নতুন বোতলে পুরনো তারিখ

ইরাজ আহমেদ

সাহিত্য সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 2 Jan 2025

2715 বার পড়া হয়েছে

Shoes

জানুয়ারী মাসের প্রথম তারিখে কেউ আপনাকে ঘুম থেকে তুলে যদি হ্যাপি নিউ ইয়ার জানায় তাহলে চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়, চূড়ান্ত বিরক্ত হবেন। কারণ আগের রাতে পার্টিতে রাত জাগার ধকল আছে, মাথার মধ্যে নতুন বছরের জন্য নানান পরিকল্পনা আছে, চলে যাওয়া বছরটায় সেমসাইডে খাওয়া গোলগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে, উঠেই এক কাপ ব্ল্যাক কফি খেয়ে মাথা ব্যথা কাটাতে হবে।এত জটিলতার মাঝে হুড়মুড় করে এসে পড়া নতুন বছরের জন্য সেই চির পুরাতন কথাটাই রয়ে যায়---ইশ, নতুন বছরটা এসেই গেলো!

নতুন বছর তো আসবেই ভাই; সে তো আর রাগ করে থাকা বউ নয় যে বাপের বাড়ি সময় পাল্টে যায়। গিয়ে আর আসতে চাইবে না। সময় কোনো পাওনাদারদের মতো ঠিক পথ চিনে চিনে তার শেষ সেকেন্ডের কাছে পৌঁছে যায়। তারপর ফুড়ুৎ।

সারা বছর সময়টাকে খিচে গালাগাল করি, আচমকা জোটা কোনো ছুটির জন্য অপেক্ষা করি, ধানাইপানাই করে তিনদিনের ছুটির সঙ্গে কোনো মতে আর বারো ঘন্টা যোগ করার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকা কোনো প্রেমিকের চাইতেও বেশি মরিয়া হয়ে উঠি। তারপর সেই বাড়তি সময়টা যোগ করতে ব্যর্থ হলে সেই সময়কে-ই গালাগালি ঝাড়তে থাকি---ধুর, সময়টাই খারাপ এখন।
হঠাৎ আমার কাঁধে হাত রাখে সময়। বলে, চিনতে পারছো আমাকে? আমি সময়।

দেখি, আমার হাতের মুঠায় ধরে রাখা গোলাপটা শুকিয়ে গেছে। সময়ের মুঠোর ভিতরে কত কী যে শুকিয়ে যায়া!

কত কিছু নিয়ে যে একটা বছর তার যাত্রা শুরু করে তার ইয়ত্তা নেই। কত পরিকল্পনা, কত ভাবনার বোঝা কাঁধে তুলে ধোপার গাধার মতো সময় চলতে শুরু করে। চলছে তো চলছেই, পথ ফুরায় না। ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা বদলে যায়। ছবি পাল্টায়। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জীবন কি খুব একটা পাল্টায় আসলে? প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সেই তো একই পাড়ার রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে থাকি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সন্ধ্যাবেলা নাছোড়বান্দা মশার মতো কানের কাছে পোঁ পোঁ করে কথা বলতে থাকে অনটন আর নানান বিপর্য়য়। ২০২৪ সালের শুরুটার কথাই যদি ধরি তাহলে বলতে হবে, ছবিটা একটুও পাল্টায়নি। দেশের রাজ্যপাট, রাজনীতি, সমাজনীতি অনেক কিছু উড়ে গেছে ঝড়ের দাপটে চোখের পলকে। কিন্তু আমজনতার ভাগ্য তো সেই এক জায়গাতেই। আশা ভঙ্গ, পরিকল্পনার পরী উড়ে যাওয়া, পড়ে থাকা কল্পনার পালক কুড়িয়ে আমরা আবার নতুন করে কত কী ভাবনার জাল ছড়াই।

মানুষ কি আসলে মস্ত এক মাকড়সা? কাফকার ছোট তেলাপোকা না, জাল বোনা মাকড়সা। তেলাপোকার সঙ্গে এক ব্যক্তির জীবন আর দৈহিক অবয়ব অদল-বদল হয়েছিলো কাফকার গল্পে। কিন্তু বাস্তবে সাধারণের একঘেয়ে জীবনের তো অদল-বদল হয় না। মাকড়সার মতো  মানুষের মনের মধ্যে জাল ছড়ানো চলে। কত ভাবনা ধরা পড়ে সেই জালে। কিন্তু ওই জাল ছড়ানোই শেষ। তারপর বাকিটা সেমসাইডে গোল খাওয়ার গল্প হয়ে থেকে যায় বছর শেষের ঝুলিতে।

তবে বছর বিদায় নিলেও অতিক্রান্ত সময়ের কিছু স্মৃতি হয়তো পকেটে বৃষ্টিতে ভেজা ম্যাচবক্সের মতো থেকে যায়। কাঠি ড্যাম্প হয়ে যাওয়ায় সেই ম্যাচ আগুন জ্বালানোর সক্ষমতা হারায়। স্মৃতিগুলো থাকে জাবর কাটার জন্য। সাধারণ মানুষের তো সুকুমার রায়ের গল্পের বিড়ালের মতো, হাতে শুধু পেন্সিল ভরসা। ভরসা শীতের সন্ধ্যায় এক কাপ গরম চা, কম দামে সবজি আর নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারা। আসলে সময়ের একটা ভালো গুন হচ্ছে, সময় আটকে থাকে না, বয়ে চলে যায়। ড্রেনের পানির মতো আটকে গেলে দুর্গন্ধ ছড়াতো। এই যে সময় বয়ে যায় সেটুকুই আসলে আশার কথা। সবাই তো আশা নিয়েই বাঁচে। আশায় বসতি গড়ে। পৃথিবীজুড়ে এখন যুদ্ধ আর রাজনৈতিক অশান্তির গল্প বেস্ট সেলারের তালিকায় লটকে আছে। এই গল্পের শেষ নেই। তবুও বছর ফুরিয়ে গেলে আমরা সবাই বলতে চাই, ভালো কাটুক অজানা ভবিষ্যত। নিজের মতো করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন পল্লবীত হোক।

ছবিঃ গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199