''তোর কপালে কষ্ট নির্ঘাত!পরের দুঃখে যারা কাঁদে,
যাদের কষ্ট হয় তাদের কষ্ট কোনোদিন
ঘোচেনা''
-ঋত্বিক কুমার ঘটক
ঋত্বিক বাঙলার একটি নদীর নাম। বাঙলার অজস্র নদীর ভিড়ে ঋত্বিক অবিভক্ত গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার সম্মিলিত রূপ।বিশ্বের আর কোন ফিল্মনির্মাতাকে এতো কাটখড় পোড়াতে হয়নি; আর্থিক টানাপোড়ানে সেলুলয়েড ফিতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়নি। যতটা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন আমাদের ঋত্বিক কুমার ঘটক।
একরাতে ঋত্বিক কুমার ঘটকের মাথায় দারুণ এক চিত্রনাট্য আসলো। তার মধ্যে তীব্র অস্থিরতা এবং ছটপটানি শুরু হলো। চিত্রনাট্যটিতে তাকে লিখতেই হবে। পুরো বাসা খুঁজে বের করলেন একটু দোয়াতের কালি। কোথাও লেখার কিছু পাচ্ছেন না; কাগজ কেনারও টাকা নেই। কিন্তু সৃষ্টিশীল মানুষ যে তার সৃষ্টিশীলতার প্রসববেদনার কষ্ট আর আনন্দে অস্থির।
পুরো ঘর খুঁজে ছোটবোনের একটা শাড়ি পেলেন। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। রাতভর সে শাড়িতে লিখলেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবির চিত্রনাট্য।
সকালে বোন ভবি পুজো দেয়ার জন্য শাড়ি খুঁজছেন। ঋত্বিকের কাজ দেখে বললেন- ভবা তুই একি করলি?
ঋত্বিক ঘটক বললেন- তোর শাড়ি শুধুই শাড়ি থাকতো; দেখিস তোর শাড়ি একদিন ইতিহাস হবে।
ঝড়ের বেগে ঋত্বিক পঞ্চাশের দশকে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ঢুকে পড়ে সবকিছু ওলট পালট করে দেওয়ার স্বপ্নে আমৃত্যু ডানা ঝাপটে গেছেন। মানুষের প্রতি, জীবনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে, মানুষের আরো কাছাকাছি শিল্পকে পৌছে দেওয়ার ব্রত নিয়ে রঙ্গমঞ্চের টিনের তলোয়ার ছুড়ে ফেলে ক্যামেরা হাতে নেমে পড়েছিলেন তিনি। দেশভাগের ঝড়ে নীড়হারা এই নদীর আর্তনাদের স্বর অনুরণিত হয়েছে তার সমস্ত সৃষ্টি জুড়ে। দুই বাংলার মাঝে কাঁটাতারের বেড়ায় বিদ্ধ হয়েছে এই নদীর বুক।
সালটা ১৯৭০। সারাদিন শুটিং শেষ করে বাড়ি ফিরেছেন উত্তম কুমার। পরদিনও শুটিং - তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ার প্ল্যান। শুয়ে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছেন, হঠাৎ সদর দরজায় কড়া নাড়া। ওপরের বারান্দা থেকে দেখেন এক দীর্ঘদেহী মানুষ দরজায়। “একটু নামবেন অরুনবাবু, কথা ছিলো।
অরুন নামটা শুনে তাড়াতাড়ি নেমে গেলেন মহানায়ক। 'একটা স্ক্রিপ্ট শোনাবো আপনাকে - একটু আসতে হবে'। দরজায় যিনি ছিলেন তার অনুরোধ আদেশ সমান - ফেরানো যায় না। ওনার সঙ্গে উত্তম এলেন বাড়ির কাছে মিন্টো পার্কে।
পার্কের বেঞ্চে বসে এক তাড়া কাগজ বের করে চিত্রনাট্য পড়তে শুরু করলেন মানুষটা। প্রায় অভিনয় করার মতো করে। ভোজবাজির মতো কোথা থেকে হাজির হয়ে গেলো এক বোতল সস্তা মদ। টান টান স্ক্রিপ্ট - উত্তম মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন আর মানুষটা মদ গিলে চলেছেন অবিরাম কিন্তু পড়ে চলেছেন গড়গড় করে। মুখ দিয়ে ভক ভক করে বেরোচ্ছে মদের গন্ধ। কিন্তু তাতে স্ক্রিপ্ট পড়া আটকাচ্ছে না - আর উত্তম পুরো মজে আছেন সেই অসামান্য চিত্রনাট্যে। ঘন্টা দেড়েক পর আর পারলেন না মানুষটা - কাগজের তাড়াটা পাঞ্জাবির পকেটে পুরে এলিয়ে পড়লেন বেঞ্চে।
উত্তমের বললেন 'দাদা, আমার কাঁধে ভর দিন আর চলুন আজ রাত্তিরটা আমার বাড়িতেই থেকে যাবেন' বলে প্রায় বয়ে নিয়ে এলেন মানুষটাকে মিন্টো পার্ক থেকে ময়রা স্ট্রিট। বাড়িতে সোফায় শুইয়ে দিলেন উত্তম। শোয়াতে গিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে কাগজগুলো বেরিয়ে এলো। স্তম্ভিত হয়ে উত্তম দেখলেন সেগুলো এক দিস্তে সাদা কাগজ - কলমের কোনো আঁচড়ই নেই! এতক্ষন মানুষটা যে স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাচ্ছিলেন সেটা পুরোটাই extempore!এমনি ছিল সেই মানুষটার অগ্নিময় প্রতিভা।
