বিশিষ্ট সাংবাদিক সাগর চৌধুরী। একদা কর্মরত ছিলেন বিবিসি’র বাংলা বিভাগে। তারও আগে কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকা এবং বার্তা সংস্থায়। একদা নানান কাজের ভিড়ে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য ইংরেজি সাবটাইটেল রচনার কাজও করেছেন। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তরুণ মজুমদার, নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালকদের সিনেমায় তিনি ছিলেন সাবটাইটেল লেখক। এখন এক ধরণের অবসর জীবন যাপন করছেন। বসবাস করেন কলকাতা শহরে। সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ কিছুটা মেরুদূর হলেও কলম থেমে যায়নি। বই লিখছেন, অনুবাদ করছেন। সাগর চৌধুরী জীবনকে দেখেছেন নানান কৌণিকে আলো ফেলে। দীর্ঘদিন বিলেতে ছিলেন। ঘুরেওবেড়িয়েছেন নানান দেশে। জীবনও তাকে দেখেছে খুব কাছে থেকে। সেই জীবনপ্রবাহের গল্প শোনাতেই প্রাণের বাংলার জন্য কলম ধরলেন সাগর চৌধুরী। প্রাণের বাংলার পাতায় এখন থেকে জীবনের গল্প বলবেন তিনি।
মায়ের কথা দুই.
আমার মায়ের বিষয়ে যে প্রসঙ্গের অবতারণা করে এই লেখাটি শুরু করেছিলাম, তা থেকে অনেকটাই দূরে সরে এেেসছি এই দীর্ঘ গৌরচন্দ্রিকার কারণে। তাই দেড় বা দুই দশক এগিয়ে যাই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থা থেকে শুরু করে আমার কাজকর্ম, বসবাস এই শহরেই, আশির দশকের মাঝামাঝি আমি বিলেতে চলে যাওয়া পর্যন্ত। মা থাকতেন বেশির ভাগ সময় আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে, উত্তর বঙ্গে, মাঝেমধ্যে দু-চার দিনের জন্য কলকাতায় আমার কাছে। ততদিনে বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, সে থাকে হায়দ্রাবাদে। এই সময়ের একটা ঘটনার কথা বলি।
মা বেড়াতে গেছেন মেয়ের বাড়িতে। সেখানে ছিলেন মাস দেড়েক। এক দিন বোন টেলিফোন করে জানালো,‘দাদা, মা-কে আজ কলকাতা ফেরার ট্রেনে তুলে দিলাম। আগামী কাল হাওড়া পৌঁছাবেন, তুমি নামিয়ে নিও।’ ট্রেন আসার সময় জেনে নিয়ে পরদিন সকালে হাওড়া স্টেশনের নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত হলাম। ট্রেন এলো, যাত্রীরা মালপত্র নিয়ে বিভিন্ন কামরা থেকে নেমে যে যার পথে বেরিয়ে গেলো, প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হয়ে গেলো, কিন্তু আমার মায়ের দেখা নেই। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে প্রত্যেকটা কামরায় উঁকি দিলাম - নাহ্, কেউ আর নেই কোনও কামরায়, গোটা ট্রেনই ফাঁকা। কী হলো ব্যাপারটা? তাহলে কি মা ট্রেনে চড়েননি আদৌ? কিন্তু বোন যে টেলিফোনে স্পষ্ট বললো, ‘মা-কে আজ কলকাতা ফেরার ট্রেনে তুলে দিলাম।’ বেশ চিন্তিত হয়েই বাড়ি ফিরে এলাম, আমার তিন তলার ফ্ল্যাটে ঢুকেই হায়দ্রাবাদে বোনকে এস্টিডি কল করলাম , ‘মা তো ট্রেন থেকে নামলোই না, স্টেশনে কোত্থাও খুঁজে পেলাম না।’ বোন যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, ‘সে কী! আমি নিজে ট্রেনে তুলে দিয়েছি। আমার বরও সঙ্গে ছিলো। কোথায় গেলো তাহলে?’ কোনও উত্তর খুঁজে না পেয়ে কেবল বললাম,‘দেখছি।’
