
ফেইসবুক।সবার কাছেই জনপ্রিয় এই শব্দটি। তাই প্রাণের বাংলায় আমরা সংযুক্ত করলাম ফেইসবুক কথা বিভাগটি।এখানে ফেইসবুকের আলোচিত এবং জনপ্রিয় লেখাগুলোই আমরা পোস্ট করবো।আপনার ফেইসবুকে তেমনি কোন লেখা আপনার চোখে পড়লে আপনিও পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের ই-মেইলে।
দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ৩৫ নাম্বার গেট। কিলবিল করছে তামাটে মানু্ষের দল। বসার জায়গা নেই। ফ্লোরে জায়গা নেই। এমন কি দাঁড়ানোও মুশকিল। সবখানে পরবাসে নিজেকে ক্ষয়ে ফেলা বাঙালী মুখ। সবারই গন্তব্য ঢাকা। কেউ এসেছেন সুদুর মন্ট্রিয়ল থেকে, অতলান্তিক পাড়ি দিয়ে। কেউ ম্যানচেস্টার কি হিথরো থেকে। বেশিরভাগই এসেছেন পাশের দেশগুলো থেকে। বাহরাইন কি কাতার। এক জায়গায় জড়ো হয়ে ছুটবেন দেশে। ট্রানজিট।
হঠাৎই সঞ্জীব চৌধুরীর গলা। ‘…হঠাৎ তোমায় মন দিয়েছি, ফেরত চাই নি কোনওদিন!’ ঘাড় ফিরিয়ে দেখি, পাশের চেয়ারের তরুণের ফোন বাজে। তার রিংটোনে দলছুট। হেসে হেসে এমন এক তৃপ্ত মুখে কথা বলছিলেন, ধারণা করে ফেলি, একদিন যাকে মন দিয়েছিলেন আচমকাই, উনিই আছেন অন্য প্রান্তে।
আমার পাশের চেয়ারে বসেছেন অলিউল। পুরো রঙ জ্বলে যাওয়া একটা জুতোর দিকে চোখ যাবে আগে। খুব ফিসফিস করে বললেন, ‘হামারে ইকটু ফিরি উয়াইফাই লাগাই দিবেন’? মোবাইলটা হাতে নিতেই চোখ পড়লো স্ক্রিন কভারে ফুটফুটে এক দেবশিশুর ছবিতে। নিজেই বললেন, আমার ছাওয়াল। টলমল করা পিতৃ-চোখে তাকিয়ে থাকা গেলো না। জিজ্ঞেস করি নি, কাঁদছেন কেন? কতো অকারণে লোকে কাঁদে। আর ইনি তো এক হাজার একটা কারণে চোখ ভেজাচ্ছেন।
একটু দূরে বসেছেন আপাদমস্তক বোরকা-নেকাবে ঢাকা এক নারী। বারবার ফ্রি নেটওয়ার্ক দিয়ে কল করতে চাইছিলেন মাকে। লাইন স্পষ্ট না। কেটে যাচ্ছিলো। আম্মা হুনবার পারো? আম্মা… আম্মা..
মনে হলো, আমিও এই স্বরে আম্মাকে ডাকি। সব দূরবর্তী সন্তানের ডাক একই স্বরের হয়..
শ্যামল বৈদ্যের বাড়ি সিলেটে। দেশের মানুষ পেয়ে উনার হাজার প্রশ্ন। হঠাতই চমকে দিয়ে বললেন, দেশে যাইবার সময় আমার কিতা মনে অয় জানইন নি?
জিজ্ঞেস করলাম, কী?
বললেন, আরবার যে ফিইরা আইতে অইবো, অউ দুক্কটা!
অবাক হয়ে চোখ নামিয়ে নিয়েছি ততক্ষণে। ওই দুরের গাঙেয় ব-দ্বীপ শস্য ও সবুজের সঙ্গে এমন সব মনকেমনিয়া মানুষের জন্ম দিয়ে চলে, যারা মমতায় ভিজে ও বাঁচে। যারা বিচ্ছেদে কাতর হতে হতে চোখ মুছে, আর কর্পোরেট দুনিয়ার হরিণ দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে তার এই নিখাদপনার জন্যই।ভেতর-ঠাসা উদ্বিগ্ন উৎফুল্ল ভেজা মনের মানুষদের নিতে মাত্রই এসে পেট মোটা বোয়িং এসে গেইট-আপ করে। সবাই যার যার চেয়ার ছেড়ে পড়িমরি দৌড়ায়। আমার মনে পড়ে
একদিন দেশ ছেড়ে, আম্মাকে ছেড়ে সেই যে ছিটকে পড়েছিলাম, আজ অলিউল, শ্যামল দা’দের সঙ্গে এই যে ফেরা, তাও তো ফেরা নয়।
মানুষের ভেতর-বাড়ি সবচেয়ে ভিজে যায় যে বৃষ্টিতে, যে বেদনায় — সেটা বোধহয়, এই ছিটকে পড়া।
শেকড় থেকে
স্মৃতি থেকে
মমতা থেকে
আম্মাদের থেকে…দেবশিশু পুত্রদের থেকে…
No Comment! Be the first one.