চলে গেলেন আত্মিক দু‘জন মানুষ

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 13 Dec 2024

2000 বার পড়া হয়েছে

Shoes
রফি হক
রফি হক

দু’জন মানুষ আগে-পরে চলে গেলেন। দু‘জনই আমার প্রিয় মানুষ। দু‘জনই গুণী। চলে গেলে অনেক কথা মনে পড়ে। এটা হলো না, ওটা হলো না, দেখা করবার কথা ছিলো, হলো না, একদিন না যেতে বলেছিলেন ? তাই তো যাওয়া হলো না, ইস্‌ --এমন অনেক কথা।

বেঁচে থাকতে ভাবি, মানুষটা তো বেঁচেই আছে, দেখা হবে না কেন? দেখা হবে । ফোনে কথা হবে, চা পান হবে। মনে হতো, সবাই মরে যাবে আমি মরবো না, আর আমার প্রিয় মানুষেরা মরবে না!

এবার গেলে গান শুনবো। পাপ্‌পু দির গান অনেক দিন শুনি নি ! পাপ্‌পু দির একটা স্কুল ছিলো, গানের..'গীতসুধা'। মনোগ্রামটি আমি করে দিয়েছিলাম। পাপ্‌পু দি হলেন পাপিয়া সারোয়ার।

সাদি মুহম্মদ ভাই ছিলেন পাশেই, তাঁর স্বরভঙ্গিতেই বললেন, "পাপ্‌পু দি, তুমি রফি কে দিলে তোমার স্কুলের মনোগ্রামের ডিজাইন করতে ? তুমি আর কোনো শিল্পী পেলে না? পারোও তুমি পাপ্‌পু দি..... ও মনোগ্রাম তুমি এ জীবনে আর পাবে না। দেখে নিও"।

সত্যি, অনেকগুলো মাস হয়ে গেলো, আমার অনেক ছবি আঁকা হলো, লেখা হলো, ওয়ার্কশপ হলো, আর্টক্যাম্প হলো কিন্তু, পাপ্‌পুদির 'গীতসুধা'র লোগো আর হয় না ।

আমিও এড়িয়ে চলি। একবার শুনেছিলাম, শিল্পী অলোকেশ ঘোষ-কে এক দম্পতি তাঁদের আট বছর বয়সি প্রথম সন্তানের ছবি আঁকতে দিয়েছিলো। আজ দিই, কাল দিই করে শিল্পী অলকেশ‘দা সেই বাচ্চার ছবিটি নয় বছর পরে এঁকে নিয়ে গিয়েছিলো। ততো দিনে বাচ্চা কলেজে উঠে গেছে !!

আমার অবস্থা অমন হতে পারে ভেবে পাপ্‌পু দি একদিন আমাদের কয়েকজন বন্ধুকে দাওয়াত দিলেন।

রাতে খাবো। বললেন,`` সাদি তোমাদেরকে আর্ট কলেজে গিয়ে নিয়ে আসবে। তুমি 'গীতসুধা'র লোগোটা এনো কিন্তু, বাবু"।.... কথাটার ভেতরে এত স্নেহমাখা ছিলো। আহা। আমার কানে বাজছে !!...আপনার মরমী গলায় আর শুনবো কোনো গান আপনার সামনে বসে !!

আমি সত্যি ভাগ্যবান ছিলাম। ছোটোবেলায় কুষ্টিয়াতে পাপিয়া সরোয়ারের গান শুনেছিলাম প্রথম, টেলিভিশনে, মকলেস ভাইয়ের বাড়িতে। তখন আমাদের টেলিভিশন, রেডিও, ফোন--কিছুই ছিলো না। কী যেন একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ছিলো সেটা (মনে নেই, আজ), "নাই টেলিফোন, নাই রে পিওন, নাই রে টেলিগ্রাম..."।

তাঁর গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গানগুলো পরিচয়ের পরে শুনেছি।....

সেই মানুষটাকে অনায়াসে কোনো দিন দেখবো চোখের সামনে, কথা বলবো, স্নেহ পাবো..এ যেন রূপকথার মতো। আর্ট কলেজে পড়ে অনেক ভাগ্যবান হয়েছি আমি। অনেক গুণী জনের স্নেহ ধন্য হয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি অজস্র। আমাকে কবি ইকবাল আজিজ স্বপন ভাই বলতেন, "রফি, তুমি মানুষের এত স্নেহ ভালোবাসা পাও কী করে ? মানুষ এতো ভালোবাসে তোমাকে ? অনেকে সারাজীবনে কিছুই পায় না, জানো তুমি?" আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসার মানুষেরা একে একে চলে যাচ্ছেন। এ বড়ো বেদনার..

"...বড়ো বেদনার মতো বেজেছ তুমি হে আমার প্রাণে,

মন যে কেমন করে মনে মনে তাহা মনই জানে॥..."

আজ চলে গেলেন হেলাল হাফিজ।

আমি যখন ব্যক্তিগত সংকটে দীর্ণ, জীবন এফোড় ওফোড় করা শুন্যতায় ভাসছি-- কবি হেলাল হাফিজ ছিলেন আমার সঙ্গে। তাঁর অমর পঙ্‌ক্তিগুলো আমাকে জীবনবোধকে উপলব্ধি করতে শেখাত।

তখন আমি আগুনে পুড়ছি, সমানে নিউজপেপার পোড়াচ্ছি।

পোড়া কাগজের কোলাজ করছি, ছবি আঁকছি, এ যেন অন্তর্দহন । সিরিজের নামও দিয়েছি, 'INNER BURNT FORM' (অন্তর্দহনের রূপ) । আর তখনই পড়ে ফেললাম হেলাল হাফিজের ওই কবিতাটি, যার পঙ্‌ক্তিগুলো এমন--

"...আগুন আর কতোটুকু পোড়ে ?

সীমাবদ্ধ ক্ষয় তার সীমিত বিনাশ,

মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস।

আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে

কিছু থাকে,

হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই,

মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না

কিচ্ছু থাকে না,

খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।..."

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199