আমার বৃক্ষের…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 25 Apr 2024

4530 বার পড়া হয়েছে

Shoes
মেঠোপথের দুধারে
মেঠোপথের দুধারে
আনসার উদ্দিন খান পাঠান

১৯৮০ সনের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি আমার মা মারা যান, আমি সবে আনন্দমোহন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শোকের সাগরে যখন ভাসছি তখন হঠাৎ মনে হলো মায়ের স্মৃতি রক্ষায় একটা গাছ লাগালে কেমন হয়! পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারী মায়ের কবরের কাছাকাছি একটা রেইন ট্রির চারা লাগাই। সে বৃক্ষ এখন বিশালাকায়। আশেপাশে আর এত উঁচু গাছ না থাকায় তার ডালেই আশ্রয় নিয়েছে একজোড়া দূর্লভ কুড়া ঈগল। এই গরমে তার শীতল ছায়া বুঝিবা আমার মা-ও পাচ্ছেন।

কাজলায় আমাদের গ্রামের বাড়ির পশ্চিম ধারের বহু পুরানো বনকে ধানের জমি ক্রমাগত গ্রাস করে নিচ্ছিলো। ২০০৪ সনে মনে হলো এক খন্ড ধানের জমি কিনে তাতেই আবার বন তৈরি করি। যেই ভাবা সেই কাজ। জমির মাঝখানে বিশাল এক ডোবা করে ,তার মাটি দিয়ে ক্ষেতের লেবেল উঁচু করে তাতে লাগাই নানান জাতের দেশীয় গাছ। আমলকি,হরিতকি,বয়রা, জারুল , ডুমুর, জলপাই, মেহগিনি, বাঁশ, তালসহ পাশের জংগল থেকে তুলে আনা নাম না জানা অনেক গাছ লাগিয়ে দেই। দিনে দিনে সেখানে এখন ঘন বন হয়ে গেছে। কত পাখির কিচিরমিচির! এবার সে বনে দুধরাজ আর রাজন বাসা বেঁধেছে, তারা বাচ্চা ফুটাবে। এ দুই দৃষ্টিনন্দন পাখির ছবি তুলতে আগে প্রতি বছর রাজশাহীর আমবাগানে যেতাম।অথচ এখন তারা আমার বনের অতিথি।

২০০৮ সনে মনে হলো কাজলার একটা মেঠোপথের দু'ধারে কিছু গাছ লাগাই। তখন মেহগিনি আর জামের চারাই হাতের কাছে পেলাম। তাই লাগালাম দুই সারিতে। সে এখন অনেক বড়।এই গ্রীষ্মের খরতাপে তার নীচ দিয়েই শীতল পরশ মাথায় করে পুলকিত মনে হেঁটে যাই।

আমার তৈরি করা ইন্ডিজিনিয়াস গাছের বন

২০০৪ সনে আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ডিসি ট্রাফিক সাউথ। নগর সৌন্দর্য বর্ধনে শহর জুড়ে রোড ডিভাইডারে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেয় সরকার। তাতে আমিও শরিক হই। কার্জন হল ক্রসিং থেকে বঙবাজার পর্যন্ত রোড ডিভাইডার , নিমতলী ক্রসিং এবং শিক্ষাভবন সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে ( শুধুমাত্র সেখানে গুটিকয় গাছ আগেই ছিলো) যে সব গাছ আজ দেখি তার সবই আমি নিজ হাতে রোপন করি।গোড়ায় নিত্য জল দেয়ার ব্যবস্থা করি। ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা গাছের দেখভাল করতো। এই কাজে আমাকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন অকাল প্রয়াত তখনকার ডিএমপির এ ডি সি হেডকোয়ার্টারস জনাব রুহুল আমিন। এই সড়ক দিয়ে যখন যাই অজান্তে সেসব বৃক্ষের সঙ্গে কথা বলি। প্রশান্তিতে আপ্লুত হই।

চলুন সাধ্যমত গাছ লাগাই। রোপিত বৃক্ষ কেবল ধরণীই শীতল করবে না, আপনার সারাজীবন নির্মল আনন্দের উৎস হয়েও টিকে রইবে।

ছবি: লেখক

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199