হাঁটতে হাঁটতে…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 23 Jan 2025

4490 বার পড়া হয়েছে

Shoes

বিকালে বা সকালে পার্কে হাঁটা স্বাস্থ্য রক্ষার জনএকটি উদ্যোগ। সুগার, অ্যাসিডিটিতে ডাক্তারের পরামর্শ…হাঁটার অভ্যাস করে ফেলেন। হাঁটলেই ফিট বলে একটা কথা তো এখন প্রচলিত। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে কত কী খুঁজে পাওয়া যায় কখনো ভেবেছি? ঋতু বদলের চিহ্ন টের পাওয়া যায় বাতাসে। গাছের ভাঙা ডাল, গাছ থেকে পড়ে যাওয়া পাখির বাসা, কখনো পথের কুকুরটার ঘন ঘুম, শীতের সন্ধ্যায় পথের ধারে ধোঁয়া তোলা পিঠার দোকান, বৃষ্টিতে চিনা বাদাম ভাজা। হাঁটার পথে চোখ কত কী দেখে, কত কী খুঁজে পেয়ে স্মৃতিমেদুর হয়! একা হাঁটা অথবা মিছিলে অনেক পায়ের সঙ্গে পা মেলানো যাই হোক না কেনো হাঁটতে বেরিয়ে পড়লেই কেমন পথের নেশা ধরে যায়। হাঁটতে হাঁতে কতদূর চলে যাওয়া যায়, স্বপ্ন দেখা যায়। নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়াটাও হয়ে যায়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সেই কবিতার মতো, যেতে যেতে যেতে এক নদীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় হয়তো। কতটা পথ পার হলে পথিক হওয়া যায় কে জানে?

এই শহরের রাস্তায় অনেক বছর আগে হাঁটা বাবা বের হতেন। বুড়ো মানুষ হাঁটতেন আর হাঁটতেন। তার পেছন পেছন অনেক মানুষ। তারাও হাঁটছে। মাঝে মাঝে তারা হাঁটা বাবার কাছে প্রশ্ন করে জেনে নিতেন জীবনের নানান সমস্যার সমাধান। জীবনের সমস্যার কি সমাধান মেলে? শুধু হাঁটাটাই হয়তো লাভ।
এবার প্রাণের বাংলার প্রচ্ছদ আয়োজনে রইলো ‘হাঁটতে হাঁটতে’।

প্রাক বিপ্লব প্যারিসে মানব মুক্তির বিষয়ে ভাবতে ভাবতে পায়চারী করতেন রুশো। তিনি বলতেন… একমাত্র হাঁটার সময়েই আমি গভীর ভাবে ভাবতে পারি।হাঁটা থামলে ভাবনাও থেমে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রণক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ মাঠে পাশাপাশি হাঁটতেন আইনস্টাইন আর তরুণ বিজ্ঞানী কার্ট গোডেল। তাদের আলোচনার বিষয় ছিলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আসল রূপ।
প্রতি বছর ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিক দিবসে রাস্তায় হাঁটতে নামেন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ আর তার বোন ডরোথি শুধু পোস্ট অফিস থেকে চিঠি সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন বারো মাইল পথ হেঁটে যেতেন। তখন বোধ হয় তাদের দু‘জনের মাথায় ডায়বেটিস রোগের দুশ্চিন্তা ছিলো না।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্যারিসের বিভিন্ন রাস্তায় কতবার হেঁটেছেন শার্ল বোদলেয়ার কতবার হেঁটেছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
শহরের দ্রুত, চৌমাথায় ভিড়ের ছন্দ, পথচারীর দুই পাশ দিয়ে বয়ে চলা জীবনের স্রোতকে দেখে তখনই কি শিউরে উঠেছিলেন জীবনের আরেক দিগবলয়ের সেই কবি?
আবার কখনো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন হাঁটা কি শুধু নিজের জন্য? শুধু প্রেসার, সুগার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার? প্যারিসের রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষ মিছিলের সঙ্গে হেঁটে পৌঁছেছিলো বাস্তিল দূর্গের সামনে। মাও জে দং বিপ্লব সংঘাটিত করতে লং মার্চ করেছিলেন।পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছিলেন ছয় হাজার মাইল দূর্গম পথ।
কী ভাবে হাঁটতে শিখেছিলো মানুষ? প্রায় গুহা মানব হয়ে কয়েক শতক অপেক্ষা করার পর মানুষেরই মাথার ভিতরে অদ্ভুত মিউটেশনে জেগে উঠেছিলো হোমোসেপিয়েন্স সত্তা। তারপর প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগে অন্য এক জীবনের খোঁজে মানুষ পায়ে হেঁটে বের হয়ে গিয়েছিলো। আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছিলো গোটা পৃথিবীতে। এই যাত্রা পথে পুরুষরা হেঁটেছে। নারীরাও হেঁটেছে। আধুনিক বিশ্বে তবুও নারীদের এখন পালন করতে হয় ‘ওয়াই লয়টার’। নারীবাদী আন্দোলনের মেনিফেস্টোতে পরিণত হয়েছে এই শ্লোগান। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অকারণে রাস্তায় হাঁটার অধিকার আছে।
মানুষ যেমন জেগে হাঁটে তেমনি একদল মানুষ আছে যারা ঘুমের মধ্যেও হাঁটে। নিউরোলজী বিদ্যা বলে, প্রচণ্ড মানসিক চাপ, উদ্বেগ আর মদ্যপান থেকে ঘুমের মধ্যে হাঁটার অসুখের সূচনা হতে পারে। আবারও কোনো কোনো চিকিৎসক বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে একজন মানুষ যদি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন না দেখে তাহলেও এই রোগ হতে পারে।
চেতনে বা অবচেতন হাঁটার অনেক উদ্দেশ্য। কেউ হাঁটছেন বিপ্লবের স্বপ্ন সফল করতে মিছিলে। কেউ আবার ডায়াবেটিস প্রতিরোধে। কেউ আবার ঘুমের মধ্যে অবচেতনে। শেষে গিয়ে সব হাঁটা হয়তো কোথাও মিলে যায়। মানুষ আসলে অতিক্রম করতে চায় দূরত্ব, অতিক্রম করতে চায় কঠিন পথকে।
শিশুবেলায় একা একাই হাঁটার গল্পটা শুরু হয়। তখন বাবা-মায়ের সাবধানী হাত থাকে ধরে ফেলার জন্য, পতন আটকানোর জন্য। কিন্তু বড়বেলায় তো সেই পথ চলা একারই দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। তবুও আমরা হাঁটি। একা হয়েও পৃথিবীর সব মানুষ একসঙ্গে হাঁটি। হাঁটতেই থাকি গন্তব্যের দিকে।

তথ্যসূত্রঃ নিউ সায়েন্স
ছবিঃ গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199