ফেইসবুক।সবার কাছেই জনপ্রিয় এই শব্দটি। তাই প্রাণের বাংলায় আমরা সংযুক্ত করলাম ফেইসবুক কথা বিভাগটি।এখানে ফেইসবুকের আলোচিত এবং জনপ্রিয় লেখাগুলোই আমরা পোস্ট করবো।আপনার ফেইসবুকে তেমনি কোন লেখা আপনার চোখে পড়লে আপনিও পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের ই-মেইলে।

মৌসুমী দাশগুপ্ত
ঘোর ঘোর জ্বরের মত দিনগুলো যায়…
কেমন এক অদ্ভুত ঘোরের মাঝে শুনি এ গেল, ও গেল, সে গেল, গেলেন তিনিও…
জীবন যাপন করি না আর, উদযাপন তো ভুলেছি কবেই! শুধু দিনপাত, শুধু আসা যাওয়া যন্ত্রের মতই…
মনে পড়ে জ্বরের ঘোরের মাঝে “বাবা, পোলাও খাব!” বলাতে বাবা পাশের কোন বিয়েবাড়ি থেকে চেয়ে এনে মাঝরাতে পোলাও মুখে তুলে খাইয়েছিলো… বাবা, যে নিজের জন্য কখনও কারও কাছে হাত পাতেনি…।
মনে পড়ে শিশু একাডেমীর পুরস্কারের পঁচিশ টাকার খাম! উফ! কত্তগুলো টাকা! শহরে নতুন এসেছে তখন ‘কোন আইসক্রিম’! বাবা মাকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যাওয়া সেই টাকায়… টিভিতে দেখেছি কাকে যেন খেতে! আহা! তিতলি- কঙ্কার সেই দোতলা বিছানা! যদি থাকতো একটা!
আশির দশকে ক্রিকেট তখনও আমজনতার খেলা নয়! আমাদের শৈশব ফুটবলে! রাত জেগে বাবার সঙ্গেই দেখা ফুটবল বিশ্বকাপ, গোওল! গোওল!
জীবন যাপন করতে হয়, ঘোরের মাঝে কাটিয়ে দিতে হয় না! কিন্তু কী এক ঘোরে সময় কাটছে আজকাল!
ষড়াশ্ব রথে পলাতকা সুভদ্রার ছবি দেখি… ধারালো চিবুক, দু’হাতের মুঠোয় লাগাম! তার ছ’ঘোড়ার নাম বুঝি শঙ্কা, বিষাদ, স্মৃতি, আর দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, ভয়! পার্থ তো কেবলই উপলক্ষ, লক্ষ্য তার স্বাধীনতা! কিন্তু দেখ, এক প্রাসাদ ছেড়ে সুভদ্রার রথ অন্য প্রাসাদের প্রাচীর ঘেরা আঙ্গিনায়! ঘোরের মাঝে রথ হাঁকিয়ে সে হারিয়েছে অরণ্য, হারিয়েছে উপকূল, হারিয়েছে শৈশব আর স্বাধীন সত্ত্বা। এখন সে অন্যতমা পার্থ পত্নী শুধু!
শৈশবের সব নায়কেরা একে একে হারিয়ে যান! জামাল নজরুল, বিজ্ঞানকে ভালবাসতে শেখানোর ইচ্ছে যার সৌম্য অবয়বে মাখা ছিলো! ফেলুদা, নূরলদীন, ম্যারাডোনা! ঘোর ঘোর ধোঁয়াশা মাখা বছরটায় সবাই চলে গেলেন! হারায় গল্প, কবিতা, গান, বেড়ে ওঠার, বেঁচে থাকার আয়োজন সব!
একদিন এক ফাইল ঘোরের মাঝ থেকে মুখ তুলে দেখি এক পশলা আলো! নবতিপর এক বৃদ্ধ করোনার মুখে লাগাম পরিয়ে, দিতে এসেছেন নিজ হাতে আঁকা আলো মাখা এক ছবি… সার্জন হিসেবে পাওয়া আমার পুরস্কার…
সে ছবির দিকে তাকিয়ে প্রাণপণে ঘোর কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করি… আছে, আছে, এখনও প্রাণ আছে! সব অধোগামিতার মাঝে এখনও মানুষ আছে, চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়!
একদিন আবার নূরলদীন ডাক পাঠাবেন, “জাগো বাহে, কুনঠে সবাই!”
একদিন আবার বাড়ি যাব…
We’ll meet again…
ছবি: লেখকের ফেইসবুক থেকে