পোস্টবক্স। ফেইসবুকের একটি জনপ্রিয় গ্রুপ। এবার প্রাণের বাংলার সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বাঁধলেন। প্রাণের বাংলার নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এখন থাকছে পোস্টবক্স-এর রকমারী বিভাগ। আপনারা লেখা পাঠান পোস্টবক্স-এ। ওখান থেকেই বাছাইকৃত লেখা নিয়েই হচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। আপনারা আমাদের সঙ্গে আছেন। থাকুন পোস্টবক্স-এর সঙ্গেও।
ফারহানা নীলার গুচ্ছ কবিতা

ফারহানা নীলা
১
যতটুকু যায় দেখা, দৃষ্টির অধিক আরো
যতটুকু যায় বোঝা, বুঝের অধিক আরো…
ততটুকু হয়তোবা জানো!
ভেতরে ভেতরে কোন ক্ষয়ে বাসা বাঁধে ঘুনপোকা,
কোন ডোয়া খোয়া গেছে কতটুকু, জানে উঁই পোকা।
এমন পরিপাটি আমি, এমন গোছালো সব
দৃশ্যের অন্তরালের আমি ততটাই বিশৃঙ্খল।
শৃঙ্খলা আর বিশৃঙ্খলা….. কথাগুলো বড় গোলমেলে!
অগোছালো হয়ে পড়ে থাকি শূন্য কোনোখানে।
২
তুমি দূরে গেলেই বাড়ে অস্থিরতা।
ভীষণ অভিমান, অনুযোগে ফুঁসে ওঠে দুরত্বের পরিসীমা।
অথচ কাছে এলেই দুরত্ব বাড়াবার জন্য ছলচাতুরী কলা।
কাছে আসার কথা বলতেই বাড়ে আবার দুরত্বের আকুলতা!
বুঝি না এসব! কিচ্ছু বুঝি না!
৩
পুরোটা দিন কেটে গেলো অসংখ্য বিরূপতা নিয়ে,
কুয়াশার আস্তরণে।
জানি ভিজে আছো কুয়াশায় তমসাচ্ছন্ন মনে….
জলের বুকে সাঁতরে চলেছে তোমার একাকী ক্ষণ,
অরণ্যের শূন্যতা নিয়ে।
চাও যদি এনে দিতে পারি রোদের বাহার,
রোদেলা উপাখ্যান নিয়ে।
আজ আমি ছিনিয়ে এনেছি রোদ; বুনোফুলে ভরা মন নিয়ে।
আজ বিষণ্নতা ভুলে হেসে ওঠো একবার;
ডেকো আমায় অর্ক ; এই অসহ্য বিভাবরী কেটে যাক বনজ লাবন্য ঘিরে।
৪
তিলে তিলে নিঃশেষিত হতে কতটা সময় চলে যায় মোহন মায়ায়!
কতটা মেঘ জল হয়ে ঝরে আকাশের সীমানায়,
কত জল জমে বুকের ভেতর বহতা নদীতে মোহনার আশায়!
কতবার মরণ ছুঁয়ে জীবন জাগে জীবনের ছায়ায়….
একরত্তি দ্বীপ জাগে,
একরত্তি স্বপ্ন সাজে,
একরত্তি ব্যথা বাজে…..
জীবন ভর কাঁদায়,হাসায়, হয়তো ডোবায়, হয়তো ভাসায়!
৫
আজ আমি শুনশান নীরবতা হবো; লোকালয়ের মাঝখানে ম্যানগ্রাভ বনের নির্জনতায় মূক হবো।
আজ আমি নিবিড় সবুজে গোলপাতার কুটির হবো,
আজ আমি সৈকতে কুমিরের রোদ তাপানোর ছাপে নীরব হবো।
বন্য জীবনকে আজ আমি শহুরে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানি পরী হবো!
আজ আমি জোছনা ধোয়া রাতে যুগল চাঁদ হবো….
কোন চাঁদটা তোমার বলো তো!
৬
আসো ব্যথা লুকাই।
আসো আড়াল করি ব্যথা….
কুয়াশার চাদরে ঢাকে কি? অথবা রাতের পেলব শরীরের ক্ষত দাগ ঢাকে কি?
জানো তো… ব্যথানাশক ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিছুতেই হয় না কাজ।
তুমি কিন্তু তাই বলে আবার দিও না কীটনাশক!
৭
ময়নারবুলি শুনেছো কি?
ঐ ডাকে নাম ধরে,
ঐ ডাকে তার নাম ধরে……
ঐ ডাকে কার নাম ধরে?
….. আমি কখনোই কারো ময়না পাখী নই।
৮
যাপিত এই জীবনে
কতগুলো জীবন যাপন করেছি?
কতগুলো জীবন থেকে নিয়েছি যাতনা?
কার কার জীবন যাপনের পাপ পূণ্য আমাতে করেছে ভর?
এক জীবনকে আর কত জীবনের চোখে চোখ রাখতে বলেছি আমি?
অন্ধ হও,অন্ধ হও হাভাতে হতচ্ছাড়া ; নির্ব্বংশ হও, ধ্বংস হও… গোমূর্খ ছন্নছাড়া।
৯
তীব্রতর ঘ্রাণে নিতে চাই শেষ বিদায়ের কান্নার ঘ্রাণ!
কে কাঁদে?
কোন স্বজনরা?
লোবান কর্পূর ঘ্রাণে ডুবে আছি নিয়ে শতাব্দীর শীতলতা।
শীতল ঘ্রাণ কেমন?
স্বজনের চোখের জলের ঘ্রাণ….
অথবা নিঃশব্দ প্রার্থনায় হাহাকারের ঘ্রাণ….
উচ্চস্বরে ভেসে আসে ঘ্রাণের এমনই ঘ্রাণ!
আমি জাগতে চাই না,চাই না জাগাতে এই শীতলতা!
হাস্নাহেনার সৌরভে বুঁদ হয়ে থাকি; ছাতিম ঘ্রাণ ছেয়ে নেয় মৃত্যুর অধিক ঘ্রাণ।
১০
শুনশান এই জলের বুকে নিঃসঙ্গতা খুঁজে ফেরে নির্জনতা,
নির্জন মনের কোণে উঁকি দেয় জলের ছলাৎ।
ভয় পেয়ো না!
ভয় পেয়ো না!
আজ আমি সব নির্জনতা খুবলে খাবো; খুবলে খাবো নিঃসঙ্গতা।
আজ আমি সর্বভুক বেতমিজ খাদক….. কোথায় পালাবে?
নির্জনতায় বিশুদ্ধ বাতাসেও আসে পোড়া ঘ্রাণ ; স্মৃতি পুড়িয়েছ বুঝি!
বর্তমানের আঁচলে গিঁট দিয়ে তুমি আর কতদূরে যেতে পারো?
এই যে অবয়বহীন আমি; প্রেতাত্মা খেয়েছে সব!