মানুষটির নাম ঋত্বিক ঘটক।
মদ খেয়ে ট্যাক্সি ভাড়া না থাকায় ড্রাইভারকে বললেন ১/১ বিসপ লেফ্রয় রোডে চলে যাও । সেখানে গিয়ে যে লোকটা দরজা খুলবে তার কাছে বলবে ঋত্বিক ঘটকের কাছে টাকা ছিল না , সে ট্যাক্সি করে ফিরেছে বাড়ি । ও টাকা দিয়ে দিবে ।
সেই দীর্ঘকায় লোকটি যা শোনা যায় , সেবার , বারবার তার ভাড়া মিটিয়েছেন । ঋত্বিক তাকে উত্যক্ত করতেন , কিন্তু সেই ভদ্রলোক মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতেন , ভারতবর্ষে ঠিকঠাক ক্যামেরা বসাতে জানে সেই মাতাল লোকটিই । অবশ্য যোগ করতেন , আমিও কিছুটা জানি। লোকটি আর কেউ নন! আমাদের সত্যজিৎ রায়।
তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করার সময় ঋত্বিক প্লেনে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন সঙ্গে ছিলেন সত্যজিৎ । যখন প্লেন পদ্মার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ঋত্বিক ,আর বলছিলেন ''সে বাংলাদেশ আপনারা দেখেন নি , সেই প্রাচুর্যময় জীবন , সেই সুন্দরের আহ্বান - আমি যেন সেই জীবনের পথে চলছি ।''
দেশভাগের বেদনা কখনো ভুলতে পারেননি তিনি। তার সৃষ্টিকর্মে ফিরে ফিরে এসেছে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাস্তুহারা মানুষের অসহনীয় কষ্টের দৃশ্য। দুই বাংলার সাধারণ বাঙালির জীবন সংগ্রাম তিনি অমর করেছেন সেলুলয়েডে।
আকাশকে যারা একটু অপটু হাতে মহাকাশ করে তুলতে চাইছে তদের কাছে ধরা দিয়েছে একটি নাম, ঋত্বিক ঘটক।
শুভ জন্মদিন আজন্ম মাতাল,বোহেমিয়ান আমার ঋত্বিক ঘটক।
ছবি: গুগল
বিশ্ব-চলচ্চিত্রের অন্যত্যম কিংবদন্তীর বিদায়
16 Sept 2022
1255 বার পড়া হয়েছে
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
7 Sept 2022
1260 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন চে গুয়েভারা
14 Jun 2022
1350 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সত্যজিৎ রায়
2 May 2022
1210 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন আজম খান
28 Feb 2022
1155 বার পড়া হয়েছে
একজন সঞ্জীব চৌধুরী...
25 Dec 2021
2530 বার পড়া হয়েছে
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ও বেপথুর ষড়যন্ত্র
15 Aug 2021
1020 বার পড়া হয়েছে
ছুটি, প্রভু, ছুটি
22 Apr 2021
2185 বার পড়া হয়েছে
আপনাকে মনে পড়বে কবরী
17 Apr 2021
785 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন শচীন দেব বর্মন
1 Oct 2020
1305 বার পড়া হয়েছে
বিদায় সাইদা খানম
18 Aug 2020
1065 বার পড়া হয়েছে
আলী ভাই চলে যাননি...
13 Aug 2020
2070 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন ফিরোজা বেগম
28 Jul 2020
600 বার পড়া হয়েছে
ভালো থাকুন ফরীদি ভাই ...
29 May 2020
1855 বার পড়া হয়েছে
এখন সহস্র নক্ষত্রের ভীড়ে আপনিও একজন...
30 Apr 2020
2100 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন ঋত্বিক ঘটক
4 Nov 2019
975 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন জহির রায়হান
19 Aug 2019
1585 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সিনেমাওয়ালা
14 May 2019
1030 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সুচিত্রা সেন
6 Apr 2019
2220 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সেলিনা পারভীন
31 Mar 2019
2205 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন বিসমিল্লাহ খাঁ
21 Mar 2019
770 বার পড়া হয়েছে
চলে গেলেন ফিরোজ মামা
18 Mar 2019
845 বার পড়া হয়েছে
সোনার বাংলা গেয়ে বিজয় দেখা হয়নি তাঁর
16 Feb 2019
1220 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
12 Sept 2018
1275 বার পড়া হয়েছে
স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।
Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]
Phone: +8801818189677, +8801717256199