একজন প্রতিবেশীকে ব্যাপারটা খুলে বলতে তিনি থানায় একটা মিসিং ডায়েরী করিয়ে রাখার পরামর্শ দিলেন। তাই করলাম, তারপর উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষায় কেটে গেলো সারা দিন, সারা রাতও। কোনও খবর নেই পুলিশের কাছ থেকেও। সারা রাত নির্ঘুম কাটানোর পর ভোরের দিকে একটু ঝিমুনি এসেছিলো, হঠাৎ সজোরে সামনের দরজার কড়া নাড়ার শব্দে চমকে উঠে বসলাম, নিশ্চয় পুলিশ! কী দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে কে জানে। প্রায় দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখি ,সামনে দাঁড়িয়ে মা! কাঁধে ঝোলানো মাঝারি আকারের একটা ব্যাগ, দিব্যি সুস্থ চেহারা, চোখমুখের ভাব নির্লিপ্ত। আমার মুখে দিকে তাকিয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক গলাতেই বললেন,‘নিচে রাস্তায় ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে আমার স্যুটকেসটা নিয়ে আয়।’ আমার পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলেন তিনি। হতভম্ব আমি টেবিলের ড্রয়্যার থেকে পার্সটা বার করে নিচে গিয়ে ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে তিন তলায় ফিরে এলাম। ততক্ষণে মা বেশ গুছিয়ে বসেছেন খাটের উপরে। নির্বিকার গলায় বললেন: ‘তোর কােেজর লোক কখন আসে? চা-টা খেতে হবে তো।’ পাড়ারই যে বয়স্কা মহিলা আমার দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজ করে দেন তাঁর আসার সময় হয়ে গেছে প্রায়। মাকে বললাম,‘এসে যাবে একটু পরেই। তার আগে চা আমিই করছি।’ তবে তারও আগে যে কাজটা করলাম তা হলো থানায় ফোন করে জানিয়ে দেওয়া যে আমার মা ফিরে এসেছেন, আপাতসুস্থ দেহেই।
প্রায় চব্বিশ ঘন্টার জন্য মায়ের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার কাহিনী শুনলাম খানিক বাদে, তাঁর হাতে চায়ের পেয়ালা ধরিয়ে দেওয়ার পর। মায়ের নিজের মুখেই শোনা যাক, যদিও মা এসব কিছু বলেছিলেন তাঁর নিজস্ব ভঙ্গীতে, থেমে থেমে, এলোমেলোভাবে। আমি গুছিয়ে লিখছি যেমন যেমন মনে পড়ছে।
“খুকু আর জামাই তো আমাকে ট্রেনে তুলে দিলো সন্ধ্যেবেলা। নিচের বার্থে বিছানা পেতে দিয়ে ওরা নেমে গেলো। রাতের খাবার সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিলো খুকু। ঘন্টাখানেক পরে খেয়ে নিয়ে আমি শুয়ে পড়লাম। রাতে ঘুম হলো ভালোই। ভোরবেলা যখন ঘুম ভাঙলো তখন ট্রেন একটা স্টেশনে দাঁড়িয়ে। জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে একজন চা-ওলাকে ডাকলাম। তার হাত থেকে চায়ের ভাঁড় নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কোন্ স্টেশন?’ সে বললো, ‘ওয়ালটেয়ার, মাইজি।’
“ওয়ালটেয়ার? ওয়ালটেয়ারের সমুদ্র তো শুনেছি অপূর্ব সুন্দর! আমাকে দেখতেই হবে। পাশেই রাখা ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে আর বার্থের নিচে গুঁজে রাখা স্যুটকেসটা টেনে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম, ট্রেন ছেড়েও দিলো। