ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৩০

সাগর চৌধুরী

লেখক, কলকাতা থেকে

প্রকাশ: 22 Sept 2022

2120 বার পড়া হয়েছে

Shoes

বিশিষ্ট সাংবাদিক সাগর চৌধুরী। একদা কর্মরত ছিলেন বিবিসি’র বাংলা বিভাগে। তারও আগে কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকা এবং বার্তা সংস্থায়। একদা নানান কাজের ভিড়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য ইংরেজি সাবটাইটেল রচনার কাজও করেছেন। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার, নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালকদের সিনেমায় তিনি ছিলেন সাবটাইটেল লেখক। এখন এক ধরণের অবসর জীবন যাপন করছেন। বসবাস করেন কলকাতা শহরে। সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ কিছুটা মেরুদূর হলেও কলম থেমে যায়নি। বই লিখছেন, অনুবাদ করছেন। সাগর চৌধুরী জীবনকে দেখেছেন নানান কৌণিকে আলো ফেলে। দীর্ঘদিন বিলেতে ছিলেন। ঘুরেওবেড়িয়েছেন নানান দেশে। জীবনও তাকে দেখেছে খুব কাছে থেকে। সেই জীবনপ্রবাহের গল্প শোনাতেই প্রাণের বাংলার জন্য কলম ধরলেন সাগর চৌধুরী। প্রাণের বাংলার পাতায় এখন থেকে জীবনের গল্প বলবেন তিনি।

ত্রিশ.
(পূর্ব প্রকাশিতের পর): আমার জীবনের আরেকজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন নাজির আহমেদ, যে সহযোগীদের নিয়ে অশোকদা লন্ডনের ব্রিক্ লেন-এ ডিজাইন-প্রিন্টিং-টাইপসেটিং কাজের ব্যবসা চালাতেন, তাঁদেরই একজন, সম্ভবত তিনিই ছিলেন এই কর্মকান্ডের প্রধান উদ্যোক্তা। তার আগেই অবশ্য নাজির আহমেদ বিলেতে আসেন এবং লন্ডনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস্-এ কয়েক বছর (১৯৪৮ - ৫২) কাজ করেন। তারও আগে, অর্থাৎ অবিভক্ত ভারতে, তিনি প্রথমে ঢাকায়, তারপর কলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে বেতার সম্প্রচারের কাজে যুক্ত ছিলেন। উচ্চশিক্ষিত, বিদগ্ধ এই মানুষটির বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া সংস্কৃত ভাষাতেও অগাধ বুৎপত্তি ছিলো। তিনি যখন কলকাতায় কর্মরত তখনকার একটি ঘটনার উল্লেখ এখানে না করলেই নয়। কলকাতার অল ইন্ডিয়া রেডিও’র (পরবর্তীকালে আকাশবাণী) বার্ষিক বেতারানুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দিনী একটি অসাধারণ জনপ্রিয় অনুষ্ঠান।

নাজির আহমেদ

 

