বিকেলে বউ বাজার

আবিদা নাসরীন কলি

সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 28 Dec 2023

3800 বার পড়া হয়েছে

Shoes

বড়ো প্রিয় শীতকাল আমার। কেমন যেনো মায়া জড়ানো। মাটির পথ পেরিয়ে,ফুলের বন পেরিয়ে,সবুজ মাঠ ছাড়িয়ে দূরে, অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করে। শীতের বিকেলে এমন ভাবনা প্রায়ই মাথাচাড়া দেয়।দুপুরের পর বিকেলটা বড়ো ক্ষীণ। ধরে রাখা যায় না। হেলে পড়া সূর্য মাথায় করেই চলে যাই বউ বাজারে কিছুটা গ্রামের ধূলোমাখা শেষ বিকেলের স্বাদ পেতে। এমন পরিবেশ পছন্দের তালিকায় থাকলে আপনিও আমার মতো চলে যেতে পারেন বউ বাজারে। হয়তো ভাবছেন এ আবার কোথায়!! অথচ ঢাকার ভেতরেই জায়গা করে নিয়েছে বউ বাজার। শহরের তেল ডিজেলের ঘ্রাণ কাটিয়ে কিভাবে যেনো সেখানে জায়গা করে নিয়েছে নাড়া পোড়ানো ঘ্রাণ। ইট-পাথরের জঙ্গল ছেড়ে যেনো এক টুকরো মুক্ত আঙ্গিনা।

উত্তরার শেষ সীমানায় দিয়াবাড়ি। সেখানে  মেট্রোরেল উত্তরা স্টেশন। প্রথম স্টেশন থেকে দ্বিতীয় স্টেশন অব্দি গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে কিছুদূর এগুলেই হাতের বাঁয়ে পড়বে বউ বাজার।আশে-পাশের গ্রামের বউ-ঝি’রা মিলে তাদের ক্ষেতের শাক-সব্জী নিয়েই এখানে বাজার বসিয়েছে।তাই এর নাম বউ বাজার এমন কথাই জানালেন  বিক্রেতারা।তবে এদের পাশাপাশি বেদে মহিলারাও এখানে পসরা সাজিয়ে বসে এই বাজারে। ধূলো ওড়ে বাজারে। ছোট ছোট ঝাকায় ঝকঝক করে সবজি। ঢেড়ষ ‍শুয়ে থাকে দুপুরের আলস্য মেখে। লাল মুলা দামের আগুনে পুড়তে পুড়তে মুখ দেখায় পাশের ঝাকায় চালকুমড়াকে। শাকের বাজার রঙিন হয়ে থাকে নানান রঙে।কুমড়োফুল,বকফুল,সরিষাফুল রঙিন করে আছে ঝাকা।

দরদাম একেবারেই করা যায় না এই বাজারে। নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কেউ  কিছু বিক্রিও করে না। যে কোনো সব্জী বা শাকের মূল্য সবার কাছেই এক।দরদাম করতে গেলে ওরা কথাও বলতে চায় না। ছুটির দিনগুলোতে এখানে ভীড় সামলানো মুশকিল। একেবারে যেনো মানুষের সমুদ্র।

বাজারের এক কোণে ক‘জন বসে দেশী মুরগী নিয়ে।বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে এখানে দেশী মুরগী পাওয়া যায়। পাশেই দেশীহাঁস নিয়ে আরও কয়েক বিক্রেতা।  শুরুতে বউদের আধিক্য এখানে বেশী থাকলেও এখন স্বামীরাও বউদের পাশে আসন নিয়েছে।

বাজারের শুরুর দিকে এক পাশে ক‘জন মহিলা ও পুরুষ মাছ নিয়েও বসে। ছোটমাছ, পাঁচমিশালী মাছ  পাঙ্গাস মাছ, তেলাপিয়া মাছ এমন কী ছোট সাইজের ইলিশও জুটে যায় এই বাজারে শেষ বেলায়। তবে মাছগুলো তেমন চোখ কাড়ে না। তাই ওদিকে খুব একটা ভীড়ও নেই। ভীড় সব উপচে পড়ে খাবারের দোকানে।

বাজারের ডানপাশে একটা ছাউনিতে তিনটি লাকড়ির চুলা জ্বালিয়ে ইয়া বড়ো সাইজের তিন কড়াইয়ে ডুবন্ত তেলে প্রতিদিন বিকালে ভাজা হয় পেঁয়াজু,পুরি,আলুর চপ,বেগুনি।দোকান ঘিরে খুব ভিড়। ভাজতে দেরী কিন্তু মুহুর্তে বড়ো বড়ো থালা খালি হতে সময় লাগে না। প্রতিদিন কী পরিমান বিক্রি হয় তার হিসেব নেই।

পাশেই আর একটা ছাউনিতে স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে বানাচ্ছে গুড়ের জিলাপী সেখানেও মাছির সঙ্গে সঙ্গে ওড়ে যেন মানুষ। কোনো কোনো দিন ৩০ কেজি জিলেপীও হাওয়া হয়ে যায়, জানালেন বিক্রেতা। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে বউ-বাচ্চা নিয়ে এখানে আসে শুধুই এগুলো খেতে।বাজার ঘিরে চারপাশে গাড়ির ভীড়। কেউ বাজার করছে ,কেউ খাচ্ছে সে এক  অসাধারণ দৃশ্য। যেনো প্রতিদিন গ্রামের হাটবার।

এদিকে শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে পিঠার যোগাড়ও হয়েছে সেখানে। বাজারের মাঝখানে ছাউনিতে বসে চলে শীতের  পিঠার আয়োজন।চিতই পিঠা,ভাপাপিঠা,তেলের পিঠা মাটির চুলার আগুনে উষ হয়ে উঠছে আর অন্যদিকে চলছে আগ্রহীদের পেটপূজা। সবাই সমানে তাড়া দিতে থাকে। প্রতিযোগীতা চলে কার আগে কে নেবে!

স্বল্প পরিসরে খেজুরের গুড়,মধু,থেকে শুরু করে গরুর দুধও মিলে বউবাজারে।বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া এ বাজার চলে রাত ৮টা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।অল্প-স্বল্প করে নিজের ক্ষেতের সব্জী-শাক নিয়ে বসে বলে অনেকেই বিক্রি হয়ে গেলেই পাট চুকিয়ে উঠে পড়ে।তবে এ তল্লাটে অন্যান্য বাজারের মতো কোনো চায়ের দোকান নেই।

বাজারের পাশের রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা অন্য এক পরিবেশ। বুনো ফুল আর পাতার ঘ্রাণ টেনে নিতে চায় পথিককে আরও গহীনে হয়তো। আশপাশে আছে অনেক ফুলের নার্সারী। সে এক অন্যরকম অনুষঙ্গ যা মনে আশ্রয় দেয় আনন্দের।তাই  কোনো এক বিকেলে অবসর থাকলে আপনিও চলে আসতে পারেন বউ বাজারে। সময়টা হয়তো মন্দ কাটবে না।

ছবিঃ প্রাণের বাংলা

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199