পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।

হোসনা মুরাদ কেয়া
নভেম্বর রেইন
চাইনিতো আর হৃদয় খুঁড়াখুঁড়ি–
এসব অমীমাংসিত কাব্য লিখে কী লাভ?
অবাধ্য তুমি আজ আবার তর্জনী ছুঁয়ে দিলে–
দুপুর গড়িয়ে বিকেলের হৃদয় ছুঁয়ে নিউরনে,
তোমার স্পর্ধিত ইচ্ছার কাছে হেরে যেতে হয়;
হারাতে হয় সঙ্গোপনে।
রোদমাখা দিনের ডাক প্রত্যাখ্যান করতে পারেনি সময়; গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হাইওয়ে ফোর হান্ড্রেড সিরিজ ধরে। সঙ্গী হলো এক কাপ গরম ফ্র্যাঞ্চ ভ্যানিলা আর মুঠোভর্তি আতশি স্মৃতি–
অক্টোপাসের মত জড়িয়ে থাকা ফ্লাইওভারে থেকে নামলে দেখা যায় সোহাগি নদী; তির তির করে বইছে কমলা মায়াজল। তামাটে প্রকৃতি হেমন্তের বিদায়ী সম্বর্ধনার আয়োজনে ব্যস্ত—
একপাশে লাল হলুদ ম্যাপল লিভস, অন্যপাশে সবুজ কোট পরা সারি সারি পাইন, হ্যামলকের তন্ময় অপেক্ষা; আকাশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাদা সাদা মেঘফুলের অঞ্জলি—-
….অনিবার্য বিদায় আনুষ্ঠানিকতার পরোয়া করেনা!
বিলম্বিত যাত্রায় গাড়ি চলছে সানসেট ভ্যালির সমান্তরালে। অরণ্য জুড়ে গুঞ্জরিত ঝরা পাতার এলিজি, ল্যাভেন্ডারের চোখে শুষ্ক বেগুনী চাহনি। পরিযায়ী পাখিদের বিদায়ে সায়াহ্নের চোখভরা জল।
….ফের দেখা হওয়ার স্বপ্ন জীবনের মত সত্য!
নভেম্বর রেইন ছুঁয়ে দেয় দুপুরের মোম গলা আবেগ; বৃষ্টির কান্না সামাল দিতে ব্যস্ত ওয়াইপার। ব্যাক মিররে ভেসে ওঠে ঝাঁপসা অতীত। বিবশ বিহ্বল স্টিয়ারিং পথ ভুলতে গিয়ে ফিরে আসে নিজ দরোজায়—
তনয়া হৃদয়ের সিম্ফোনিতে বাজতে থাকে হাজার বছরের চেনা সুর…..
“Drink to me only with thine eyes
And I will pledge with mine
Or leave a kiss within the cup
And I’ll not ask for wine…”
[By Ben Johnson]
নীলাদ্রীতা
অতঃপর —
অনির্ধারিত এক বিকেলে বাউল গানের আসরের তন্ময় শ্রোতা হবো আমরা! জোড়া আঙুলের বেখেয়ালি আস্কারায় মনের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা গল্পরা পেরিয়ে যাবে সেদিন…
চৌকাঠ থেকে চৌহদ্দি!
শেষ বিকেলে অনিমিখ চেয়ে থাকবো গোধূলি নদীর দিকে; চিরচেনা মায়ার টানে!
জলসিঁড়ি ভাঙবে জলের ভাঁজ ; ছলাৎ ছলাৎ অনুরণনে তীরের গায়ে লেগে থাকবে শঙ্কিত শিহরণ. পানকৌড়ির ঠোঁটে লেগে থাকা জলের দাগ– গল্পের শেষ দৃশ্যের মতোই সত্য ! আমরা শুধু নীরব সাক্ষী হবো বজরার দিন গণনার অনুচ্ছেদের অনুক্ষণের মতোই… নীরব.
