পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।
কবিতার অনুবাদ সব সময়ই এক অন্যস্বর তৈরি করে। এক ভাষায় লেখা কবির প্রতিক্রিয়া অন্য ভাষায় এসে পাঠককে অন্য ভাবে স্পর্শ করে। প্রাণের বাংলার জন্য ভারতের কবি ড. হরিবংশ রাই বচ্চন, জার্মান কবি হারমান হেস এবং স্কটিশ কবি ও গল্পকার রবার্ট লুই স্টিভেনশনের তিনটি কবিতা বাংলায় ভাবানুবাদ করেছেন কবি ও লেখক সা’দ জগলুল আব্বাস।
বন্ধুতা
হরিবংশ রাই বচ্চন
স্মৃতির তোরঙ্গ খুলে দিলে
পুরনো দোস্তরা মনে পড়ে
কালের স্রোতে নানান ছলে
সুপ্রিয় বন্ধুরা গিয়েছে সরে।
বসতি বদলের সময় হয়েছে
ঠিকানা কোথায় নিশ্চিত নই_
ভেবে ভেবে রাত ভোর ছুঁয়েছে;
বন্ধুর খোঁজে চোখ মেলে রই।
কিছু বন্ধু ছিলো প্রিয়ংবদা,
কারো শ্বাসে ফুলের সুবাস,
ফুল বাগানেই হাঁটছি সদা
পাঁজর জুড়ে তাদের আবাস।
অভিমানে ফোলানো গাল
পরক্ষণেই হেসে আকুল-
বুক পাথারে উথাল পাথাল
যখন ভাঙে নিজ মনের কূল।
কালের হাতে বদলে গেছে সব
জীবিকার তরে কেউ ছুটছে-রেসের ঘোড়া,
নতুন জীবনের উঠেছে ব্যস্ত রব,
ভালোই আছে তাদেরই কেউ ইয়ার বন্ধু ছাড়া!
হায়, কোথায় পুরনো দোস্ত বন্ধু , সব হারিয়ে গেছে,
‘তুই’’তুমি’ শেষে সম্বোধনের ‘আপনি’ আছে বেঁচে।
ঘড়ির কাঁটায় টিক টিক করে বয়স চলছে বেড়ে
আংশুমানের খেরো খাতায় স্মৃতির আঁক যে পড়ে;
বিস্মরণের উজানে যখন কালের পানসি ভাসে
অতীত-আর্তের দীর্ঘ ছায়ায় সেই আয়ুষ্কাল হাসে।
জান তো বন্ধু সমুদ্রতটে পড়ে না কখনো পলি
রচিত হয় না কাল পুরাণের নতুন পদাবলি;
কাজেই বন্ধুরা যেভাবেই আছো সময়ের করিডোরে
এসো আনন্দটা লুট করি সবে বাকি জীবনটা ভরে।।
(মূল কবিতাঃ দোস্তি)
সবাই একা
হারমান হেস
কি অদ্ভুত, বনের ভিতর কুয়াশায় হাঁটা।
প্রতিটি ঝোপ এবং পড়ে থাকা পাথর একাকী,
কোন গাছ অন্যটিকে দেখে না;
সবাই একা ।
এ যেন রেলের দু’টো লাইন
অথবা পথবাতির খুঁটি
পাশাপাশি চিরকাল বসবাস
অথচ কি একা!
খালের খাড়ি ধরে নৌকার গলুই
ধোঁয়ার মতো বেঁকে পথ করে নেয়,
দাঁড় বেয়ে কুয়াশায় ঢুকে যাওয়া;
জলের বুকে জলের শব্দ,
জলের ছাতে ভেসে থাকা হিমকণা
মেশে না কোনটাই, সবাই একা।
কুয়াশায় হাঁটতে যাওয়াটা কি অদ্ভুত!
গাছ, ঝোপ, পাথর কেউ কারো নয়।
কি বিচিত্র কুয়াশায় দাঁড় বাওয়া,
জলের শরীর কেটে তোলা জলের শব্দ
কেউ কাউকে শোনে না, সবকিছু একা।
কেউ কাউকে চেনে না
সবাই একা ।
(মূল কবিতাঃ ইন দ্য ফগ)
বীরগাঁথা
রবার্ট লুই স্টিভেনসন
যে যুবক আনন্দচিত্তে জাহাজ ভাসিয়েছিলো তরঙ্গায়িত সমুদ্রে
ঐ আকাশের প্রান্তে নীলচে স্কাইপ দ্বীপের পানে;
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের ছোবল;
জাহাজের দু’পাশে কিছুটা দূরে
ছায়া হয়ে ভেসে ছিলো
ক’টা পরিচিত ভুখন্ড-রিগ্গ্যি এবং রুম ,আর পেছনে পড়ে থাকা প্রিয় ম্যুল!
তোমরা কি সেই বিষণ্ন যুবকের গান গাচ্ছো!
তোমরা কি ভাবতে পারো যে আমিই সেই যুবক!
তোমরা কি সেই যুবকটির জন্য রচেছো কোন বীরগাঁথা,
যার তারুণ্য একসময় দেদীপ্যমান ছিলো ; হায়, কোথায় সেই গৌরবের স্ফূরণ!
আমাকে ফিরিয়ে দাও সেই রৌদ্রকরোজ্জল দিন
ফিরিয়ে দাও আমার দৃষ্টির নান্দিকতা আর অহং;
হায়,তোমরা কি সেই দুর্ভাগা যুবকের জন্য গান গাইছো-
যে হারিয়েছে বৃষ্টি আর সূর্যস্নাত পাহাড়,
সমুদ্রের গন্ধ মাখা প্রিয় দ্বীপের সৈকতের হাওয়া ;
হারিয়েছে যা ছিলো কল্যাণময় এবং সঠিক,
হারিয়েছে নিজেকে !
(মূল কবিতাঃ সিং মি এ সং অফ এ লাড দ্যাট ইজ গন)
ছবিঃ গুগল