বিপ্লবের লাল পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে জন লেননের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং ফিদেল কাস্ত্রো। একরকম ফাঁসি-ই তো বলা যায় একে। জন লেননের গান আর বাজবে না গোটা কিউবাতে। তখন ১৯৬৪ সাল। বাতিস্তার স্বৈরশাসনের কব্জা থেকে কিউবা মুক্ত হবার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৫ বছর।কিউবার প্রধান শত্রু আমেরিকায় বিটলসের সাদর আমন্ত্রণই ভাবিয়ে তুলেছিল ফিদেল কাস্ত্রোকে।তখন পৃথিবীজুড়ে লেনন এক গণদেবতার নাম।
কিন্তু কাস্ত্রো ভেবেছিলেন দেশের সংকটজনক অবস্থায় এই গানের জোয়ার মানুষকে ভুলিয়ে দিতে পারে মানুষের বৈপ্লবিক চেতনা। লেননের গানের হাত ধরে আমেরিকার পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী মানসিকতার প্রভাবও প্রকট হবে কিউবায়। সেই সম্ভাবনাকেই গোড়ায় নির্মূল করতে ১৯৬৪ সালে তাঁর দেশে ‘দ্য বিটলস’ এবং জন লেননের সমস্ত গান নিষিদ্ধ করেন ফিদেল কাস্ত্রো। গায়কের গলায় পড়লো অদৃশ্য ফাঁসির দড়ির টান।
কিন্তু লেনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি কাস্ত্রো। লেননের মৃত্যুর ২০ বছর পরে লেননকে নায়কের মর্যাদা দেন
তিনি। ২০০০ সালের ৮ ডিসেম্বর লেননের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজন করেন একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান। যাতে শিল্পীরা উপস্থাপন করেছিলেন শুধু লেননেরই গান। সেইসঙ্গে মোনাকাল পার্ককে ফিদেল বদলে দেন ‘জন লেনন পার্ক’-এ। সেখানেই তিনি স্থাপন করেন লেননের একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি। পরে ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফারকে দিয়ে জন লেননের ওপর একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছিলেন কিউবার সেই ‘আয়রন ফিস্ট’ নায়ক ফিদেল কাস্ত্রো। কাস্ত্রোর প্রতিষ্ঠিত লেননের সেই ব্রোঞ্জ মূর্তিটি আজও পূজিত হয় কিউবাতে।
বিপ্লব পরবর্তী কিউবাতে লেননের গানকে নিষিদ্ধ করে কি কাস্ত্রো আটকাতে পেরেছিলেন তার জনপ্রিয়তা? তখন লুকিয়ে চোরাকারবারীদের হাতে সীমান্ত পেরিয়ে মাঝে মধ্যেই কিউবায় ঢুকে পড়ত বিটলসের রেকর্ড। সত্তরের দশকে গোপনীয়তার আবরণে ঢেকে লেনন আর বিটলসে‘র রক গানে ডুবে যেতেন কিউবার তারুণ্য। পৃথিবীজুড়ে লেননের জনপ্রিয়তার ঢেউ তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি কখনোই।
তবে যত দিন গড়িয়েছে, লেননের ব্যাপারে ধারণাও বদলে গিয়েছিলো ফিদেল কাস্ত্রোর। লেনন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের। সমর্থন করেছিলেন ভিয়েতনামের মুক্তিকামী মানুষকে।দেশের সীমানা টপকে অন্য দেশে আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লেননের প্রতিবাদ আকর্ষণ করেছিলো ক্যাস্ত্রোকে। এক সময়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো েযে, আমেরিকা থেকেই লেননকে বহিষ্কার করা হতে পারে। লেননের এই মানসিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। তবে এই দুই বিপ্লবীর আর কখনোই দেখা হয়নি। ১৯৮০ সালেই আততায়ীর গুলিতে নিহত হন কিংবদন্তি এই সঙ্গীতশিল্পী।
এখন কিউবায় সেই নিষিদ্ধ লেননের মূর্তি দর্শন করতে আসেন হাজার হাজার ভক্ত। লেনন-মাদকতার জেরে সেই মূর্তি থেকে প্রায় দিনই চুরি যায় লেননের চশমা। এই চুরি বন্ধ করতে কিউবায় লেননের মূর্তি এখন পুলিশের প্রহরায়।
প্রাণের বাংলা ডেস্ক
তথ্যসূত্রঃ প্রহর, কলকাতা
ছবিঃ গুগল