স্টেজ পারফর্মেন্সর জন্য প্রযোজনীয় কিছু কথা…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 4 Jan 2024

2950 বার পড়া হয়েছে

Shoes
আশিকুজ্জামান টুলু

 

দেশের প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান এবং গায়ক আশিকুজ্জামান টুলু। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন কিন্তু গানের পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে তার নিয়মিত যোগাযোগ।  লেখালেখির সঙ্গেও তার নিযমিত বসবাস । এবার প্রাণের বাংলায় গান আর গান বিষয়ক নানান ভাবনা নিয়ে সময় পেলেই লিখবেন তিনি।

 

প্রচুর পরিমান স্টেজ শো করার কারনে কিছু কিছু টেকনিক্যাল বিষয় নিজে নিজেই চিন্তা করে বের করেছিলাম । আমি এখানে শেয়ার করছি বিষয়গুলো, জানিনা কারও কাজে লাগবে কিনা । স্টেজ এমন একটা জায়গা যেখানে ওঠা মাত্র আমাদের হার্টবিট বেড়ে যায়, আমাদের মোমেন্টাম বেড়ে যায়, আমাদের এক্সাইটমেন্ট বেড়ে যায় । এই বেড়ে যাওয়াগুলো সর্বপ্রথম একটা বিষয়কে প্রচণ্ড ভাবে প্রভাবিত করে, তা হলো গানের লয় কিংবা টেম্পো । প্রতিটা গানের টেম্পো অটোমেটিক্যালি বেড়ে যায় । এই বেড়ে যাওয়া মাঝে মাঝে এমন পর্যায়ে চলে যায় যে গানের মাধুর্যটা নষ্ট হয়ে যায় । এরকম অবস্থায় একটা বিষয় মানসিক ও শারীরিক ভাবে প্র্যাকটিস করতাম আমি, তা হলো নিজের উত্তেজনাকে সর্ব প্রথমে সংবরণ করার প্রচণ্ড প্রচেষ্টা । এই উত্তেজিত হওয়ার বিষয়টা একেবারে একটা বেসিক ইন্সটিঙ্কট অর্থাৎ প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই আছে । এই প্র্যাকটিসটা আসলে দীর্ঘদিন ধরে করতে হয়েছিলো আমাকে এবং তারপর মাঝামাঝি একটা জায়গায় পৌঁছতে পেরেছিলাম, অর্থাৎ নিজেও পুরোপুরি উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে পারিনি, কিছুটা রয়ে গিয়েছে এখনও । তবে দীর্ঘদিন বাজানোর ফলে একধরনের কনফিডেন্স চলে আসে এবং তখন উত্তেজনাটা অটোমেটিক্যালি প্রশমিত হয়ে আসে । এই উত্তেজনা বলতে আমি কিন্তু একজন মিউজিশিয়ানের দৌড় ঝাপ করে পারফর্মেন্সটাকে বুঝাচ্ছি না । এই উত্তেজনাটা প্রতিটা মিউজিশিয়ানের ইন্টারনাল মোমেন্টাম বা শরীরের আভ্যন্তরীণ গতি যা বাইরে থেকে দেখা যায়না । অর্থাৎ দর্শক শ্রোতা টের পায়না চেহারার অভিব্যাক্তি দেখে, শুধু শিল্পী নিজে বুঝতে পারে তার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের ফল । এই উত্তেজনার কারনে সাধারণত কি কি অসুবিধা হয় স্টেজে।

১। গিটারিস্ট বা কিবোর্ডিস্ট পিস ভুল বাজিয়ে ফেলে

২। ড্রামারের টেম্পো বেড়ে যায়, লয় ঠিক থাকেনা, ওঠানামা করে, কিউ ভুলে যায় ইত্যাদি

৩। গানের সিরিয়াল চেঞ্জ হয়ে যায়

৪। সিঙ্গার গানের কথা ভুলে যায়, লয় বাড়িয়ে দেয়, গান শুরু করার আগে মিউজিসিয়ানদের কে দেয়া কিউ’র লয় বাড়িয়ে দেয়, তাতে করে প্রথম থেকেই গানের লয় বেড়ে যায়, ধরা ছাড়াতে ভুল করে । এছাড়াও আরও অনেক কিছুই ঘটতে পারে ব্যাক্তি বিশেষে । আরও কিছু ব্যাপার স্টেজ পারফর্মেন্সের জন্য খুব জরুরী ।

বিষয়গুলো  হলো:

 ১। যাদের তারের যন্ত্র, যেমন লিড, বেইজ, মেন্ডোলিন, ইউকেলেলি, ভায়োলিন ইত্যাদি বাজায়, স্টেজে ওঠার আগে ভালো ভাবে টিউন করে নেওয়া খুব প্রয়োজন । স্টেইজে উঠে দর্শকদের সামনে টিউন করলে দর্শক বিরক্ত হয়।