১৯৩১ সালে প্রথম সম্প্রচারের পর থেকে আজও পর্যন্ত এই প্রভাতী অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে অক্ষুন্ন রয়েছে। এটার মহিষাসুরমর্দিনী নামকরণ অবশ্য হয়েছে ১৯৩৭ সালে। এই সঙ্গীতালেখ্যটি রচনা করেছিলেন বাণী কুমার এবং দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে স্তোত্রপাঠ ও সম্প্রচারের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রবাদপ্রতীম ভাষ্যকার শ্রীযুক্ত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের প্রয়াণের পরেও এই দায়িত্ব অন্য কোন ভাষ্যকারকে দেওয়া হয়নি, প্রতি বছর দুর্গা পূজার সূচনায়, মহালয়ার ভোর থেকে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে রেকর্ড করা ভাষ্যই সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। নাজির আহ্মেদ যখন আকাশবাণী-তে কাজ করছেন সেই সময়ে কোন এক বছর (সালটা মনে করতে পারছি না) অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ সামান্য অসুস্থ বোধ করতে থাকেন এবং বোঝা গেলো তিনি ভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন না। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষের তো মাথায় হাত ! ঐ সময়ে সমস্ত অনুষ্ঠানই সম্প্রচারিত হতো ‘লাইভ’, কোন ভাষ্য, গানবাজনা, ঘোষণা কিছুই আগে থেকে রেকর্ড করে ব্যবহার করার প্রযুক্তি তখনও অধরা। এদিকে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময় হয়ে এসেছে, মাত্র কয়েক মিনিট বাকি, উপযুক্ত বিকল্প ভাষ্যকার তখন কোথায় পাওয়া যাবে ? নাজির আহমেদ সে’সময়ে বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এগিয়ে এসে বললেন : ‘অনুমতি পেলে আমি ভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করতে পারি।’ সেই অনুমতি দিতে তো কর্তৃপক্ষের আপত্তি ছিলো না, তাঁদের তখন শিরে সংক্রান্তি। তবে বেতার কেন্দ্রের কর্মীদের কেউ কেউ বললেন যে দুর্গা পূজার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবের অঙ্গ এই বেতারানুষ্ঠানের জন্য সংস্কৃত স্তোত্র ও ভাষ্যপাঠ করানো হচ্ছে একজন মুসলমানকে দিয়ে সেটা জানাজানি হয়ে গেলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন ঝামেলা করতে পারে। শোনা যায়, তাদের এমন মন্তব্য শুনে অনুষ্ঠানের প্রযোজক (সম্ভবত নৃপেন মজুমদার নামে একজন) অত্যন্ত রেগে গিয়ে নাকি বলেছিলেন : ‘করবো একটা রেডিও প্রোগ্রাম, তার মধ্যে আবার বামুন-কায়েত-হিঁদু-মোছলমান এসব কথা উঠছে কেন ? তাহলে তো বাজনদারদেরও বাদ দিয়ে প্রোগ্রামকরতে হয় কারণ তাদেরও প্রায় সবাই তো মোছলমান !’ যাই হোক, একেবারে শেষ মূহুর্তে নাজির আহমেদ গিয়ে দাঁড়ালেন মাইক্রোফোনের সামনে এবং বিশুদ্ধ উচ্চারণে উদাত্ত কণ্ঠে স্তোত্র ও ভাষ্যপাঠ করে উপস্থিত সকলকে চমৎকৃত করে দিলেন। তাঁর পাঠ যখন চলছে তখন স্বয়ং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কিছুটা সুস্থ বোধ করার পর সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তিনিও মন্ত্রমুগ্ধের মতো এই মুসলমান যুবকের বাংলা ও সংস্কৃত ভাষ্যপাঠ শুনেছিলেন। এর কিছুদিন পরেই নাজির আহমেদ লন্ডনে চলে আসেন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস্-এ যোগদানের উদ্দেশ্যে।