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে স্টেশনের অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কলকাতা যাওয়ার পরের ট্রেন কখন। উত্তর পেলাম, রাত দশটায়। যাত্রীদের মালপত্র রাখার কাউন্টারে সাড়ে-তিন টাকা জমা দিয়ে স্যুটকেসটা সেখানে রেখে স্টেশন থেকে বেরিয়ে একজনের কাছ থেকে সমুদ্রের কাছে যাওয়ার পথ জেনে নিলাম, তারপর ঐ পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে স্যুটকেসটা স্টেশনে জমা রেখে এসেছিলাম! তবে খুব বেশি হাঁটতে হলো না, মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সমুদ্রের ধারে। সত্যিই অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য! মন ভরে গেলো। বালির ওপর বসে কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিলাম, তারপর আবার সামনের দিকে কয়েক মিনিট এগোনোর পর চোখে পড়লো খানিক দূরে একটা ছোট মন্দিরের মতো। কাছে গিয়ে দেখি সত্যিই মন্দির একটা, ভেতরে কালী মূর্তি দেখা যাচ্ছে। সামনের এক ফালি উঠোনে গোটা দুই জবা আর কয়েকটা অন্য ফুলের গাছ, এক পাশে একটা কূয়ো আর মন্দিরের পাশে লাল টালির চাল দেওয়া একটা ঘর। দাঁড়িয়ে চার দিকে তাকাচ্ছি, ঐ ঘরটা থেকে একটি বউ বেরিয়ে এসে আমার দিকে চোখ পড়ায় কিছুটা অবাক হয়ে কাছে এগিয়ে এলো,‘আপনি কোথা থেকে এলেন এখানে, মাসীমা?’ বাংলাতেই প্রশ্ন করলো সে, নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে যে আমিও বাঙালি।
স্টেশন থেকে। ট্রেনে কলকাতা যাচ্ছিলাম, ওয়ালটেয়ারের সমুদ্র দেখার লোভে নেমে পড়েছি একটু আগে।’
‘ও মা, কী আশ্চর্য! এমন করে নাকি কেউ। আসুন না, ভেতরে আসুন।’
“উঠোন পেরিয়ে কূয়োর দিকে পা বাড়িয়ে আমি বললাম: ‘একটু মুখহাত ধুয়ে নিই।’
‘নিশ্চয়, মাসীমা। আমি জল তুলে দিচ্ছি।’
“মুখেচোখে বউটির তুলে দেওয়া জলের ঝাপটা দিয়ে বেশ আরাম বোধ হলো। ব্যাগ থেকে ছোট তোয়ালেটা বার করে মুখহাত মুছে নিলাম। মন্দিরের বারান্দার এক ধারে বসে বউটিকে জিজ্ঞেস করলাম: ‘এখানেই থাকো?’
‘হ্যাঁ, মাসীমা। আমার স্বামী এই মন্দিরের পুজুরি, বর্ধমান থেকে আমাদের নিয়ে এসেছে এখানকার বাঙালিরা, তা প্রায় চার বছর হলো।’
‘কেমন লাগছে এখানে?’
‘ভালোই তো। পুজোর কাজ তো তেমন ভারী কিছু নয়। এই মন্দির ছাড়াও আরো কয়েকটা জায়গায় পুজো করে ও। সেই কাজেই বেরিয়েছে, ফিরতে বেলা গড়িয়ে যাবে। আপনি একটু কিছু মুখে দিন’
“উঠে গিয়ে একটা ছোট্ট থালায় দুটো পেঁড়ার মতো মিষ্টি আর কয়েক টুকরো ফল নিয়ে ফিরে এলো বউটি: ‘খান মাসীমা, মায়ের প্রসাদ।’
“খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম: ‘এখানে একটা রামকৃষ্ণ মিশন আছে না?’
‘আছে তো। বেশ বড় মন্দির। খুব দুরে নয় এখান থেকে। যাবেন?’
‘যাবো তো বটেই। দেখতেই তো এসেছি, দেখে যাই যা যা পারি।’
“ঘন্টাখানিক বউটির সঙ্গে গল্প করে ওর দেখানো পথে রওনা হলাম। রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছে দেখি সত্যিই বড় আর সুন্দর মন্দির, অনেকটা জায়গা জুড়ে, অতিথিশালাও রয়েছে। কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে মন্দিরের বারান্দায় ওঠার পর আমাকে দেখে একজন গেরুয়াধারী স্বামীজি এগিয়ে এলেন। তিনিও নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন আমি বাঙালি, কারণ মৃদু হেসে বাংলাতেই প্রশ্ন করলেন: ‘কোথা থেকে আসছেন?’ “তাঁকেও বললাম কীভাবে আমি ভোরবেলা কলকাতাগামী ট্রেন থেকে নেমে পড়েছি ওয়ালটেয়ারের সমুদ্র দেখার লোভে। রাত দশটার ট্রেন ধরে আবার রওনা হয়ে যাবো। আমার কথা শুনে হয়তো সামান্য অবাক হলেন স্বামীজি, তবে বললেন: ‘বেশ করেছেন। দুপুরে এখানেই প্রসাদ পাবেন, তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে, সন্ধ্যারতি দেখে স্টেশনে চলে যাবেন।’
