সৃজনশীল বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা, সৃষ্টিশীল লেখক জহির রায়হান। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট (মতান্তরে ৫ আগস্ট) ফেনী জেলার মজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে নিখোঁজ ভাই সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে তিনিও আর ফিরে আসেননি। এভাবেই বাংলাদেশ হারায় এক প্রতিভাবান চলচ্চিত্র পরিচালক ও গুণী সাহিত্যিককে, শহীদ হন জহির রায়হান। জহির রায়হানের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। অন্যায়, অমানবিকতা, দুঃশাসন, সামাজিক আধিপত্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী চেতনার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তাঁর কর্মক্ষেত্রের পরতে পরতে। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ছাত্র অবস্থা থেকেই ছিলেন অনুরাগী। কারো অজানা নয় যে চলচ্চিত্রে জহির রায়হানের সৃষ্টি ‘জীবন থেকে নেয়া’, 'কখনো আসেনি', 'কাঁচের দেয়াল', 'বাহানা', 'বেহুলা' যোগ করেছিলো নতুন মাত্রা। আবার একজন খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। 'আরেক ফাগুন', 'বরফ গলা নদী', 'হাজার বছর ধরে' প্রভৃতি তাঁর অনন্য সৃষ্টি। এসব উপন্যাসে আবহমান বাংলার দুর্ভোগ আর সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার চিত্র পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে তাঁর ব্যতিক্রমী শৈলীতে। তিনি ছাত্রজীবনে সাহিত্য মাসিক 'প্রবাহ' এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক 'এক্সপ্রেস' পত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গেও ছিলেন যুক্ত।
জহির রায়হান ছিলেন এদেশের প্রগতিশীল চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা। তিনি ছিলেন একাধারে কাহিনীকার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, পরিচালক, চিত্রগ্রাহক এবং প্রযোজক। চলচ্চিত্রের আঙ্গিক ও গঠনশৈলীর নানান দিক নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এদেশে তিনিই প্রথম ইংরেজি ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মাণ করেন। তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম রঙীন ছবি ‘সঙ্গম’ তৈরি করেন জহির রায়হান, তার হাতেই প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাহানা’র জন্ম। এদেশে সাধারণ মানুষের কাছে তাই জহির রায়হান কথাসাহিত্যিক অপেক্ষা চলচ্চিত্রকার হিসেবেই বেশি পরিচিত। চলচ্চিত্র প্রতিভার পরবর্তী আশ্রয়স্থল হলেও তার আবির্ভাব ঘটেছিল কথাসাহিত্যে। সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক, রাজনৈতিক কর্মী, চিত্রপরিচালক- নানা পরিচয়ে তার কর্মক্ষেত্রের পরিধি স্পষ্ট। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণের দ্বারা এদেশে সৎ শিল্পীর ভূমিকা কীরকম হবে- জীবন দিয়ে তিনি তার উদাহরণ হয়ে আছেন।
তাঁর প্রকৃত নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাক নাম জাফর। তার পিতামহ মোহাম্মদ এমদাদউল্লাহ নোয়াখালিতে আইন ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। কিন্ত এই ব্যবসায় সর্বদা সত্যাশ্রয়ী থাকা সম্ভব হয় না, এই বিবেচনায় অত্যন্ত ধার্মিক এমদাদউল্লাহ আইন পেশা ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুরে ব্যবসা করতে শুরু করেন। জহির রায়হানের দাদা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। আরবীতে তিনি উচ্চ ডিগ্রিধারী ছিলেন। পরে তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ইংরেজি শিক্ষার প্রতি তার অনুরাগ ছিলো সহজাত। হাবিবুল্লাহর আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রভাবে পরবর্তীকালে তার পরিবারে সাহিত্য-সংস্কৃতির মুক্ত ও অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠে। ’৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকা চলে আসেন এবং ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার ফেকাহ্ ও আরবী দর্শনের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। চাকুরী জীবনের শেষদিন পর্যন- তিনি এই পদেই কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে ৬৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