১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে যান এবং সেখানে সাংবাদিকতার পেশায় যুক্ত হয়ে পড়েন। বিলেতে যাওয়ার আগেই অবশ্য তিনি তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে তাঁর নির্মিত ইংরেজি তথ্যচিত্র ‘ইন আওয়ার মিডস্ট্’ (In Our Midst), ঢাকায় প্রযোজিত প্রথম তথ্যচিত্র। তাঁর বাংলা তথ্যচিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘নতুন দিগন্ত’ এবং ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’। চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগের জের ধরে নাজির আহ্মেদ সবিশেষ সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং এক সময়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন পরিষদের’ (Film Development Corporation – FDC) ‘ম্যানেজিং ডাইরেক্টর’ মনোনীত হয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর পরে, ১৯৮৩ সালে, ‘বাংলাদেশ সিনে-জার্নালিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন’ সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে বিশেষ পুরষ্কার প্রদান করে। ঢাকায় নিজের পছন্দের পেশায় সম্মানের সঙ্গে কাজ করার সময়েই নাজির আহমেদ, খানিকটা আচমকাই, সেখানকার কাজকর্ম ছেড়ে আবারও লন্ডনে চলে আসেন পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। লন্ডনে তিনি অশোক গুপ্তর সঙ্গে মিলে প্রিন্টিং-ডিজাইনিং-টাইপসেটিং ব্যবসা শুরু করেন এবং আমৃত্যু এই কাজের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। কেন তিনি ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন তা কখনও জানতে পারিনি, জানার চেষ্টাও করিনি। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত আমার নিজের জন্য অতীব পরিতোষের হয়েছিলো কারণ তিনি এই সিদ্ধান্ত না নিলে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হতো না, যেটা অবশ্যই হতো একটা বিরাট ব্যক্তিগত ক্ষতি। লন্ডনে ফেরার পর নাজির আহমেদ তাঁর একদা কর্মস্থল বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস্-এর সঙ্গে, সেখানে তাঁর প্রাক্তন সহকর্মীদের সঙ্গে বরাবর যোাগাযোগ রেখেছেন। আমি ঐ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় তাঁকে বিবিসি’র সদর দফ্তর ‘বুশ হাউজ’এ হাজিরা দিতে দেখেছি। ঐ বাড়িটিতে সে’সময়ে বিবিসি’র কর্মীদের জন্য একটা ক্লাব ছিলো, যেখানে কাজের ফাঁকে ও পরে অনেকেই জড়ো হতেন কিঞ্চিৎ পানাহার সহকারে আড্ডা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। ক্লাবের সান্ধ্য আড্ডার একজন নিয়মিত সদস্য ছিলেন নাজির আহমেদ, যিনি ততদিনে আমার কাছের মানুষ ‘নাজিরভাই’ হয়ে উঠেছেন। তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা জন্মে গিয়েছিলো অতি দ্রুত প্রধানত দু’টি কারণে  প্রথমত, তাঁর সমবয়সী বা অসমবয়সী যে কোন লোককে সহজে কাছে টেনে নেওয়ায় নাজিরভাইয়ের স্বাভাবিক প্রবণতা। দ্বিতীয়ত, ঊর্মির সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক। বস্তুত, তাঁর সঙ্গে ঊর্মির ঘনিষ্ঠতা কিছুটা পারিবারিক সূত্রে ঢাকা থেকেই, অধিকন্তু ঊর্মির বাবাও কিছুদিন ঢাকার চলচ্চিত্র উন্নয়ন পরিষদে নাজিরভাইয়ের সহকর্মী ছিলেন। ঊর্মিও বিলেতে আসার পর পিতৃবন্ধু অভিভাবকতুল্য নাজিরভাইকে পেয়ে যারপরনাই খুসী ছিলো। ঊর্মির সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধিতে নাজির ভাই-ই বোধ হয় সবচেয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন। তারপর আমরা যখন আমাদের বিয়ের পরিকল্পনা প্রকাশ করলাম, সেটা জানার সাথে সাথেই নাজিরভাই আমাদের ডেকে বললেন : ‘আমি কিন্তু কন্যাকর্তা, বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত দায়িত্ব আমার। রেজিস্ট্রী অফিসের ম্যারেজ সার্টিফিকেটে প্রথম সাক্ষীর সই করবো আমিই।’ করেওছিলেন তাই। বলাই বাহুল্য, সেই সই করা সার্টিফিকেট আমাদের কাছে রয়েছে। দ্বিতীয় সাক্ষীর সই করেছিলো সৈয়দ মাহমুদ আলি, এই দাবিতে যে সে নাকি বরপক্ষের একজন  অবশ্যই স্ব-ঘোষিত। মাহমুদ আর তার স্ত্রী সেলিনা এখন মালয়েশিয়ার বাসিন্দা। আমাদের বিয়ের পর পরই রিসেপ্শন পার্টীর দাবি উঠলো বন্ধুবান্ধবের তরফে। উঠবে সেটা আমার জানতাম, এ’ব্যাপারে কোন অনীহাও ছিলো না আমাদের, কিন্তু কোথায় ও কীভাবে তার ব্যবস্থা করা যায় বুঝে উঠতে পারছিলাম না। অগত্যা নাজিরভাইয়ের শরণাপন্ন হতে হলো। এক সন্ধ্যায় ক্লাবে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতেই তিনি বললেন : ‘চিন্তা করার কিছু নেই, ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’ দু-তিনদিনের মধ্যে ব্যবস্থা হয়েও গেলো, বুশ হাউজের অদূরে রাসেল স্কোয়্যারে একটা ‘ভারতীয়’ রেস্তোরাঁ বুক করে ফেললেন নাজিরভাই এক সন্ধ্যার জন্য (পরে শুনেছিলাম, ঐ এলাকার একাধিক রেস্তোরাঁর খাবার নিজে খেয়ে তার মান পরীক্ষা করার পরই তিনি নাকি একটিকে নির্বাচন করেছিলেন)। আমাদের ডেকে বললেন : ‘কাদের নিয়ে পার্টী হবে ঠিক করা আছে তো ? দিনক্ষণ জানিয়ে দাও সবাইকে। মেন্যু আর অন্য সব কিছু ঠিক করা আমার ওপরেই ছেড়ে দাও।‘ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস্-এর বড়-মেজো-সেজো কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে নাজির ভাইয়ের হৃদ্যতা ছিলো। এঁদের মধ্যে ছিলেন হেদার বন্ড নামে এক মহিলা যাঁর সঙ্গে নাজির ভাইয়ের বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিলো। আমরা হেদার বন্ড-এর উল্লেখ করতাম নাজির ভাইয়ের “প্রিয় বান্ধবী” বলে। তবে কী কারণে জানি না, ঊর্মি এই মহিলাকে তেমন পছন্দ করতো না, যদিও আমার নিজের তাঁকে ভালোই লাগতো। পার্টির ক’দিন আগে আমাকে আলাদা ডেকে নাজিরভাই বললেন, যেন সামান্য কুণ্ঠাভরেই : ‘আমার ইচ্ছে হেদার পার্টিতে আসুক।’ আমি বললাম : ‘অবশ্যই। ওঁকে বলে দিন আপনি আজই।’ নাজির ভাই মাথা নেড়ে বললেন : ‘তা কী করে হয় ? এটা তোমাদের পার্টি, কাউকে আমন্ত্রণ করার অধিকারী তোমরাই। তাছাড়া আমি জানি হেদারকে ঊর্মি খুব পছন্দ করে না।’ আমি বললাম : ‘চিন্তা করবেন না, আমি নিজেই হেদারকে ইনভাইট করছি, সমস্যা নেই।’ মনে আছে, আমার এই আশ্বাসে নাজির ভাইকে বেশ উৎফুল্লই দেখিয়েছিলো। পার্টির আগের সন্ধ্যায় আবারও নাজিরভাই আমাকে ক্লাবের আড্ডা থেকে আলাদা ডেকে নিয়ে গেলেন ‘জরুরী একটা দরকার আছে’ এই কথা বলে। আমি ওঁর সঙ্গে এক পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর পর তিনি পকেট থেকে একটা খাম বার করে বললেন : ‘শোন, এর মধ্যে একটা চেক্ আছে। কাল সকালে প্রথমেই ব্যাংকে গিয়ে তোমার অ্যাকাউন্টে এটা জমা দিয়ে দেবে অবশ্যই।’ ‘কীসের জন্য এই চেক্ ?’ আমার অবাক প্রশ্ন। ‘আগামী কালের পার্টির খরচের জন্য।’ আমি আরো অবাক হয়ে বলার চেষ্টা করেছিলাম : ‘সেটা তো আমি, মানে আমরা দুজনেই...’ আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই গম্ভীর গলায় নাজিরভাইয়ের সংযোজন : ‘তুমিই দেবে, নিজের হাতে। সেটাই শোভন। কিন্তু আগেই তো বলে দিয়েছিলাম, আমি কন্যাকর্তা, বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব আমার। বিয়েটা হয়ে গেছে বটে, কিন্তু সামাজিকতা এখনও বাকি।’ এ’কথা শোনার পর আমার আার কিছুই বলার ছিলো না।

