পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।

সা’দ জগলুল আববাস
দুঃসময়
অবশেষে,কামরার ভিতর ,
কানে ফ্যানের মন জুড়ানো একদা বিরক্তিকর শব্দ
আধো অন্ধকার, চোখ বুঁজেই অবসন্ন নিউরনে
দক্ষ ফরেনসিকের মতো বুঝতে চেষ্টা করি-
জীবনটা কি আছে নাকি গেছে: এই সকালে?
তারপর বৃদ্ধ কাছিমের অলসতায় চোখ খুলি-
আছে এখনো , জানালার বাইরে আলো আছে-চড়ুই ডাকছে!
এইতো কাল গভীর রাতে
( রাতগুলো ইদানীং কেন যেন ইনসোমনিক হয়ে গেছে)
অস্থি-মজ্জা-রক্ত হীম করা অথচ পরিচিত সাইরেন,
অভিশাপের মতো গড়াতে গড়াতে
আমার সীমানায় থেমেছিলো,গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে;
বাদানুবাদের কালে দেখেছিলাম
লম্বা লিস্টের ক্রমিকে অনেকগুলো ক্রস চিহ্ন।
( পরে জেনেছিলাম এরা নাকি হাওয়ার দাম পরিশোধ করতে পারেনি-খেলাপী;
হাসপাতালে সংকুলান নেই, তাই বিনা বিচারে খাল্লাস্-লাল জেল পেনএ নাম কাটা গেছে, বেঁচে গেছে )
বার্তাবাহক—ব্যবহৃত কুচকানো সাদা পাশ বালিশ বা কখনো মনে হয় কাফনের মতো লোকগুলো
আমাকে অন্তরীন করার জন্য তিনফুট বৃত্তে ঘিরে রেখেছিলো রাত ভর-
সন্তর্পনে ঐ ছায়াগুলোর নজর এড়িয়ে
কিছু বাতাস
চালান করে ছিলাম পাঁজরের গোলাঘরে-
আল্লাহর কসম, তারা বুঝতেই পারেনি,
তাই আমাকে বারোয়ারী বাতাসের জন্য চেক কাটতে হয়নি-গজ গজ করতে করতে মৃত্যু বিদায় নিয়েছিলো।
পেশাদার খুনীর দক্ষতায়
নিজেকে পরখ করি সন্তর্পন অনুভবে,
আছে -সযত্নে লুকানো এক লোকমা বাতাস,
বুকের পরিধিতে পোষা কুকুরের মতো পাহারায়।
আচ্ছা বাতাসের একক কি ?
বাতাসের কি আয়ু আছে, জীবনের মতো?

ইশতিয়াক খান
জোসেফিন
আমার জানালায় বৃষ্টি ঝরছে
কিন্তু আমি শুধু তোমাকেই ভাবছি
বালিশে ভেজা অশ্রুকণা
কিন্তু আমি নিজেকে ফিরে পাবই
জোসেফিন, আমার সব ভালবাসা তোমায় দিলাম
আর আমার প্রতিটি পদক্ষেপ
তোমার জন্যেই
জোসেফিন
রাডারে ঝড়ের অশনী সংকেত
তাও উড়ে যেতে পারি
তোমাকে ভেবেই
আমার আকাশে বেদনার ব্লুজ সংগীত
জোসেফিন
এ জীবনের কোন মানে নেই
আমি চলে যাচ্ছিলাম
শীতলতম শীতকালে
যখন রাত, দিন হয়ে যায়
জোসেফিন, আমার সব ভালবাসা তোমায় দিলাম
আর আমার প্রতিটি পদক্ষেপ
তোমার জন্যেই
জোসেফিন
(ক্রিস রিয়া’র “জোসেফিন” গানের লিরিক্স অবলম্বনে)