জহির রায়হানের মাতা সৈয়দা সুফিয়া খাতুনের জন্ম এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে। তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলেন। তার পিতৃকুল ছিল তালুকদার। রক্ষণশীল হলেও প্রভাবশালী এই পরিবারে তৎকালীন জাতীয়তাবাদী এবং স্বদেশী আন্দোলনের স্পর্শ যে লাগেনি তা নয়। শোনা যায়, মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনকালে সুফিয়া খাতুন নিজ হাতে সূতো কেটে কাপড় বুনে পরতেন। তখন তিনি তেরো-চৌদ্দ বছরের কিশোরী। পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যার জননী স্নেহময়ী সুফিয়া খাতুন সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত সর্তক ও যত্নশীল। তার প্রথম সন্তান শহীদুল্লাহ কায়সার (১৯২৭-১৯৭১), দ্বিতীয় নাফিসা কবির, তৃতীয় জহির রায়হান, চতুর্থ জাকারিয়া হাবিব, পঞ্চম সুরাইয়া বেগম, ষষ্ঠ শাহেনশা বেগম, সপ্তম ওবায়দুল্লাহ, সর্বকনিষ্ঠ সাইফুল্লাহ।
জহির রায়হানের স্কুল জীবনের অধিকাংশ অধিকাংশই কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা মডেল স্কুলে ভর্তি হন। পিতা হাবিবুল্লাহ তখন কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। মডেল স্কুলে জহির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তাকে মিত্র ইনস্টিটিউশনে (মেইন) ভর্তি করা হয়। এখানে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলে তিনি আলীয়া মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্শিয়ান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জহির তার পিতার সঙ্গে মজুপুর গ্রামে চলে আসেন এবং সেখানে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া করেন। স্থানীয় আমিরাবাদ হাই স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৩ সালে জহির রায়হান ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে বাবার ইচ্ছানুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। এক বছর পর তিনি অর্থনীতি ছেড়ে বাংলা বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যথারীতি এমএ ক্লাসে ভর্তি হন।
অল্প বয়সেই জহির রায়হান কম্যুনিস্ট রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। তখন কম্যুনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিলো। তিনি দলের হয়ে কুরিয়ারের দায়িত্ব পালন করতেন অর্থাৎ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চিঠি ও সংবাদ পৌঁছে দিতেন। গোপন পার্টিতে তাঁর নাম রাখা হয় ‘রায়হান’। তাঁর আসল নাম ছিলো জহিরুল্লাহ। পরবর্তী সময়ে তিনি জহির রায়হান নামে পরিচিত হন। জহির রায়হান ছিলেন ভাষা সৈনিক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় গাজিউল হকের সভাপতিত্বে যে সভা হয়েছিলো তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গেরই পক্ষে ছিলেন। প্রথম যে দশজন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমেছিলেন, তিনি সেই দশজনের একজন ছিলেন। অন্যান্যদের সঙ্গে তাঁকে মিছিল থেকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়।ভাষা আন্দোলনের চেতনা জহির রায়হানকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। মাত্র এক দশকের মধ্যে অর্থাৎ ষাটের মধ্যেই তিনি তার সৃষ্টিকর্ম আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই সৃজনশীল ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা থেকে। তাঁর অমর সৃষ্টি 'জীবন থেকে নেয়া' চলচ্চিত্র। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ১৯৭০ সালের প্রথমদিকে ছবিটি নির্মিত হয়েছিলো। কয়েকদিন প্রেক্ষাগ্রহে ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার ছবিটি প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়। অসামান্য, কালজয়ী ছবি, যেখানে ভাষাভিত্তিক আন্দোলন থেকে দেশভিত্তিক আন্দোলনের রূপক ইতিহাস উঠে এসেছে। এ ছবিতে রওশন জামিলকে দেখিয়েছেন আইয়ুব খানের আদলে আর আনোয়ার হোসেনকে দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদলে। এ ছবিতে খুব কৌশলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার রূপায়ণ ঘটিয়েছেন। এটি যে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ছবি, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই এমন একটি ছবি নির্মাণ করে জহির রায়হান বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হওয়ার জ্বলন্ত প্রেরণা দিয়েছিলেন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানটি রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গান এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহ কবাট' গানটি সংযোজন ছিলো সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যময়।
