১৯৪০ সালে ‘রূপমঞ্চ’ ছিলো কলকাতার এক নামী জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন কালীশ মুখোপাধ্যায়। ‘রূপমঞ্চ’ অফিসে কালীশবাবুর ফটো তোলার স্টুডিও ছিলো। জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পাশাপাশি নবাগতদেরও তিনি আমন্ত্রণ জানাতেন তাঁর স্টুডিও-তে ফটো তোলার জন্য। ততদিনে মুক্তি পেয়েছে সুচিত্রা সেনের প্রথম ছবি – সাত নম্বর কয়েদী। এটাই সুচিত্রার মুক্তি পাওয়া প্রথম সিনেমা। কারণ, তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি ‘শেষ কোথায়’।
কালীশবাবু ছবি তোলার জন্য সুচিত্রাকেও আমন্ত্রণ জানালেন। কালীশবাবুর প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করলেন সুচিত্রা সেন। তিনি বললেন, ‘মাফ করবেন কালীশবাবু, আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ছবি তোলা।’
এহেন আচরণে হতবাক কালীশবাবু। সাধারণত অভিনেত্রী মাত্রই প্রচারের বাসনায় ব্যাপ্ত। আজকালকার অভিনেত্রীরাও যা ক্লাসের। সেখানে এক নবাগতা ‘না’ বলবেন তা আশা করেননি কালীশবাবু। আর একবার যাচাই করবার জন্য কালীশবাবু সবিনয়ে বললেন, ‘আমার ওখানে গিয়ে ছবি তুলতে তোমার আপত্তির কারণ কী? ওখানে আমার স্ত্রী আছেন, সম্পাদকীয় বিভাগের অন্য কর্মীরাও আছেন। তাছাড়া ইচ্ছে করলে তুমি তোমার স্বামীকেও সঙ্গে নিয়ে আসতে পারো।’
শ্রীমতী সেন বললেন, ‘এসব নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই না। আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়, সেটাই জানিয়ে দিলাম।’
এই কথা শুনে কালীশবাবু প্রায় রেগে আগুন। রূপমঞ্চে পরবর্তী সংখ্যায় সুচিত্রা সেন সম্পর্কিত যাবতীয় মনের বিষোদগার করলেন তিনি। তিনি লিখেছিলেন, ‘নটী নটীর মতোই থাকবে। তাকে আমরা এর চেয়ে বেশি মর্যাদা দিতে চাই না।’
এই মন্তব্যে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না সুচিত্রা। তিনি বুঝেছিলেন কথায় কথা বাড়ে তার চেয়ে নিশ্চুপই শ্রেয়।
এরপর প্রায় দশ বছর পরে- কালীশ মুখোপাধ্যায় সুচিত্রার ওই গুণের প্রশংসা না করে পারেননি।
তিনি বলেছিলে, ‘সুচিত্রা আমার সঙ্গে সেদিন যে ব্যবহারই করে থাকুক, ওর স্পিরিট দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম, ভেতরে একটু যদি কিছু থাকে তাহলে মেয়েটা অনেক দূর এগোবে। ওকে কেউ আটকাতে পারবে না।’
পরবর্তীকালে রমা সেন সুচিত্রা সেন হলেন ‘রূপমঞ্চ’র কভার গার্ল। অনেকগুলো সংখ্যাতেই তাঁকে প্রচ্ছদ করতে বাধ্য হন সম্পাদক।
‘আমিতো অভিনয় করিনি,
আমি অভিনয় করতে জানিনা।
আমি যে ভালবেসেছি।
বিশ্বাস করুন সত্যিই ভালবেসেছি।’
মনে পড়ে? দীপ জ্বেলে যাই ছবির শেষ দৃশ্যের রমাকে ? ভালবাসায় প্রত্যাখ্যাত উন্মাদ বসন্ত চৌধুরীকে ভালবাসার অভিনয় দিয়ে সুস্হ করে তোলার পর যখন বসন্ত চৌধুরী পাগলা গারদ থেকে তার পুরোনো প্রেমিকার কাছে ফিরে যায় আর নার্স সুচিত্রা সেন নিজেই উন্মাদিনী হয়ে পাগলা গারদে প্রবেশ করে।মনে পড়ে?