রুপালি গুঞ্জনে ঝিঁঝিঁ পোকাদের বিজয় উল্লাসে আমরাও সামিল হবো. আড়চোখে শুধু ঈর্ষান্বিত হবো চন্দ্রমুখী কাশফুলের স্নানউল্লাস দেখে. অনবহিত আলোর ঝালর ছুঁয়ে যাবে ১০১ টা অভিমানী কবিতার চিবুক…
দিবাবসানে অনির্বাণ চাওয়াগুলো ল্যাপ্টে থাকে অন্তঃসলীলার তলদেশ, হারিয়েও হারায় না জোয়ার ভাটার হিসাব নিকাশে–
শেষ ট্রেন ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়–
ফিরতি ট্রেন ধরতে না পারার আক্ষেপ জড়িয়ে অপেক্ষারা বসে থাকে শিমুলতলী স্টেশনে–
ভূগোল না জানা পথও একসময় গন্তব্য খুঁজে পায়–
নীলাদ্রীতার ইচ্ছের মায়াপাখি কেবলই
পথহারা পরবাসী…
নন্দিনীও ভালোবেসেছিল মেঘকে

শ্রাবণী জুঁই
আর আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম
তার বুকে ছিল উত্তাল সমুদ্র
চোখে যাযাবর স্বপ্ন
আর আমরা একসাথে পাড়ি দিয়েছি
চাঁদের পাহাড়, শনির বলয়
একই সাথে দৌড়ে গেছি
আন্তঃমহাদেশীয় রাতের ট্রেনে তীব্র হুইসেল
বাজিয়ে করেছি হুল্লোড়।
আর আমায় যে ভালোবাসত
সে যুবক অন্ধত্ব বরণ করেছিল উদার চিত্তে
বন্ধ্যা অপেক্ষায় কাটিয়ে দিচ্ছিল যুগের পর যুগ
বৃত্তাকার পরিভ্রমণ ক্লান্ত স্টেশনে
মুখোমুখি দাঁড়াবার অবকাশটুকু খুব যত্নে রাখা তার বুক পকেটে
এক গুচ্ছ ম্যাগনোলিয়া, একোরিয়াম ভর্তি উজ্জ্বল মাছ
আমার জন্য অপেক্ষায় পুরো একটি শতাব্দী
আমায় ভালোবাসত যে যুবক
মনোস্মরণীতে দাঁড়িয়ে প্রখর কন্ঠে বার বার বলেছিল—–
‘নন্দিনী জনম জনম ভালোবাসব তোকেই…..
আর যার জন্য আমি হেরে গেছি ব্যস্ত এভিনিউয়ে
হারিয়েছি হৃদয় সে আমার সাবেক
আমার প্রেমিক নীলকমল।
আর যারা যারা আমায় করেছিল হাস্যরসে তিরস্কার
কটাক্ষের বেষ্টনী বলয়ে
আমার নামে হুলিয়া, শহুরে বাতাসে দাবানল
নন্দিনী উড়ে গেছে দাঁড়কাকের সংসারে!
আর আর যাকে আমার ভালোবাসবার কথা ছিল
নাগরিক দেয়ালে তাদের নামের পাশে জুড়ে দিচ্ছি লাল কালিতে ‘পেন্ডিং’ সাইন
অভিমানী প্রত্যাহার পত্রে নাগরিক পথে
সয়লাব আমার স্বৈরাচারী ইচ্ছেরা।
আর আমি যাকে ভালোবাসিনি
তার জন্য প্রত্যাবর্তন করছি অভিসারী সীমান্তে
তার জন্যই রোজনামচায় লিখছি উচ্চাভিলাষী
বিষণ্ন কবিতা—–
———একদা নন্দিনীও ভালোবেসেছিল মেঘকে
করেছিল ঝর্ণায় প্রেম…..!
যে আমি ভালোবাসাকে ডেকেছি বিষাদ নামে
যে আমি ভালোবাসাকে ডাকতাম বিষাদ নামে
সে আমি’র মৃত্যু কামনায় মাথা কুটে মরে গেছে শত কোটি আয়না
আয়নায় দেখা আমি’র চোখে কাজল এঁকে দাও
পরিয়ে দাও গুচ্ছ গোলাপের হার
হাতে বেঁধে দাও মণিকাঞ্চন বিরহ
বিরহী আমিকে নির্বাসন দাও।
নির্বাসন দাও
আরও নির্বাসন দাও আলোকের জানলায় দেখা
হরিৎ সবুজ বন
যে বনে শিশির শব্দে ঝরে না আবেগ
যে বনে খুঁজে পাওয়া যায় চিত্রিত মানবীর পদছাপ
সেখানে,
সেই খানেই নির্বাসন দাও।
পুরোনো আমিকে ভেঙে চুরে ছড়িয়ে দাও
ছড়িয়ে দাও হাওয়া সমুদ্রে,
মিলিয়ে দাও নদীর জলে, ঝরনায়
কিংবা পথিকের তৃষিত আঁজলায়!
যে আমি বিমুগ্ধ আমিকে করেছি হেলা
তাকে ফেরাও এবার
ফেরাও নগরে বন্দরে, এসেম্বলি কিংবা ফুটপাত ঘিরে থাকা ফুলের দোকানে, বিক্রিত নাগরিক সৌরভে।
যে আমি ভালোবাসাকে ডেকেছি দুঃখ নামে
সে আমি’র পুনর্জাগরণে বার বার মহাকাল
করেছে আর্তনাদ।
বার বার জন্মাতে জন্মাতে ক্লান্ত আমি’কে করো
প্রত্যাহার, করো সমাজচ্যুত।
যে আমি প্রেমের নাম দিয়েছি অপেক্ষা
তাকে ডেকে নিও জনসমুদ্রে
ডেকে নিও সম্মুখ সমরে…!
ছবি:গুগল