কে ছিলো বিশ্বাসঘাতক? কে ধরিয়ে দিয়েছিলো সেই আনা ফ্র্যাঙ্ক আর তার পরিবারকে নাজি বাহিনীর হাতে? আনা ফ্রাঙ্কের জীবনের করুণ পরিণতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। রোজমেরি সুলিভানের নতুন বই ‘দ্য বিট্রেয়াল অফ আনা ফ্র্যাঙ্ক’ বলছে এক ইহুদী উকিল আর্নল্ড ভেন ডেন বার্গ জানতেন বেলজিয়ামের ঠিক কোন এলাকায়, কোন বাড়িতে লুকিয়ে আছে আনা ফ্র্যাঙ্কর পরিবার। আর এই মানুষটিই নাজি পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছিলো সেই গোপন নিবাসের খবর।
রোজমেরি সুলিভান এই বইয়ের তথ্য সংগ্রহে সাহায্য নিয়েছেন এফবিআই‘র এক অবসরপ্রাপ্ত এজেন্ট ভিন্স প্যানককের। ছয় বছর ধরে গবেষণা করে রোজমেরি এই বই লেখার কাজ শেষ করেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে হারপার কলিন্স প্রকাশনা সংন্থা।
১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট এই ভেন ডেন বার্গ নাজি পুলিশ সদস্যদের পথ দেখিয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন অ্যামস্টার্ডামের জর্দান এলাকায়। সেখানেই আত্নগোপন করেছিলেন আনা ফ্র্যাঙ্ক আর তার পরিবারের সদস্যরা।
‘দ্য বিট্রেয়াল অফ আনা ফ্র্যাঙ্ক’ বইয়ের নতুন তথ্য নিয়ে ইতিহাস গবেষকদের মাঝে মত বিরোধ তৈরি হয়েছে। ডেনিশ লেখক ডেভিড বার্নাও ২০০৩ সালে ‘হু বিট্রেইড আনা ফ্র্যাঙ্ক’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তখনকার অ্যামস্টার্ডামে ইহুদীদের আত্মগোপন করে থাকা জায়গাগুলোর তালিকা সেই উকিলের কাছে কীভাবে এসেছিলো? কিন্তু রোজমেরি সুলিভানের বই বলছে, সেই উকিল ইহুদীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কাজ করেতো সেই সময়ে। সেটা ছিলো জার্মানদের লোক দেখানো একটি প্রক্রিয়া মাত্র। তখনই তার হাতে আত্মগোপনে থাকা ইহুদী আর তাদের গোপন আস্তানার তালিকা তার হাতে এসেছিলো। নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য জার্মানদের খুশি করতে ভেন ডেন বার্গ আনা ফ্র্যাঙ্কের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলো।
অটো ফ্রাঙ্ক ছিলেন আনা‘র বাবা। ওই দিন উপস্থিত না থাকায় তিনি বেঁচে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি চিরকুট তাকে পৌঁছে দেন। সেখানেই লেখা ছিলো সেই উকিল আনা আর তার পরিবারের সদস্যদের ধরিয়ে দিয়েছিলো। আনা ফ্র্যাঙ্ক সেই জর্দান এলাকায় টানা দু’বছর আত্নগোপন করেছিলেন।
আটক আনা ফ্র্যাঙ্ককে জার্মানরা পাঠিয়ে দেয় আউসুলৎজ বন্দী শিবিরে। সেখানেই আনা ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ১৫ বছর বয়সে টাইফাস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আনা ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি লেখা হয়েছিলো ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। এই ডায়েরি ‘আনা ফ্র্যাঙ্কঃ দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়ং গার্ল’ নামে প্রকাশিত হবার পর থেকে পৃথিবীতে বহুল পঠিত বইয়ের তালিকায় একটি অন্যতম নাম হয়ে আছে এখনও।
প্রাণের বাংলা ডেস্ক
তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
ছবিঃ গুগল