ইশতিয়াক নাসির স্ট্যান্ড- আপ কমেডিয়ান। মিরাক্কেল সিজন সিক্স এ বাংলাদেশের হয়ে পার্টিসিপেট করেছেন জি বাংলাতে। এখন কাজ করছে মিরাক্কেলের মেন্টর হিসেবে। আপাতত কলকাতাতেই বসবাস। তাই দূরালাপনির মাধ্যমেই তাকে ধরতে হলো। কথা হলো তার কাজ এবং কাজকে ঘিরে তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে।
* তুমি এক সময় পার্টিসিপ্যান্ট ছিলে। এখন মেন্টর হয়েছো কেমন লাগছে?
- যখন পার্টিসিপ্যান্ট ছিলাম তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল একদিন মেন্টর বেঞ্চে বসবো। কারন সিজন ১ থেকে ৮ পর্যন্ত অনেকেই মীরাক্কেলে পারফর্ম করেছে। তারকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কিন্তু মেন্টর হিসেবে কাজ করেছে তাদের মধ্যে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। আমি নিজেও তাদের একজন হিসেবে থাকতে পেরে খুবই খুশি।
* তোমার নিজের মেন্টরদের সঙ্গে কাজ করতে কোন সমস্যা হচ্ছে কি? ওরা তোমাদের কিভাবে রিসিভ করছে?
- আমার যারা মেন্টর ছিল তাঁরা এখন আমার সহকর্মী। তাই সম্পর্কটা এখন আগের চেয়ে অনেক, অনেক বেশি কাছাকাছি। আমরা ভাল বনধুও বটে। তবে, কাজের ক্ষেত্রে যেহেতু তাঁরা আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ তাই প্রয়োজনে সাহায্য বা পরামর্শ সব সময় নিতেই হয়। মীরাক্কেল সব সময় টীম ওয়ার্কে বিশ্বাস করে, তাই টীম হিসেবেই আমরা কাজ করি।
* কোলকাতায় কি তোমাদের কাজের কোন সুবিধা আছে?
- সুবিধা অসুবিধা সব জায়গাতেই থাকে।আমি যেহেতু প্রফেশনালি কাজ করি, পৃথিবীর যে প্রান্তেই নিজের পছন্দমত কাজ করার সুযোগ পাব, সেখানেই কাজ করবো। আমার কাছে সুবিধা মানে হল নিজের পছন্দ মত কাজ করতে পারা। আমি যেহেতু একজন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান, তাই কমেডি নিয়ে কাজ করাটাই আমার জন্য সবচেয়ে সুখের ব্যাপার আর মীরাক্কেলে আমি ঠিক এই কাজটাই করছি।
* নিজের দেশে তোমাদের কাজের সুবিধা কতটুকু?
- বলা হয়, মানুষের এমন কোন পেশা জীবিকা অর্জনের জন্য বেছে নেয়া উচিৎ যে কাজটা করে সে মজা পায়। শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করলে, সেই কাজে খুব বেশি উন্নতি করা যায়না।এখানে আমার কাজটাই হল সারাদিন নিজে মজা করা আর মজার মজার আইডিয়াগুলোকে মীরাক্কেলের মঞ্চে উপস্থাপন করতে পার্টিসিপ্যান্টস্দের সাহায্য করা। এই কাজের জন্য আমি রীতিমত টাকা পাই। অর্থাৎ আমাদের মত একদল ইয়াং ছেলেকে মাস গেলে নিয়মিত টাকা দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র একটা কাজের জন্য, আমরা যেন একটা টিভি শো-এর ক্রিয়েটিভ আউটপুট কতটা ভাল হচ্ছে সেই ব্যাপারে চিন্তা করি। বাংলাদেশেও অনেক চ্যানেল আছে, অনেক ক্রিয়েটিভ ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু কোন চ্যানেল বা প্রোডাকশন হাউজ কি আছে যারা ঐ ছেলেমেয়েগুলোকে ডেকে নিয়ে বলবে, তোমার রুটি-রুজি নিয়ে ভাবতে হবেনা, তোমরা শুধু চিন্তা