আমার ট্রেনের ইঞ্জিনের ধোঁয়ার সাথে পাল্লা দিতে দিতে
মিশে গিয়েছিলো তোমার ছড়ানো কষ্টের ধূসরতা…
তুমি কখনও কোনও প্রশ্নে আমায় বিব্রত করওনি
তবে এক প্রহরের আলোর মতো তীর্যক রশ্মি ছড়িয়েছো আমাতে
আজও তেমনটাই হয় তোমার বুকের পাঁজরে…
তুমি শক্ত করে চেপে রাখো বুকের ভেতরের মানবী কে
কিন্তু তোমার অলক্ষ্যেই তা ধরা দেয় আমায়..
জগতে তা কখনই দৃষ্টিগোচর নয় যা তোমার নয়ন কোটরে দৃশ্যমান
তোমার ভেতর রক্ষিত প্রতীমা অলক্ষ্যে তোমাকে দেখে হাসে
তুমি পাছে ক্ষিপ্ত হয়ে যাও ফেলে আসা নির্বোধ সময়ের সাথে
তাই নীরবে তোমার পূজার থালায় শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে…
তুমি মাতাল হও , একাকিত্ব ঘোষণা করও আর ওপারে
পাষাণী প্রতিমা ধীরে ধীরে ক্ষত বিক্ষত হয়…
নীল পদ্মের বিষে রক্তাত্ব হয়…হয়ত পুরনো দিন অথবা
অজান্তে ফেলে আসা পিছুটানের রেশে…