চলে গেলেন ফিরোজ মামা

আবিদা নাসরীন কলি

সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 18 Mar 2019

850 বার পড়া হয়েছে

Shoes

চলচ্চিত্রের প্রবীণ স্থির চিত্রগ্রাহক ফিরোজ এম হাসান।তিনি সবার কাছে ফিরোজ মামা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।হাসি মুখে ছাড়া তাঁকে কেউ কখনো দেখেনি।তিনি কখনো কারো সঙ্গে রাগ করেছেন বলেও আমার জানা নেই।কাজ করতেন দাপটের সঙ্গে।তাঁর কাছে চাইলে চলচ্চিত্রের কারো ছবি পাওয়া যাবে না, তা ভাবাও যেতো না। কিছুদিন আগেই ফিরোজ মামার ৮২ তম জন্মদিন পালিত হয়। আমার সঙ্গে ফিরোজ মামার পরিচয় প্রায় দুই বছর।উনি না বললে আমি জানতেও পারতাম না উনার বয়স তখন ৮০। মামা বেশ গর্বভরেই কথাটা বলতেন।আমাদের দু’জনের বাসা উত্তরায় হওয়াতে কোন প্রোগ্রামে গেলে রাত হলেই আমি আর মামা এক সঙ্গে ফিরতাম।গাড়িতে বসে আমি মামার কাছে তাদের তরুণ বয়সের এফডিসি কেন্দ্রিক অনেক কথা জানতে চাইতাম। মামা বলতেন।এভাবেই অনেক কাহিনি আমি মামার মুখ থেকে শুনেছি।অফট্র্যাক কিছু জানতে চাইলে মামা বেশ লজ্জা পেতেন।আর তাঁর ওই চেহারাটা দেখার জন্য আমি বেশি বেশি ওগুলো জানতে চাইতাম।ইদানিং আমার পত্রিকার সুবাদে পুরানো কোনো কথা বা পুরানো কারো ফোন নাম্বার জানতে চাইলেই মামাকে ফোন দিতাম।

সব সময়ই ভাবতাম ফিরোজ মামার একটা ডিটেইল ইন্টারভিউ করবো। মামাকে বললে শুধু হাসতেন। বলতেন, হবে হবে। এই বয়সেও মামার প্রাণশক্তি দেখে আমি মামাকে  মাঝে মাঝে বলতাম, আমি তো ৮০ বছর বাঁচবোই না।আর বেঁচে থাকলেও বিছানায় থাকবো।’ মামা হাসতেন।মামাকে নিয়ে আমার কৌতুহলের শেষ ছিলো না। একদিন মামার কাছে জানতে চাইলাম, মামা আপনি রাত জাগতে পারেন?’ মামা বললেন, এখনও তিন রাত্রি পর্য্ন্ত জাগতে পারি।’ ‘আমি বললাম মানে?’ মামা বলেন,‘ মানে এখনও পর পর তিন রাত্রি জাগলে শরীর মেনে নেয়। কোনো অসুবিধা হয় না।’ এই কথা আমি আমার পরিচিত বা আত্মীয়-স্বজন অনেকের কাছে বলেছি। সবাই প্রায় হা হয়ে যেতো।কেউ কেউ বিশ্বাসও করতো না।

এই তো গত ৭ মার্চ একটা ফোন নাম্বার জানার জন্য মামাকে ফোন দেই। মামা বলেন, কাল দেবো।তখনও আমি আবার মামাকে তাঁর ইন্টারভিউ নেওয়ার কথাটা মনে করিয়ে দেই।মামা বলেন, ‘এই তো এরমধ্যেই একদিন আপনার বাসায় চলে আসবো।’ পরদিন মামার সেই টেলিফোনাটা আর আসেনি। আর বাসায় তো মামার কখনেই আসা হবে না।

কাল রাতে ১৩ নাম্বার সেক্টরে একটা দাওয়াতে গিয়ে ফেইসবুকে মামার চলে যাওয়ার খবরটা পাই।কিছুক্ষণের জন্য আমি যেন বোবা হয়ে যাই।তারপর ভাবলাম মামার বাসায় যাবো।কিন্তু পরক্ষণেই মত বদল করলাম।আমি মামাকে ওভাবে দেখতে চাইনা।সচল মামার মুখটাই সারাজীবন আমার স্মৃতিতে বেঁচে থাক।রাত তখন অনেক। বৃষ্টি পড়ছিলো।আমি তখন দাওয়াতের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হই।মনে মনে ভাবলাম মামার বিদায়ে প্রকৃতিও চোখের পানি ঝরাচ্ছে।আপনাকে অনেক ভালোবাসি মামা।আপনি ভালো থাকবেন।

ছবি: ফিরোজ মামার ফেইসবুক থেকে     

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199