আচ্ছা সবাইকি সত্যিই পারে অভিনয় করতে? সবাইকি প্রেমের প্রত্যাখ্যানকে দুঃস্বপ্ন বলে ভাবতে পারে? হয়তো পারেনা।এ যেন সেই রূপকথার বাতিওয়ালা।যে রোজ সাঁঝে সবার ঘরের দীপ জ্বেলে যায় অথচ তার নিজের ঘরটা থাকে গাঢ় অন্ধকারে।যে ঘরে চাঁদের আলোটাও যেন পৌছুতে পারেনা।
সপ্তপদী’ ছবিতে সুচিত্রা হয়েছেন রিনা ব্রাউন। কোট-স্কার্ট, লং পনিটেল। কিংবা ফ্রিল দেয়া ছোট হাতার টপের সঙ্গে নি-লেন্থ ফ্লোরাল প্রিন্টেড স্কার্ট আর পয়েন্টেড হিলের জুতা পরে ড্রামের তালে তালে ব্যালেরিনা নাচ। মনে পড়ে? সেদিনের সাদা-কালো যুগের সেই সুচিত্রা সেনকে মুহূর্তের জন্যও কি অবজ্ঞা করার স্পর্ধা হবে কারোর? একেবারেই না। বরং ফরওয়ার্ড-ব্যাকওয়ার্ড করে বারবার তাকেই দেখতে ইচ্ছে হয়। এখনও!
হারানো সুর’-এর রমা যখন নিজের সিদ্ধান্তে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কিংবা ‘সপ্তপদী’র রিনা ব্রাউন যখন প্রেম এবং ধর্মবিশ্বাসের মধ্যিখানে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেয়, বাঙালি চিনে নিতে পারে সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত সঠিক রমণীটিকে। সেই আর্কিটাইপ্যাল নারী অমরত্বকে ছুঁয়ে নজরকাজল পরিয়ে দেন ইতিহাসের কপালে।
সত্যজিৎ রায় মহানায়ক উত্তম কুমারকে চিন্তা করেই যেমন ‘নায়ক’ ছবিটা বানিয়েছিলেন তেমনি সুচিত্রা সেনকেও একজন স্পেশাল নায়িকা হিসেবেই ভেবেছিলেন এবং তাঁকে মাথায় রেখেই প্রখ্যাত উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা উপন্যাস ‘দেবী চৌধুরানী’ অবলম্বনে একটি ছবি বানাতে চেয়েছিলেন যেখানে দেবী চৌধুরানীর ভুমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল সুচিত্রা সেনের।
তাহলে সত্যজিতের ছবিটা কেনো হলো না ?
