কফিখানায় সাহিত্যিকদের উপচে পড়া ভিড়, তাঁদের বাউণ্ডুলে জীবন, রাস্তায় রাস্তায় বেপরোয়া মদ্যপান আর ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য তখন ছিলো প্যারিস শহরের স্বাভাবিক কাণ্ড। সময়টা ১৯০৮ সাল। রাশিয়া থেকে গোয়েন্দা পুলিশের তাড়া খেয়ে বহু বিপ্লবীও পালিয়ে চলে আসেন প্যারিস শহরে। ভিড় জমায় ইহুদী সম্প্রদায়ের মানুষরাও। ঠিক ওই সময়ে জেনিভা থেকে একজন মানুষ এসে নামলেন প্যারিসে। তিনি ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। প্যারিসে লেনিনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও শাশুড়ি। সেই সময়ে রুশ তরুণ ইলিয়া ইরেনবুর্গ রাশিয়ার কোরাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চলে আসেন প্যারিসে। তিনি ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। লেনিনের প্যারিসের প্রবাস জীবন সম্পর্কে তিনি লিখেছেন,‘লেনিন তখন মূল শহর থেকে বেশ দূরে একটি বাড়িতে নিজেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে রেখেছিলেন।তিনি নগরের কোলাহল একদম পছন্দ করতেন না। লেখালেখি আর পড়াশোনার বাইরে তখন লেনিনের প্রিয় একটি কাজ ছিলো, বিকেলবেলা পার্কে হাঁটতে যাওয়া।
লেনিনের বাড়ি থেকে কয়েকটি রাস্তা দূরে ‘দ্যঁফে হুশহু’ সড়কে এক রুমের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন ইরেনবুর্গ। প্রায়ই তিনি হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতেন লেনিনের বাড়িতে। পরিপাটি করে গোছানো ঘর আর লেনিনের সুশোভন পোশাক দেখে অবাক হয়েছিলেন ইরেনবুর্গ। পরে লেখায় তিনি বলেন, লেনিন খুব গোছানো একজন মানুষ ছিলেন। প্যারিসে পালিয়ে আসা অন্য রুশ বিপ্লবীদের ভবঘুরে এবং এলোমেলো থাকতে পছন্দ করতেন না একদম।
১৯০৯ সালের জানুয়ারী থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত লেনিন প্যারিসেই ছিলেন। ওই সময়ে ভিড় থেকে দূরে নিরিবিলি সময় কাটাতানে তিনি। লেনিনের ভাষায়,‘‘প্যারিস আমার কাছে এখন নীরবে কাজ করার জায়গা, বেড়ানোর জায়গা নয়’’। ওই সময়ে লেনিন ঘরে বসে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন। আর সেই প্রবন্ধটি প্রকাশ পায় ১৯০৯ সালের নভেম্বর মাসে সেখানকার ‘সোসাইটি অফ সায়েন্টিস্ট’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায়।প্রবন্ধের নাম ছিলো ‘দ্য ইডিওলজি অফ কন্ট্রা-রেভোলিউশনারী লিবারালিজম অ্যান্ড ইটস সিগনিফিকেন্স’। ১৯১১ সালে প্যারিসে মে দিবস উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে লেনিন প্রকাশ্যে বলেছিলেন, রিাশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন প্রয়োজন বিপ্লব।
প্যারিসের প্রবাস জীবনে লেনিনের অবসর বলে তেমন কিছু ছিলো না। লেখালেখি আর পড়াশোনা তাঁর সময়ের অনেকটাই জুড়ে থাকতো। তবুও তাকে মাঝে মাঝেই দেখা যেত প্যারিসের রাস্তায় সাইকেল চালাতে। কাঁফে দু লিয়নে বসে লেনিন মাঝে মাঝে দাবা খেলতেন।আশপাশের দোকান থেকে কিনতেন জার্মান বক বিয়ার। তবে ইরেনবার্গ লিখেছেন, লেনিন সাধারণত খুব বেশি ভিড়ভর্তি কফির দোকানে বসতেন না। তিনি প্যারিসের অপেক্ষাকৃত নির্জন কোনো কফিখানায় ঢুকে কফি খেতেন আর ভাবতেন।
প্যারিসে লেনিনকে প্রচুর বৈঠকে অংশ নিতে হতো। পক্ষ ও বিপক্ষ মতের বহু রুশ বিপ্লবী তখন প্যারিসে আত্মগোপন করে ছিলো। লেনিন তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিতেন। যে বাড়িটায় তিনি থাকতেন তার কাছেই ছিলো ছোট একটি কাফে। সেখানে বলশেভিক বিপ্লবীদের আনাগোনা লেগেই থাকতো। পরে সেই কাফের নাম হয়ে যায় ‘বলশেভিক কাফে’।
প্রাণের বাংলা ডেস্ক
তথ্যসূত্রঃ লিটারেরি হাব
ছবিঃ গুগল
No Comment! Be the first one.