খোন্দকার সোহেল রানা
অযাচিত কালিদাস
খাঁ খাঁ রোদ্দুরে, আদিগন্ত বিস্তৃত উলঙ্গ ভূমির ‘পরে
কিংবা শোঁ শোঁ আওয়াজে ঝঞ্ঝা বিধুর পটভূমিতে
মাথার ‘পরে এক আকাশ সামিয়ানা, আর শুধু আমি
যদি একবার, শুধু একবার ওমন হতো;
আমার বায়ান্ন বর্ষার জমানো চিৎকারে সব প্রকম্পিত হতো
জানি, তাবৎ মাখলুকাত কিয়ৎকাল বধির হতে পারতো
তাইতো আক্ষেপ – ইস, যদি বাঁশি বাজাতে পারতাম!
তাহলে হয়তো বাঁশির টানে কণ্ঠচেরা ঐ চিৎকার লুকাতে পারতাম।
এই যে নাগরিক ইটের বাগান, তার প্রতিটি ভাঁজে ভাজেঁই
সযত্নে লালিত সব শুকনো ফুলেল সাজ, আর –
মিথ্যে আশার বেসাতি হররোজ
যেখানে ‘হাত বাড়ালেই ছুঁইতে পারি’ দুরত্বেও
আলোকবর্ষ ব্যবধানের বসবাস, সেখানে –
মুঠোফোনের খাঁজে খাঁজে সুখের আলাপ খোঁজে চাক্ষুষ তৃপ্তি
তাই বেমানান অযাচিত ভাবে – ইস, যদি বাঁশি বাজাতে পারতাম!
তাহলে হয়তো বাঁশির সুরে বিবশ মনের আলাপ ভাঁজতে পারতাম।
দিগন্তের ঐ সুউচ্চ পর্বত, ঐ সুবিশাল মহাসাগর, অথবা গহীন অরণ্যের ঐ সর্বোচ্চ উর্বীরূহ
তার কোনোটাই আমি হতে চাইনি, চাইনি এর কিছুই আমার হোক
শুধু চেয়েছিলাম তোমাদের মাঝে…, ক্ষণেক খুব পাশে…
তার হাত ধরে রয়ে যাব কিছুকাল; খুব কি বেশি?
তবে না হয় ঐ মহাসাগর, উর্বীরূহ, কিংবা পর্বতেই হোক ঠাঁই
আর না হয় শুধু বাঁশি – ইস, শুধু বাঁশিই বাজাতে চাই
আমার শব্দবাণ শুনিবেনা কেহ, শুধু ফুৎকারে বেজে ওঠা সুরে
কখনো নাচুক বায়ু, গেয়ে যাক প্রলয়ের গীত, আর তুমি শুধু শুনো প্রিয়ে শুনো মোর ডাক।
ইস, যদি বাঁশি বাজাতে পারতাম!
যদি বাঁশি বাজাতে পারতাম!

ইসমাত সুলতানা
পথের মোড়ে সেদিন
সেদিন পথের মোড়ে ছিলাম আমি
সময়ের পালক থেকে একটা মুহূর্ত খসে পড়েছিল
যখন আমি তোমাকে দেখেছিলাম
হাওয়ার বিপরীতে হেঁটে আসছিলে তুমি
একটু দূরে থেকেও দৃষ্টিগোচর হয়েছিলো
তোমার একাগ্র চোখ আর খুঁজে পাবার তীব্র তৃষ্ণা
তুমি জানতেও না হয়ত
খুঁজছ আমায়
কখনো নীলিমায় চষে ফেলেছে দুচোখ
হয়তো কোন নীরব সন্ধ্যার আবছা আলোয়
নয়ত আঁধার রাতের একাকীত্বে
খুঁজেছ আমায়
অথচ আমরা ছিলাম মগ্ন নৈমিত্তিক জীবনে
একই শহরের পথে হয়তো চলে গেছি পাশ কেটে
হয়তো আমার শাড়ীর আঁচল
ছুঁয়েছে তোমার বেখেয়ালী হাত
তারপর গিয়েছি চলে আলাদা পথে
হয়তো একই আসরে মগ্ন থেকেছি অন্যতে
কোলাহলে মিশে বা, নীরবতায়
শেষ অধ্যায়ের অনাড়ম্বর যাত্রায়
অনির্দিষ্ট দুটি পথ এসে মিলেছে একই মোড়ে
কোন এক অনিবার্যের ইশারায়
ঠিক তখন সময় থেকে খসে পড়েছে একটি মুহূর্ত
অনেককালের অন্ধকারকে জয় করে
বন্ধ চোখের দুয়ার খুলে দেখ আমি আছি
তোমার মনের ক্যানভাসে আঁকা কোন ছবি নই আমি
আমি মূর্ত, আমি দৃপ্ত, আমি উষসী
তোমার জগত জুড়ে আমি সেই
অবিনশ্বর এক সত্ত্বা
এবার বুকে হাত রাখ
অনুভব কর
একটু উষ্ণতা কি টের পেলে ?
হ্যা ওটুকুই আমি
আরও একবার ভালবাসার জন্য আমি এসেছি
চিনতে পারছ আমায় ?
নিঃশ্বাসের গভীরে একটু থাম
এবার বল, পেলে কি আমায় ?
আমি তোমার চিরকালের নিত্য নতুন হৃদস্পন্দন ।