করার জন্য টাকা পাবে? অথবা টিভি চ্যানেলগুলো কি এটা কখনো ভাবে যে একটা টিভি শো এমনি এমনি হিট হয়না, এর পেছনে অনেক হোম ওয়ার্ক করতে হয়, আর সেই হোম ওয়ার্ক করার জন্য আলাদা ভাবে একটা ক্রিয়েটিভ টীম খুব দরকার। টেলিভিশন এখন আর আগের মত সেই বোকাবাক্স নেই, টেলিভিশন এখন অনেক বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি। আর এই ইন্ডাস্ট্রি তে ব্যবসা করতে হলে শুধু দুদিন পর পর একটা করে নতুন টিভি চ্যানেল খুলে বসলেই হবেনা, টিভি চ্যানেল চালানোর মত উপযুক্ত লোকদের কাজেও লাগাতে হবে। কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করতে গেলে যেমন বিবিএ, এমবিএ করা ছেলেমেয়ে লাগে, ঠিক তেমনিভাবে ক্রিয়েটিভ ছেলেমেয়েদের যদি টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে না লাগানো হয়, তাহলে সারাক্ষন শুধু বিদেশী চ্যানেল বন্ধ করে দাও, বন্ধ করে দাও বলে চিৎকার করলেই লোকে দেশি চ্যানেল দেখা শুরু করে দেবেনা। মুক্ত বাজার অর্থনীতির দুনিয়া, প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিজের মান বাড়াতে হবে।
* দেশে ফিরে তুমি কি করবে?
- এখানে আসার আগে একটা এডভার্টাইজিং ফার্মে কাজ করতাম কপি রাইটার হিসেবে। বিজ্ঞাপনে কাজ করেও যে মজা পাইনা তা নয়, তবে টেলিভিশনে কাজ করতে পারলে খুশি হব বেশি।
* এ পর্যন্ত কি কি কাজ করেছ?
- কাজ তো অনেক কিছুই করেছি তবে আমার হিসেবে কাজ সেটাই যা অন্য লোকে আমার হয়ে বলবে। সেরকম বলার মত কাজ অল্পই হয়েছে। আমি মীরাক্কেল সীজন ৬-এর পর যখন দেশে ফিরলাম তারপরেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের একটা গানের রিয়েলিটি শো হয়েছিল, বাংলাদেশি আইডল।এই ‘আইডল’ এর স্বত্বাধিকারী হচ্ছে লন্ডনে্র ফ্রিম্যান্টল। সারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ‘আইডল’ হয়েছে এই ফ্রিম্যান্টল এর পরোক্ষ সহযোগীতায়। আমি এই প্রজেক্টে দুজন স্ক্রিপ্ট রাইটারের মধ্যে একজন ছিলাম।এদের সাথে কাজ করতে পারাটা আমার জন্য অনেক বড় একটা অভিজ্ঞতা ছিল।এর পরে আমি বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশান, বাংলাদেশ অফিসে জয়েন করেছিলাম প্রডিউসার হিসেবে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উপর একটা রেডিও শো বানাতে হয়েছিল।আমার শো এর হোস্ট হিসেবে কাজ করেছিল জনপ্রিয় গায়িকা এলিটা। কলকাতা যাওয়ার আগে বছরখানেক একটা এড ফার্মে কাজ করেছি কপি রাইটার হিসেবে। এছাড়াও অনেক টিভি শো, নাটক, স্টেইজ প্রোগ্রাম তো ছিলই। আর সবশেষে আমি এখন মীরাক্কেল সীজন ৯ এর মেন্টর হিসেবে কাজ করছি।
* তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
- আমি একজন সফল স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান হতে চাই। কিন্তু এর জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে আর সেই তৈরি হওয়ার রাস্তায় হাঁটাই আমার ভবিষ্যতের লক্ষ্য।ধন্যবাদ।
Comments
No comment