আবেগের লাগাম না হারানো শোভন, হারানোটা অনিরাপদ

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 17 Nov 2023

3795 বার পড়া হয়েছে

Shoes
লুৎফুল হোসেন

আমি সুরের ব্যকরণ বুঝি না। সুর থেকে সৃষ্ট আনন্দ-বেদনা বুঝি। বুঝি তার গভীরতা বা উদ্বেলতা। 'কারার ওই লৌহকপাট' গানটা শুনতেই বুকের ভিতর রক্তে জোয়ার আসে, প্রতিবাদ আর ক্ষোভের তীব্র আবেগে আমাকে ভাসিয়ে নেয় এর সুর। সেখানে হোঁচট খেলাম কিংবদন্তি সুরকার আল্লা রাখা রাহমানের সুরে গানটা শুনে। না, উনার সুর ওই লৌহকপাট ভাঙতে পারেনি, কপাটের গায়ে মিনতিটুকু রাখতে পেরেছে কেবল।

যুগের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই পালটায়। মানুষের পছন্দ পালটায়, ভাষা পালটায়, পোশাক পালটায়, খাদ্যাভ্যাস পালটায়; স্থির থাকে না কিছুই। সেই স্রোতে গান পালটায়, সুর পালটায়, গায়কী ঢঙ পালটায়। কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত পালটানো যায় না। অন্তত যে দেশের জাতীয় সঙ্গীত, সে দেশে নিশ্চয়ই নয়। অন্যত্র কেউ সেটাকে ভিন্ন কম্পোজিশনে গাইলে কার কী বলার আছে! সেই স্বাধীনতা তো অন্য দেশের মানুষের আছে।

কাজী নজরুল ইসলামের গানটা বৃটিশ বিরোধী ভারতবর্ষের গোটা জনসমষ্টির জন্য লেখা বা গাওয়া হলেও বাংলা ভাষাভাষী ছাড়া অন্যরা এর মর্মে গ্রন্থিত না-ও হতে পারে। এটা বাস্তবতা। তার ওপর গোটা ভারতে (অখণ্ড নয়, আজকের ভারতে) মোট ৭৮০ টা ভাষায় কথা বলে লোকে। হ্যাঁ, পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভাষা বৈচিত্রের দেশ ভারত। যদিও প্রধান ভাষা কেবল ২৩ টা। এর মধ্যে ইংরেজি এবং ২২টা স্থানীয় ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো নিম্নবর্ণের বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র কোনো গোত্রের ভাষা। বাংলা তালিকাভুক্ত ভাষাগুলোর একটা তবে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের রোষানলে পতিত ভাষা বাংলা। এইসব কারণে এই ভাষায় একটা গানের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কটা গোটা ভারতের সবাই টের পাবে না, এটা স্বাভাবিক। মেধাবী ও কিংবদন্তি রহমান সাহেব প্রচলিত বা পুরনো সুর থেকে সরে নিজস্ব আলাদা কিছু নির্মাণ করতে চাইবেন সেটাও স্বাভাবিক।

গানটা যেহেতু বাংলায়, তাই বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে সেই সুরটাই দীর্ঘতর সময় ধরে টিকে থাকবে, যেটা রক্তের সঙ্গে বেশি মিশে যাবে। তাই এটা ভালো না লাগলেও এটা নিয়ে শাপশাপান্ত করবার যৌক্তিকতা নেই। আমার রক্ত তো জানান দিচ্ছে যে কিংবদন্তি মেধাবী ও জনপ্রিয় এ আর রহমান এই গানের সুরটিতে মন জয় করতে পারেননি। জিততে পারেননি। হেরে গেছেন দুখু মিয়ার কাছে। এই পরাজয়টুকু এই গানে তার ব্যর্থতার নামফলক।

টাইমড আউট নিয়ে যেমন আমাদের অত উচ্চকিত হবার খুব প্রয়োজন নেই। ইতিহাসে প্রথম ঘটনা, এই তকমাটুকু বাদে এই ঘটনার শালীন ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী আউট দেয়া হয়েছে। সময়ের অংক নিয়ে মতপার্থক্যের ইতি টেনে দিয়েছেন আম্পায়াররা। তবু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনসিদ্ধ একটা কর্মকাণ্ডকে বহু নহু মানুষ কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছে। সেটা বাংলাদেশে যেমন হয়েছে বিবিধ আঙ্গিকে, শ্রীলঙ্কায়ও হয়েছে অনেক নেতিবাচক ভাবে।

সারমর্ম এটুকু সত্য প্রতিষ্ঠিত করে যে, তিরিশ গজের সীমানায় পৌঁছুতেই ম্যাথিউস দেড় মিনিট পার করে দিয়েছিলেন। হেলমেট স্ট্র‍্যাপের বিষয়টা আম্পায়ারের নজরে এনে পাল্টানোর অনুমতি চাইলে তাকে আর আউট হতে হতো না। অন্যদিকে সাকিব আল হাসান ওভার রেটে পিছিয়ে থেকে উদারতা দেখিয়ে কোনোক্রমে দলের জন্য শাস্তির কোপ ডেকে আনলে তাকে তুলোধুনা করতেন, তাকে উদার হতে বলা ৯৯ শতাংশ মানুষ। সবকিছুর শেষটা দাঁড়ায় সহিষ্ণুতা আর শালীনতার প্রসঙ্গে এসে। সবশেষে যে ওটুকুই টিকে থাকে।

এঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইমড আউটের মতো আল্লা রাখা রহমানের কারার ওই লৌহকপাট গানের সুর দুটাই অবৈধ নয়, বেআইনি নয়। আমার বা আপনার ভালো না লাগতে পারে। তাই বলে এ নিয়ে শোরগোল পাকানো, গালমন্দ বা শাপশাপান্ত করাটাও শোভন নয়। আমাদের আবেগ লাগামছাড়া হয়ে বেপরোয়া গাড়ির মতো ছুটলে দুর্ঘটনা ছাড়া কী আর হবে!

আবেগের লাগাম পরিয়ে সুস্থির, নিরাপদ, শালীন ও ইতিবাচক থাকাটাই সবার শরীর ও মনের জন্য অর্থবহ এবং কাম্য। নচেৎ নেতিবাচকতা প্রশ্রয় পায় এবং অশুভ আশকারা পায়।

ছবিঃ গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199