১৯৬০ সালের কথা, সত্যজিৎ রায় সুচিত্রাকে তার ‘দেবী চৌধুরানী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, কিন্তু শিডিউল মিলছিলো না বলে সুচিত্রা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সুচিত্রা সবসময় নিজের শর্তে পথ চলতেন। সত্যজিৎ তাঁকে বলেছিলেন তাঁর ছবির শুটিং চলাকালে সুচিত্রা অন্য কোন ছবিতে কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু সুচিত্রা ঐ সময় আরও দু’টি ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিলেন।
তাই তিনি সত্যজিতের শর্ত মানতে পারেননি। তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। পরবর্তীতে তিনি বলেছিলেন, ‘যেসব পরিচালক আমাকে সুচিত্রা সেন বানিয়েছেন এখন যদি এই ছবির জন্য তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই। তাহলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।’
সুচিত্রার ব্যক্তিত্বের কাছে সবকিছুই আসলে ম্লান।
নকশাল হামলা থেকে 'মবিং'। এমনকি উত্তমকুমারের বিবাহ-প্রস্তাব। পরিস্থিতি যতই দূরূহ হোক, সুচিত্রা সেন সামলে নিতেন অবলীলায়।
সুচিত্রা সেনের শেষ ইচ্ছা 'আমায় যেন চিতায় দাহ করা হয়। চুল্লিতে আমি যাব না৷ আমি ধোঁয়া হয়ে আকাশে উড়ে যাব, ছাই হয়ে মাটিতে মিশে যাব,' এটাই শেষ ইচ্ছে ছিলো সুচিত্রা সেনের।
'আলো আমার আলো'র শ্যুটিংয়ের একটা ঘটনা। তখন নকশাল আমল৷ এনটি ওয়ান থিয়েটার্সে চলছিলো শ্যুট। নিজের মেক-আপ রুমে বসে তৈরি হচ্ছিলেন ম্যাডাম। হাতে 'আলো আমার আলো'র চিত্রনাট্য৷ ম্যাডাম কোনোদিনই সংলাপ মুখস্ত বলতেন না। চিত্রনাট্যটা পড়তেন ভালো করে৷ একেবারে স্বতঃস্ফূর্ত ছিলো তাঁর রিয়্যাকশন। সেটাই করছিলেন। এমন সময়, উনার ঘরে ঢুকে পড়ে তিনটি ছেলে। তাদের মধ্যে প্রধান ছিল রঞ্জিত নামে একটি ছেলে।
হঠাৎ চিৎকার- 'গেট আউট, গেট আউট!' হুড়মুড়িয়ে সুচিত্রা চিৎকার করে ছেলেগুলোকে বকছেন। ‘কোন সাহসে আপনারা আমার ঘরে পারমিশন ছাড়া ঢুকেছেন?’ ছেলেগুলোও তেমনি, কিছুতেই যাবে না৷ অবশেষে, ‘বেশ করেছি... দেখে নেব,’ বলে-টলে চলে গেল।
স্টুডিয়োর গেট বন্ধ করে দেওয়া হলো৷ স্টুডিয়ো মালিককে বলে লালবাজারে পুলিশে খবর দিয়ে ম্যাডাম নিজের প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিজেই করলেন। সেদিনের শ্যুটিং শেষ হলো। ততক্ষণে প্রায় ৫০০ ছেলে জড়ো হয়েছে গেটের বাইরে। গেটের ভেতরে সুচিত্রার গাড়ি দাঁড়িয়ে৷ ড্রাইভার ছিলো না। উনি গিয়ে হর্নটা চেপে ধরলেন৷ ঝাঁ-ঝাঁ হর্ন বাজছে। ড্রাইভার দৌড়ে এলো৷ সুচিত্রা সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসে। তারপর, সবাই বারণ করা সত্ত্বেও, গেট খোলার নির্দেশ দিলেন৷ ৫০০ ছেলে হুর্মুর করে পড়লো গাড়ির ওপর৷ উনি আস্তে আস্তে গাড়ির কাঁচ নামালেন। তারপর দরজা খুললেন৷ সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বললো, ‘আপনি আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছেন৷ আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’
সুচিত্রা আরও কঠিন হয়ে গেলেন। বললেন, ‘কে আপনারা? স্টুডিও আমার প্রফেশনাল জায়গা। আমার পারমিশন না নিয়ে ঢুকেছিলেন বলেই আমি আপনাদের বারণ করি। ক্ষমা তো আমি চাইব না৷ আপনারা বলুন কি চান?’ ওরা বললো, 'আমরা বিপ্লবী'। ম্যাডাম বললেন, ‘আপনাদের বিপ্লব কি সুচিত্রা সেন-কে নিয়ে? যদি আপনাদের কোনো সাহায্য লাগে আমি করতে পারি। কিন্ত্ত ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। আমি এখানে গাড়িতে বসে রইলাম। আপনাদের যা খুশি করতে পারেন।’
