সেদিনের সোনা ঝরা সন্ধ্যায়…

কনকচাঁপা

কণ্ঠশিল্পী ও লেখক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 18 Jan 2024

2705 বার পড়া হয়েছে

Shoes

শিল্পী কনকচাঁপা এবার গানের পাশাপাশি প্রাণের বাংলার পাতায় নিয়মিত লিখছেন তার জীবনের কথা। কাটাঘুড়ির মতো কিছুটা আনমনা সেসব কথা, হয়তো কিছুটা অভিমানিও। কিছুটা রৌদ্রের মতো, খানিকটা উজ্জ্বল হাসির মতো।

২০০০ সালের কথা বলছি।ইতোমধ্যেই গানের জগতে সব শাখায় অনেক গুলো পুরস্কার একাধিক বার পেয়েছি। গান সংশ্লিষ্ট সবাই খুব করে ধরছিলো যে খাওয়াতে হবে, খাওয়াতে হবে। আমরাও বুঝতে পারছিলাম আসলেই খাওয়াতে হবে। কিন্তু ফ্ল্যাট এ ওঠার পরে সঞ্চিত অর্থ খুবই কমে গেছে। কিন্তু মানুষের সামনে তো আর তা বলা যাবেনা। কি করা যায় ভাবছিলাম। তারপর দুজন মিলে ঠিক করলাম যে আমাদের নতুন ফ্ল্যাটের কম্যুনিটি হলে একটা মোটামুটি মানের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা লাগবে।আমার জীবনসঙ্গী এই কাউকে খাওয়ানো বাজার করা রান্নার তদারকি করা এগুলো খুব পছন্দ করেন। তিনি চটজলদি লিস্ট করে ফেললেন। মোটামুটি সব সেক্টর কভার করার চেষ্টা চলছে। সিনিয়র জুনিয়র কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, ছবির পরিচালক, প্রযোজক, স্টুডিওর রেকর্ডিস্ট, পরিচিত ডাক্তার, বন্ধুবান্ধব, অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, পত্রিকার সম্পাদক সহ আরও অনেক সেক্টরের মানুষকে বলা হলো। সবাই খুবই আনন্দিত। দিনতারিখ ঠিক করা হলো। সবাইকে ফোনে জানানো হলো। রোস্ট পোলাও জাতীয় সব আইটেম। আমার সাহেব ঠিক করলেন মিষ্টান্ন আর একটা সব্জি আমার রাঁধতে হবে। তাতে সবাই খুশি হয়ে যাবে।তাঁর স্ত্রীর সুনাম তিনি খুবই পছন্দ করেন। আমার সামনে বলুক না বলুক অন্যদের কাছে কথা বলতে গিয়ে আমার অকুণ্ঠ প্রশংসা করতে তাঁর ক্লান্তি নেই কখনো। আমি মুখে আপত্তি জানাই কিন্তু মনে মনে খুশি হই। যাইহোক যা বলছিলাম … যাদের দাওয়াত করেছিলাম দু’একজন ছাড়া প্রায় সবাই এলো। আমরা ধন্য হয়ে গেলাম। মেইন কোর্সের সঙ্গে আমার রান্না করা সব্জি খেয়ে সবাই অবাক! গান গাইতে গিয়ে এতো সঠিক স্বাদের রান্না কি করে করলি! আর মিষ্টান্ন করেছিলাম বড় বড় কয়েকটা পুডিং আর বড় দশ কেজি দুধ কালোজিরে চাল দিয়ে এক হাড়ি গুড়ের পায়েস আর কিছু ফ্রুটস ককটেল উইথ জেলো।সেগুলো দেখে শাকিলা আপা জাস্ট চেঁচিয়ে উঠলেন। কনক! এগুলো তুই করেছিস! আমি বিশ্বাস করি না।হা হা হা। শাকিলা আপা প্রশংসা করতে কখনো কুণ্ঠা করেন না।এবং যে আসরে থাকেন সেখানে আনন্দে উল্লসিত হয়ে আনন্দের ফুলঝুরি ছড়াতে থাকেন।

আমাদের হাদিভাই ,শাম্মিআপা, সুবীর’দা, কিশোর’দা আসিফ, বাচ্চুভাই’ জুয়েল আইচ, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার প্রথম আলোর মতিভাই, ইমদাদুল হক মিলন ভাই,সবাই আসলেন।আনন্দে আমরা আত্মহারা হয়ে যাচ্ছিলাম। সামিনা আপা এক গুচ্ছ বেলী ফুল এনে হাতে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে বুকে জড়ালেন আর বললেন-কনক! আমি দেখতে পাচ্ছি তোর চতুর্দিকে সুখ উপচে পড়ছে রে! উনি বুকে জড়িয়ে আর ছাড়ছেনই না! আমাদের দু’জনের মনে আসলেই আনন্দ উপচে পড়ছিলো। কি যে আনন্দ হচ্ছিলো বলার মতো না।বারী সিদ্দিকী ভাই গান ধরলেন হঠাৎ! সঙ্গে আরও সবাই খালি গলায় গাইছিলেন।আমার মনে হচ্ছিলো আনন্দে উড়ে যাচ্ছি।অনুষ্ঠান শেষ করে বাবুর্চির বিল মিটিয়ে পরিত্যক্ত কফির গ্লাস টিস্যু সাফ করে ঘরে গিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত বাজলো তিনটা! তার পরদিন রেকর্ডিং আছে।প্রযোজক দীপু মাহমুদ সাহেবের ছবি, বুলবুল ভাইয়ের সুর।আমরা দীপু ভাইকে আমন্ত্রণ করতে ভুলে গেছিলাম। উনি সবার সামনে বলে উঠলেন শোনেন কনকচাঁপা, আমার ছবির গান গেয়ে এতো নাম করলেন, আর আমাকে দাওয়াত দিলেন না, আপনি কি জানেন শুধু আমার ছবি না,সবার ছবিতে গান গাওয়া আমার এক তুড়িতে বন্ধ করে দিতে পারি? খুবই লজ্জাজনক অবস্থা কিন্তু তারপর ও মনে মনে চিন্তা করলাম " রাখে আল্লাহ্ মারে কে"।

ছবিঃ লেখকের ফেইসবুক থেকে

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199