জহির রায়হানের লেখালেখির অভ্যাস গড়ে উঠে স্কুল জীবন থেকে। তখন তিনি কবিতা লিখতেন। লিখতেন, ছিঁড়তেন আর পড়ে শোনাতেন নিকট আত্মীয়-স্বজনকে। তারাও তাঁকে লেখার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। প্রথম দিকে পরিবারের সদস্যরাই ছিলেন তাঁর রচনার একনিষ্ঠ শ্রোতা। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা একটি কবিতা। কবিতাটির নাম 'ওদের জানিয়ে দাও'। কবিতাটি ১৯৪৯ সালে 'নতুন সাহিত্য কুটির' থেকে প্রকাশিত 'চতুষ্কোণ' পত্রিকায় ছাপা হয়। তাঁর প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প 'হারানো বলয়'।এটি ১৯৫১ সালে প্রকাশিত হয় ড. আলিম চৌধুরী এবং এম এ কবীর সম্পাদিত 'যাত্রিক' পত্রিকায়। তখন তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'শেষ বিকেলের মেয়ে' সাপ্তাহিক 'চিত্রালী' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরপর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৩৬২ বঙ্গাব্দে তাঁর প্রথম গল্পসংগ্রহ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়।
'হাজার বছর ধরে' উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। এটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের দুঃখ-দারিদ্র, সংস্কার-সংকীর্ণতা প্রেম-এই উপন্যাসের মূল বিষয়। ১৯৬৮ সালে 'আরেক ফাল্গুন' উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে রচিত। '৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারীর আন্দোলনে জহির রায়হান কারারুদ্ধ ছিলেন। তাঁর সাহিত্যে ভাষা-আন্দোলন সবচেয়ে বেশি স্থান পেয়েছে । 'বরফ গলা নদী' উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। এটি প্রথমে 'উত্তরণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটি শহুরে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনী। 'আর কতদিন' প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। এটিও 'সচিত্র সন্ধানী' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটি একটি প্রতীকধর্মী রচনা। এগুলি ছাড়াও তাঁর আরও অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাঁর লিখিত অন্যান্য বইগুলি হচ্ছে শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী এবং আর কত দিন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা দ্য উইকলি এক্সপ্রেস প্রকাশের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। এ ছাড়া তিনি কতিপয় সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য তিনি আদমজী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তাঁকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়।
তাঁর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি 'খাপছাড়া' পত্রিকায়। তিনি তাঁর বড় বোনের স্বামী এমএ কবীর ও ড. আলিম চৌধুরী সম্পাদিত 'যাত্রিক' পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে 'প্রবাহ' নামক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। 'এক্সপ্রেস' পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া জহির রায়হান 'সমকাল', 'চিত্রালী', 'সচিত্র সন্ধানী', 'সিনেমা', 'যুগের দাবী' প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি 'চিত্রালী'-তে 'প্রবেশ নিষেধ' শিরোনামে কিছুদিন একটি ধারাবাহিক ফিচার লিখেছিলেন।
জহির ১৯৫২ সালে ফটোগ্রাফি শিখতে কলকাতা যান। এবং প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৬১ সালে তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনও আসেনি’ মুক্তি পায়। তারপর একের পর এক তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে থাকে। এসব চলচ্চিত্র হলো: কাজল, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা, জীবন থেকে নেয়া, আনোয়ারা, সঙ্গম এবং বাহানা। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে প্রতীকী কাহিনীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে চিত্রিত করা হয় এবং জনগণকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়। জহির রায়হান ‘এ-খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ গানটি চলচ্চিত্রে সংযোজন করে পরিচালক হিসেবে তাঁর সুনিপুণ পরিচালনার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি যেভাবে বাঙালির শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলনে উৎসাহিত করেছিলেন তার তুলনা
