তোমরা ফেলে দাও আমি তুলে রাখি

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 14 Nov 2024

1730 বার পড়া হয়েছে

Shoes
স্বরূপ জাহিদ

তখন বোধহয় কিশোর বেলা । অঞ্জন দত্তর একটা গান হৃদয়ে ধাক্কা দিয়েছিলো। পুরো গান জুড়ে প্রতিটা লাইনে সবকিছু ফেলে দেয়ার অভ‍্যেস। ‍গানের ভাষা বলছে , সব কিছু ফেলে দেয়ার অভ‍্যেসটা গ্রাস করে আমাদের প্রতিনিয়ত। তবে মনের অজান্তেই শেষমেষ কিভাবে যেনো একটা জিনিষই থেকে যায়। আর সেটা শুধুই ভালোবাসা। গান, কবিতা তো মনেরই আয়না। এই যে ফেলে দেয়া বা বাতিলের প্রাণপন চেষ্টা সেটা হয়তো স্বভাবজাত । তবে এই স্বাভাবজাত ব‍্যাপারটাতে সবসময় শেষে গিয়ে যে ভালোবাসা বা মমতা থেকে যায় তা হয়তো নয়। প্রচন্ড ঘৃনা ও বাসা বাঁধে কখনোবা। তবে মনোজগতে এই ঘৃনা বাঁধতে কিন্তু ঢের সময় লাগে। একটা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসে ঘৃনার স্তুপ তখন যেটা বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়, সেটা বোধকরি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। তখন আর ভালোবাসা থাকে না। থাকে শুধুই ঘৃনা। মানুষ আসলে কি বাতিল করতে চায় ? অন‍্যভাবে বললে , কি ফেলে দিতে চায় ? পুরোনো জামাকাপড়, টুথব্রাশ থেকে শুরু করে নিজের জন্মশিকড় পর্যন্ত মানুষ বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়। প্রেম, কাম বা দীর্ঘ সম্পর্ক একসময় পুরোনো হয়ে বাতিল হয়ে যায়। হয়তো ঘৃনা নিয়েই ফেলে দেয়া সম্পর্কের দিকে আর মানুষ ফিরে তাকায় না। আবার কোনো এক অঝোর বৃষ্টি বেলায় হয়তো সেই প্রেম, সেই সম্পর্ক, চোখ বন্ধ করে সে নিজেই ফিরিয়ে আনে তার মনকে শান্ত করতে। তখন নিশ্চিতভাবেই ঘৃনার বদলে থাকে ভালোবাসা। তবে সেটা সেই প্রথম প্রেমের মতো হয়তো তীব্র নয়। নিত‍্য ব‍্যবহার্য প্রিয় জিনিষটা মানুষ অবলীলায় ফেলে দেয়। আজকের তীব্র পছন্দের ঘড়ি, চশমা কালকেই হয়তো ফেলে দিয়ে নতুনের খোঁজ করে সে। বাতিল করে দেয় তার দৈনন্দিন জীবন থেকে। যারা ফেলেন না বা জমিয়ে রাখেন নিত‍্য ব‍্যবহারের এসব অনুসঙ্গ, তাদের আবার মনোজগতে সমস‍্যা চলছে কিনা সেটা নিয়েও মনোবিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণা করেন । বাতিলের ঝুড়ি প্রতিনিয়ত ভারী হয়ে যাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখাটাও আজ তাই জরুরী হয়ে গেছে। আজকে যে ঘটনা ঘটছে, কাল সেটাই কালের নিয়মে হারিয়ে যেতে থাকবে। এর মাঝে মানুষ তার মগজে বা মনের মাথায় কি রেখে দিবে বা কি ফেলে দিবে সেটা তার একেবারে কিন্তু নিজস্ব ব‍্যাপার নয়। কোনো একটা ঘটনা তার মনে আঘাত করলেই সে চাইবে তার মগজ থেকে ঘটনাটা বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে। তবে সে একা চাইলেই তো হবে না। তার চারপাশ কি সেই ঘটনা ফেলে দিতে চাইছে ? খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা এখানেই। একক একজন মানুষ তার মনের আঘাতের কারনে বা তার চিন্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই বলে বাতিলের খাতায় ফেললেই কি সেটা বাতিল হয়ে যাবে ? তার ব‍্যক্তিগত আঘাত থেকে এই বাতিলের চেষ্টা সমস্টিগত ভাবে গ্রহন করতেই হবে তার কোনো বাধাধরা দায় নেই। মানুষের চারপাশই তখন বলে দিবে সেটা বাতিলের প্রয়োজন আছে কিনা। সেখানে একক ব‍্যক্তির নিজস্ব চাওয়াটা খুবই গৌন। সময় পরিক্রমায় মানুষ তখন বাতিলের খাতাটা খোঁজ করে দেখে নেয় যে আদৌ সেটা একক কোনো ঘৃনায় বাতিল হয়েছিল কিনা। মানুষ নতুনের অন্বেষন করে তার পুরোনো কে ফেলে দিয়ে বা নির্দিষ্ট কোনো সময় কে বাতিল করে। তবে শিকড় ফেলতে গেলে বা অনেক পুরোনো অভ‍্যেস বাতিল করতে গেলে মানুষকে ভাবতে হয়। এই ভাবনা এক প্রজন্মের নয় বরং বহু প্রজন্মের । শিকড় প্রোথিত থাকে গভীরে। শিকড় উপ্রে ফেলতে গেলে ভালবাসাটা বোধহয় থাকে না। তখন থাকে ঘৃনা। ঘৃনা নিয়ে শিকড় বিচ্ছিন্ন করলে পরের প্রজন্মের কাছে রয়ে যাবে শুধুই জবাবদিহিতা । ফেলে দেয়া বা বাতিল করা সহজ। ঘৃনা থেকেই হোক বা অপ্রয়োজনেই হোক বাতিল করার সময় ভ্রমন সংক্ষিপ্ত । আর শেষমেষ ভালোবাসাটা শুধু রেখে দিয়ে দেখুন। একটা দীর্ঘ জীবনভ্রমন অপেক্ষায় আছে আপনার জন‍্যে। যেটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে।

ছবি: প্রাণের বাংলা

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199