এর পর, ছেলেরা ধীরে ধীরে সেখান থেকে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ওদের নেতা বলে, ‘দিদি আমাদের ক্ষমা করবেন।’ মনে হলো যেন ৫০০টা ছেলে একেবারে কেঁচো হয়ে গেলো।
এমনই সাহস আর ব্যক্তিত্ব ছিলো সুচিত্রা সেনের। নিজে ঝামেলার মুখোমুখি হতেন। আর কারও, এমনকি উত্তমকুমারেরও এরকম পাবলিক হ্যান্ডেল করবার সাহস আর ক্ষমতা ছিল না।
বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রির কাঁচা মেঠোপথটিকে যে রূপ দিতে চেয়েছিলেন একদা কাননদেবী, তাই বাঁধানো রাজপথ হয়ে ওঠে সুচিত্রা সেনের পেশাদারিত্ব ও চারিত্রিক দৃঢ়তায়।
ছবির ইতিহাস থেকে সামাজিক পাঁচালি, প্রেম থেকে স্বপ্ন, বাসনা থেকে বাসনাপূরণে তাই সুচিত্রা সেন হয়ে ওঠেন প্রায় অলৌকিক এক আচ্ছন্নতা। নশ্বর সময় ফুরিয়ে যায়। তবু তার চোখের দিকে তাকিয়ে আজো বাঙালি বলতে ভালোবাসে- তুমি না হয় রহিতে কাছে, আরো কিছুক্ষণ না হয় রহিতে কাছে।
পৃথিবীটা যদি স্বপ্নের দেশ হতো, তবে কেমন হতো জানা না যাক। তবে সে স্বপ্নের দেশের রাজরানী যে কে হতেন তা বাঙালিমাত্রই জানে। তার পাখির নীড়ের মতো চোখের আশ্রয় আছে বলেই তো বাঙালির বিশ্বাস নীড় ছোট হলেও ক্ষতি নেই, কল্পনার আকাশ চিরকালই বড়।
সে সাদা-কালো আকাশে রঙধনুর সাতরঙ ছড়িয়ে তিনি যখন বলেন ‘জান না কি তুমি কে, আমি কার’- বাঙালি তা জানার চেষ্টাও করে না। বাঙালি জীবনে এক সমাধানহীন অপার রহস্য হয়ে থেকে যান সুচিত্রা সেন।
মহাকাল তাকে দিয়েছে বাঙালির মহানায়িকার আসন। তবু সে আসনও যেন তাকে ধরতে পারে না। আসনের পরিসীমা পেরিয়ে সুচিত্রা সেন হয়ে ওঠেন এক রূপকথা। আসলে সেই সাদা-কালো দিনে তিনিই তো ছিলেন বাঙালি সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার গোপন অহংকার।
বাঁকা ঠোঁটের হাসিতে যে কত তরুণের হৃদস্পন্দন বাড়িয়েছেন সুচিত্রা, তা এতো দিন পরও বাঙ্গালির মুখে মুখে ফেরে। সুচিত্রা ঘাড় ঘুরে তাকালে সময়ও কি একটু করে থমকে যেতো না? যেতো। পর্দায় সুচিত্রার চোখ টলমল করে উঠলে জল গড়াতো পর্দার এপারে। তার মুগ্ধতাকে আকণ্ঠ গ্রহণ করেছে দর্শকসমাজ। সুচিত্রা এক চিরসবুজ প্রেয়সী, যার বয়স ঐ পর্দার ছবিতেই আজো স্থির হয়ে আছেন।
পঞ্চাশের দশকের মানবী হয়েও মনে-প্রাণে-বিশ্বাসে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কালোত্তীর্ণ। যা সম্ভব হয়েছিল একান্তই তার নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, সাধনা, চেষ্টা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে। তাই তো সুচিত্রা সেন আজ আর কোনো নাম নয়। ব্র্যান্ড। আইকন। যে আইকনকে আবিষ্কারের পর্ব চলছে আজও। সুচিত্রা সেনের গগনচুম্বী জনপ্রিয়তার রহস্য তার উত্তরপুরুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে এখনও। তার চাহনির মাদকতা, মরাল গ্রীবার উদ্ধত ভঙ্গি, যা কিছু অপছন্দের তাকে হেলায় প্রত্যাখ্যান। সর্বোপরি পুরুষশাসিত সমাজে, পুরুষ নির্দেশিত বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনিই তার শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন। কিভাবে? কী করে? এই স্পর্ধা, ঔদ্ধত্য, অনমনীয় মনোভাবের উৎসমুখের সন্ধান মেলেনি আজও। তাই, অনুসন্ধান চলবেই। কেন না, ৩৬ বছরের অন্তরালের অবগুণ্ঠন সরিয়ে মহানায়িকাকে চিনতে-জানতে-দেখতে-বুঝতে যে আজও উদগ্রীব দুই বাংলার সুন্দরের পূজারীরা!