“ভালোই হলো, সারা দিন টো-টো করে ঘুরবো কোথায়? মন্দিরের পাশে শ্বেতপাথরে বাঁধানো প্রশস্ত বারান্দায় বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম সকলের ব্যস্তসমস্ত হয়ে নানা কাজে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা, দর্শনার্থীদের আনাগোনা। দুপুরে প্রসাদ পাওয়ার সময় হলে সুস্বাদু অন্নভোগ তৃপ্তি করেই খেলাম, তারপর একটা নিরিবিলি জায়গা খুঁজে নিয়ে শীতল মেঝেতে ব্যাগটায় মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে রইলাম বিকাল পর্যন্ত। আমার মতো আরও দু-চারজনকেও তাই করতে দেখলাম। সূর্য ডোবার পর মন্দিরের আলো জ্বলে উঠলে কাঁসরঘন্টা বাজিয়ে সন্ধ্যারতি হলো, তারপর উপাসনা। এবার আমার স্টেশনের দিকে পা বাড়ানোর সময়।”
স্টেশনে পৌঁছে মালপত্র রাখার কাউন্টারে রসিদ দেখিয়ে স্যুটকেস উদ্ধার করে প্ল্যাটফর্মের এক ধারে একটা বেঞ্চে বসে রইলেন মা। এখনও কম করে তিন ঘন্টার অপেক্ষা। বসে বসে একটু ঝিমিয়ে পড়েছিলেন, হুঁশ ফিরলো ঐ প্ল্যাটফর্মে একটা ট্রেন এসে থামার আওয়াজে। যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ট্রেন থেকে নেমে বাইরে যাওয়ার গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, অনেকে বিভিন্ন কামরায় ওঠার জন্য ঠেলাঠেলি করছে। হৈ-হট্টগোল চারদিকে। তাদের মাঝে চুপ করে বেঞ্চের উপরে বসে মা।
‘একী! আপনি এখানে এমনভাবে বসে আছেন কেন?’ হঠাৎ অপরিচিত গলায় প্রশ্নটা শুনে মা চমকে মুখ তুললেন। পাশে দাঁড়িয়ে স্যুটকেস হাতে একটি যুবক তাঁকে লক্ষ্য করেই প্রশ্নটা করেছে। তার দু-পা পেছনে
দাঁড়িয়ে রঙিন শাড়ি পরা একটি মেয়ে, বোঝাই যাচ্ছে ঐ যুবকটিরই স্ত্রী।
‘দেখো কা-!’ মা ভাবলেন। ‘এরাও বুঝে ফেলেছে যে আমি বাঙালি।’ ছেলেটির প্রশ্নের উত্তরে বললেন: ‘রাত দশটার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি, বাবা। কলকাতা যাবো।’
‘রাত দশটার কলকাতার ট্রেন! আপনার টিকিটটা দেখাবেন একবার?’
ব্যাগ হাতড়ে বটুয়া থেকে টিকিট বের করলেন মা। সেটা হাতে নিয়ে দেখে ছেলেটি অবাক হয়ে বললো: ‘এটা তো এই ট্রেনের টিকিট নয়! অন্য ট্রেনের, যেটা সকালবেলা চলে গেছ্।
‘তাহলে কি এই ট্রেনের জন্য আবার টিকিট কাটতে হবে?’
‘কাটলেও এই ট্রেনে আপনাকে চড়তে দেবে না। রিজার্ভেশন ছাড়া এটাতে চড়া যায় না, আর এখন তো পাবেনই না রিজার্ভেশন। সকালের ট্রেনেই গেলেন না কেন, টিকিট যখন ছিলো?’
এবারে মা আনুপূর্বিক খুলে বললেন কীভাবে তিনি ওয়ালটেয়ারের সমুদ্র দেখার লোভ সামলাতে না পেরে সকালের ট্রেন থেকে নেমে পড়েছিলেন। শুনে ছেলেটি অবিশ্বাসের চোখে কয়েক সেকেন্ড মায়ের মুখের দিকে চেয়ে রইলো, তার স্ত্রীও, তারপর একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে যুবকটি মাথা নেড়ে বললো,‘ভাবা যায় না!’