জহির রায়হানের উর্দু ছবি সঙ্গম ছিলো পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গীন ছবি। তাঁর অপর উর্দু ছবি বাহানা ছিলো সিনেমাস্কোপ। তিনি কাঁচের দেয়াল ছবির জন্য অনেক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন এবং ১৯৬৮ সালে অপর চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচন্দাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তাঁর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।
সাহিত্য কর্ম এবং শিল্পকৃতি উভয় ক্ষেত্রেই জহির রায়হানের প্রতিভার আশ্চর্য বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। কথাসাহিত্যে তার অবদান যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করতে হয়, তেমনি চলচ্চিত্রে তার দান মেনে নিতে হয় বিস্ময়ের সঙ্গে। এই উভয় মাধ্যমেই তিনি মানুষের কথা বলেছেন। পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সঙ্গে তাকে আপস করতে হয়েছিলো বলে, হয়তো তাকে আভিধানিক অর্থে বামপন্থী বা কমিউনিস্ট বলা যাবে না। কিন্তু বামপন্থী রাজনীতি বা কমিউনিজম যে প্রধান উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ এবং মুক্তি, জহির রায়হানের সাহিত্য ও শিল্পের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো তা-ই। তার সমসাময়িক লেখক শিল্পীদের ভেতর তিনি ছিলেন সবচেয়ে আধুনিক।
(তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, ইন্টারনেট)
ছবি: গুগল
বিশ্ব-চলচ্চিত্রের অন্যত্যম কিংবদন্তীর বিদায়
16 Sept 2022
1260 বার পড়া হয়েছে
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় : জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
7 Sept 2022
1270 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন চে গুয়েভারা
14 Jun 2022
1380 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সত্যজিৎ রায়
2 May 2022
1220 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন আজম খান
28 Feb 2022
1170 বার পড়া হয়েছে
একজন সঞ্জীব চৌধুরী...
25 Dec 2021
2580 বার পড়া হয়েছে
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ও বেপথুর ষড়যন্ত্র
15 Aug 2021
1035 বার পড়া হয়েছে
ছুটি, প্রভু, ছুটি
22 Apr 2021
2200 বার পড়া হয়েছে
আপনাকে মনে পড়বে কবরী
17 Apr 2021
790 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন শচীন দেব বর্মন
1 Oct 2020
1335 বার পড়া হয়েছে
বিদায় সাইদা খানম
18 Aug 2020
1075 বার পড়া হয়েছে
আলী ভাই চলে যাননি...
13 Aug 2020
2085 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন ফিরোজা বেগম
28 Jul 2020
615 বার পড়া হয়েছে
ভালো থাকুন ফরীদি ভাই ...
29 May 2020
1870 বার পড়া হয়েছে
এখন সহস্র নক্ষত্রের ভীড়ে আপনিও একজন...
30 Apr 2020
2125 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন ঋত্বিক ঘটক
4 Nov 2019
980 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন জহির রায়হান
19 Aug 2019
1625 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সিনেমাওয়ালা
14 May 2019
1030 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সুচিত্রা সেন
6 Apr 2019
2245 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন সেলিনা পারভীন
31 Mar 2019
2225 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন বিসমিল্লাহ খাঁ
21 Mar 2019
780 বার পড়া হয়েছে
চলে গেলেন ফিরোজ মামা
18 Mar 2019
855 বার পড়া হয়েছে
সোনার বাংলা গেয়ে বিজয় দেখা হয়নি তাঁর
16 Feb 2019
1230 বার পড়া হয়েছে
শুভ জন্মদিন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
12 Sept 2018
1305 বার পড়া হয়েছে
স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।
Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]
Phone: +8801818189677, +8801717256199