সুচিত্রা সেন কোন নাম নয়, এক দীর্ঘ যুগের নাম। যে যুগের শুরু আছে কিন্তু শেষ কোথায় কেউ জানে না। তাইতো তাঁর চোখে জল এলে বাঙালির মনে শ্রাবণ নামে। হাসলে মন চায় এই পথের যেন শেষ না হয়।
সপ্তপদী চলচ্চিত্রের সংলাপে তিনি বলেছিলেন, ‘ও আমাকে টাচ করবে না!’ সত্যিই তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান বলে শেষ করা যাবে না। ৩৫বছর ধরে পর্দার আড়ালে রইলেও যেটুকু সময় ছিলেন তাই অবিস্মরণীয় করে রাখবে তাঁর নাম – সুচিত্রা সেন।
মোট ৬১ সিনেমায় অভিনয় করলেও সুচিত্রা সেন বেশি বিখ্যাত হয়েছেন উত্তমকুমারের সঙ্গে জুটিবদ্ধ সিনেমাগুলোতে। ২৫ বছর সিনেমাতে অভিনয়ের পর ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যান তিনি। এরপর আর তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। এ সময় তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লি যেতে আপত্তি জানানোর কারণে, তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়া যেকোনো ভারতীয়র জন্য আজীবনের স্বপ্ন। কেবল সশরীরে যাবেন না বলে সুচিত্রা সেন পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেটা সবাই পারেন না। পুরস্কার প্রত্যাখ্যান দূরের কথা, এলেবেলে একটা পুরস্কার জেতার জন্য কতজনের কত রকম তৎপরতা চলে। আর একটা না হলে, অন্য আরেকটা পুরস্কার তাঁরা ঠিকই জিতেই ফেলেন। কারণ এখন একজন শুধু সিনেমার নায়িকা হয়েই যথেষ্ট নন। টেলিভিশনেরও নায়িকা। আবার উপস্থাপনা, গান করা, নৃত্য পরিবেশন, কবিতার বই বের করা সবই করেন। নতুন আগতদের জায়গা করে দিতে চান না। সবকিছু তাঁরা হাতের মুঠোয় রাখতে চান। অভিনেত্রী, উপস্থাপিকা, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, আবৃত্তিকারসহ সর্বগুণে গুণান্বিতা তাঁরা!