২। প্রতিটা যন্ত্র খুব ভালো করে টিউন করে নিতে হবে কারন টিউন যত ফাইন হবে, মিউজিক ও গান শুনতে তত শ্রুতিমধুর এবং ম্যাচিওর্ড লাগবে । যন্ত্র বেসুরা থাকলে শ্রোতাদের কানে এক ধরনের বিরক্তির সৃষ্টি করে এবং ব্যান্ডটাকে কাঁচা মনে হয় ।

 ৩। সাউন্ড ব্যালেন্স স্টেজে ওঠার বেশ আগেই করে নিতে হয় । সাউন্ড ব্যালেন্সের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হচ্ছে স্টেজ মনিটরিং প্রপারলি ব্যালেন্স করা অর্থাৎ স্টেইজে সবাই ঠিক ঠাক শুনছে কিনা যখন পুরো মিউজিকের সঙ্গে গান গাওয়া হচ্ছে, সেটা আগে ভাগে ঠিক করে নেওয়া খুব ভালো । তাহলে প্রোগ্রাম চলাকালীন বার বার “মনিটর বাড়াও মনিটর বাড়াও” বলতে হয়না । আর তাছাড়া প্রোগ্রাম চলাকালীন এই “মনিটর বাড়াও” বিষয়টা শুনতে খুব অ্যামেচার লাগে ।

৪। স্টেজে ওঠার আগে প্রতিটা কেবল চেক করে নিতে হবে যাতে কোন ধরনের নয়েজ না থাকে কারন কোন একটা ভীষণ ছোট্ট নয়েজ যখন ২০ হাজার ওয়াটের সাউন্ড রেইনফোরসমেন্টে অ্যামপ্লিফাই হয়, সেটা বিরাট হয়ে যায়, তাই অলওয়েজ ভালো কেবল, ভালো কানেক্টর, ভালো জ্যাক ইউজ করা উচিত । মোগামি ভালো কেবল ।

৪। এক বোতল পানি বা একটা সফট ড্রিঙ্কস রাখা ভালো পারফর্মেন্সের সময় ।

৫। প্র্যাকটিস প্যাডে প্র্যাকটিস করার সময় সাউন্ড খুব টাইট থাকে এবং খুব পাওয়ার থাকে, যেহেতু রুমটা সাধারণত ছোট হয় । কিন্তু স্টেজে সেইম পাওয়ার বা টাইট সাউন্ড প্রায়শ পাওয়া যায়না । কারন স্টেইজ একটা খোলা জায়গা, যেখানে সাউন্ড ছড়িয়ে যায় । তবে যদি প্রোপার মনিটরিং হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়ারটা পাওয়া যায় ।

৬। একটা হ্যাবিট করা খুবই ভালো, সেটা হলো স্টেইজ মনিটরে মিনিমাম সাউন্ডে গাওয়া বা বাজানোর অভ্যাস । কম সাউন্ডে সঠিক গাওয়া বা বাজানোর অভ্যাস হয়ে গেলে কোথাও গিয়ে “মনিটর পাইনা” সমস্যায় পড়তে হয়না । কারন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থাকার কারনে মনিটরিং বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে এবং তখন খুব জোরে শোনা মিউজিশিয়ানদের সমস্যা হয় ।

 ৭। স্টেজে মনিটরিং এর ব্যাপারে কিংবা নিজের যন্ত্রের সাউন্ড লেভেলের ব্যাপারে সেলফিশ না হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ । নিজের যন্ত্রটা এমন জোরে বাজানো উচিত না যাতে অন্য মিউজিশিয়ানদের নিজেদের যন্ত্র কিংবা গলা শুনতে অসুবিধা হয় ।

৮। একই স্টেজে একাধিক ব্যান্ড থাকলে সবার প্রতি সবার সম্মান প্রদর্শন খুব জরুরী একটা বিষয় এবং এটা একটা সফল টিম ওয়ার্কের বিরাট নিদর্শন । ব্যান্ড যদি সিনিয়ার এবং পপুলার হয় তাহলে জুনিওর ব্যান্ড কিংবা কম পপুলার ব্যান্ডকে আগে গাইতে দেওয়া একধরনের সেন্সিবল ডিসিশন বলে আমার কাছে মনে হয় । প্রতি ব্যান্ডের যদি ৪০ মিনিট বরাদ্দ থাকে, তাহলে এক মিনিটও বেশী বাজানো উচিত না । প্র্যাকটিস প্যাডে ঘড়ি ধরে প্র্যাকটিস করে নেওয়া ভাল এবং কয়টা গান গাওয়া সম্ভব ঐ চল্লিশ মিনিটে, সেটাও আগে ঠিক করে নেওয়া উত্তম । স্টেজে উঠে অন্য ব্যান্ডের কথা চিন্তা না করে যতক্ষণ ইচ্ছা বাজানো এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা । ফেয়ার কম্পিটিশনে চমৎকার কিছু সৃষ্টি হয় কিন্তু আনফেয়ার কম্পিটিশনে শুধুমাত্র রায়ভালরি বা শত্রুতা সৃষ্টি হয়। আগামী পর্বে আরও থাকবে।(চলবে)

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199