তখন তো কল্পনাও করতে পারিনি যে নাজিরভাই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য প্রায় তৈরী। মাত্র মাস ছয়েক পরে শুনলাম উনি অসুস্থ। নিজেই আমাদের খবর দিলেন যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে আর চিকিৎসার জন্য একটা ছোট অস্ত্রোপচারের দরকার হবে। আমরা সবাই সমস্বরে বললাম : ‘এটা এমন কিছু গুরুতর অসুস্থতা নয়, কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসবেন।’ নাজিরভাই ঈষৎ হেসে বললেন : ‘তোমাদের সম্মিলিত শুভেচ্ছাই ভরসা।’

তাঁর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগের সন্ধ্যায় ঊর্মি আর আমি নাজিরভাইয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম দেখা করতে। তাঁকে যেন কেমন বিষন্ন দেখাচ্ছিলো, যেন তাঁর সহজাত আশাবাদী ব্যক্তিত্বে সামান্য চিড় ধরেছে। কয়েক মিনিট কথাবর্তা বলার পর আমরা দু’জন বিদায় নেওয়ার সময়ে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে এসে তিনি মৃদু স্বরে বললেন : ‘প্লীজ্ প্রে ফর মি।নাজিরভাইয়ের মুখ থেকে শোনা শেষ ক’টি শব্দ।পর দিন, ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯০, হাসপাতালের অপারেশন টেবিলেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমার জীবনের অবিস্মরণীয় মানুষদের অন্যতমনাজিরভাই।

ছবিঃ গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199