সুচিত্রা সেন সিনেমা ছাড়ার পর প্রায় ৩৫ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন। এমনকি মৃত্যুকালে কফিনেও ছবি তোলার সুযোগ পাননি কেউ। এই যে রহস্যময়তা, এই যে আড়াল—এটাই তাঁকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে করে তুলেছে দুর্লভ-আকর্ষণীয়। সুচিত্রার ছিলো সুকঠিন ব্যক্তিত্ব। সবার সঙ্গে তিনি মিশতেন না। সত্যজিৎ রায়, গুলজার, রাজকাপুরের মতো মানুষের ছবিও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে চলেছে নানা জল্পনা-কল্পনা, সুচিত্রা সেসব নিয়ে কোনো উত্তর দেননি।
পুরোনো দিনের এক সিনেমা তারকার সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম, তিনি কখনো স্টেশনে তেল নেওয়ার সময় গাড়ি থেকে বের হতেন না। কারণ ওখানে সবাই তাহলে তাঁকে দেখে ফেলবে। উনি বলতেন, ‘সবাই যদি আমাকে বিনা খরচেই দেখে ফেলে, তাহলে আর টাকা খরচ করে টিকিট কেটে হলে কেন দেখতে যাবে।’ হ্যাঁ, এটাকে কারও কাছে স্ট্যান্টবাজি মনে হতে পারে। কিন্তু তারকারা যত তাঁদের চারপাশে রহস্যের মেদুরতা সৃষ্টি করে রাখবেন, ততই তাঁদের প্রতি ভক্তকুলের আকর্ষণ বাড়ে। সুচিত্রা সেন সেটা পেরেছেন। উনি লোভকে জয় করতে পেরেছেন। উনি জানতেন কোথায় থামতে হয়। চাইলেও কেউ সুচিত্রা সেন হতে পারে না।
শুভ জন্মদিন মহানায়িকা-কোনো যাদুকরী তুলির স্পর্শে পৃথিবীর কোনো চিত্রকরের পক্ষেও ওর মতো নিখুঁত কিংবা ওর মতো মোহময় মুখের আঙ্গিক উপহার দেয়া আদৌ সম্ভব নয়।
'দেয়ালে টাঙানো হাসিমুখে চেয়ে আছে সুচিত্রা সেন
তারি পাশে আমার ছবি যেন নির্বাক প্রেম'
বিশ্ব-চলচ্চিত্রের অন্যত্যম কিংবদন্তীর বিদায়
16 Sept 2022
1255 বার পড়া হয়েছে
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
7 Sept 2022
1260 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন চে গুয়েভারা
14 Jun 2022
1350 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সত্যজিৎ রায়
2 May 2022
1210 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন আজম খান
28 Feb 2022
1155 বার পড়া হয়েছে
একজন সঞ্জীব চৌধুরী...
25 Dec 2021
2530 বার পড়া হয়েছে
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ও বেপথুর ষড়যন্ত্র
15 Aug 2021
1020 বার পড়া হয়েছে
ছুটি, প্রভু, ছুটি
22 Apr 2021
2185 বার পড়া হয়েছে
আপনাকে মনে পড়বে কবরী
17 Apr 2021
785 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন শচীন দেব বর্মন
1 Oct 2020
1305 বার পড়া হয়েছে
বিদায় সাইদা খানম
18 Aug 2020
1065 বার পড়া হয়েছে
আলী ভাই চলে যাননি...
13 Aug 2020
2070 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন ফিরোজা বেগম
28 Jul 2020
600 বার পড়া হয়েছে
ভালো থাকুন ফরীদি ভাই ...
29 May 2020
1855 বার পড়া হয়েছে
এখন সহস্র নক্ষত্রের ভীড়ে আপনিও একজন...
30 Apr 2020
2100 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন ঋত্বিক ঘটক
4 Nov 2019
975 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন জহির রায়হান
19 Aug 2019
1585 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সিনেমাওয়ালা
14 May 2019
1030 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সুচিত্রা সেন
6 Apr 2019
2220 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সেলিনা পারভীন
31 Mar 2019
2205 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন বিসমিল্লাহ খাঁ
21 Mar 2019
770 বার পড়া হয়েছে
চলে গেলেন ফিরোজ মামা
18 Mar 2019
845 বার পড়া হয়েছে
সোনার বাংলা গেয়ে বিজয় দেখা হয়নি তাঁর
16 Feb 2019
1220 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
12 Sept 2018
1275 বার পড়া হয়েছে
স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।
Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]
Phone: +8801818189677, +8801717256199