সামান্য বিচলিতভাবে মা বললেন, ‘তাহলে কি আজ রাতের ট্রেনে কলকাতা রওনা হতে পারবো না? আমার ছেলে তো নিশ্চয় খুব চিন্তা করছে আজ যাইনি বলে। কালও যদি না পৌঁছাই তাহলে তো ও আরো দুশ্চিন্তা করবে।’
‘তা তো করবেই। কাজটা আপনি ভালো করেননি, মাসীমা। খুবই গোলমাল পাকিয়েছেন।’
মা করুণ মুখে কেবল বললেন, ‘তাই তো মনে হচ্ছে এখন।’
যুবকটি ভুরু কুঁচকে কিছু একটা চিন্তা করলো কয়েক সেকেন্ড, তারপর বললো, ‘দেখছি। কিছু একটা তো করতেই হবে। এখানকার স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে আমার খাতির আছে, প্রায়ই আসি তো এখানে কোম্পানীর কাজে।’ পিছন ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে মিনিটখানেক কথা বলে আবার মায়ের দিকে ফিরলো সে, ‘মাসীমা, শুনুন, আপনি এখানেই বসে থাকুন, একদম নড়বেন না। আমি বউকে হোটেলে রেখে আসতে যাচ্ছি, এই সামনেই। তারপর ফিরে এসে আপনার ব্যবস্থা করবো।’
স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ছেলেটি। মা বসে রইলেন চুপচাপ। আধ ঘন্টার মধ্যেই ছেলেটি ফিরে এলো, ‘এসে গিয়েছি, মাসীমা। স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে কথা বলছি এবার। সকালের ট্রেনের টিকিটটা দিন।’ টিকিট হাতে নিয়ে অফিসের দিকে চলে গেলো সে। পনেরো-কুড়ি মিনিট পরেই ফিরে এলো, সঙ্গে রেইলওয়ের কর্মীদের কালো কোট পরা এক ভদ্রলোক, মুখে মৃদু হাসি, হাতে একটা কাগজ। মা-কে উদ্দেশ্য করে যুবকটি বললো, ‘ইনিই স্টেশনমাস্টার, আর এটা আপনার রিজার্ভেশন। আর কোন সমস্যা নেই এই ট্রেনেই কলকাতা যাওয়ার।’
স্টেশনমাস্টার মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা নমস্কারের ভঙ্গী করে হিন্দিতে বললেন, ‘আমার দোস্ত্ সব বলেছে আমাকে। এমন রিস্ক নেওয়া ঠিক হয়নি আপনার।’ রিজার্ভেশনের কাগজটা মায়ের হাতে দিয়ে ভদ্রলোক বললেন,‘আপনি বসুন। ট্রেন আসার সময় হলে আমি এসে আপনাকে ঠিক কামরায় উঠিয়ে দেবো।’ ছেলেটির হাতে হাত মিলিয়ে স্টেশনমাস্টার তাঁর অফিসের দিকে চলে গেলেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে ভরসা দেওয়ার ভঙ্গীতে ছেলেটি বললো, ‘আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে বসুন এবার। কাল সকালেই কলকাতা পৌঁছে যাবেন।’ পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে মায়ের হাতে দিয়ে বললো, ‘এই ঠিকানায় আমাকে একটা পোস্টকার্ড ছেড়ে দিতে ভুলবেন না কিন্তু।....আমি তাহলে যাই এখন?’
‘হ্যাঁ, বাবা। এসো। কী উপকার যে করলে....’
‘কিছু না, মাসীমা। আপনি তো আমার মায়ের মতোই।’ হাত নেড়ে চলে গেলো ছেলেটি। মা বসে রইলেন ট্রেন আসার অপেক্ষায়। পরের দিন সকালের ঘটনা তো আগেই বলেছি। (চলবে. . . .)
ছবিঃ গুগল
এস.এম. সুলতান : আমাদের চিত্রশিল্প জগতের আদমসুরত
23 Jan 2025
5175 বার পড়া হয়েছে
রাজনীতির টেবিলে…
16 Jan 2025
4350 বার পড়া হয়েছে
সঞ্জীব চৌধুরীকে স্মরণ: ছিলো গান ছিলো প্রাণ
2 Jan 2025
5135 বার পড়া হয়েছে
নতুন বোতলে পুরনো তারিখ
2 Jan 2025
3410 বার পড়া হয়েছে
সৈয়দ শামসুল হক ৮৯ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা
27 Dec 2024
4235 বার পড়া হয়েছে
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়…
19 Dec 2024
3860 বার পড়া হয়েছে
চলে গেলেন আত্মিক দু‘জন মানুষ
13 Dec 2024
2685 বার পড়া হয়েছে
ডিসেম্বরের সেই দিনরাত্রিগুলি
5 Dec 2024
2650 বার পড়া হয়েছে
কোথায় যাচ্ছেন এলোমেলো বাবু
21 Nov 2024
2895 বার পড়া হয়েছে
শীতের চিঠির দ্বিতীয়াংশ
21 Nov 2024
2640 বার পড়া হয়েছে
শীতের চিঠির প্রথমাংশ
14 Nov 2024
2050 বার পড়া হয়েছে
তোমরা ফেলে দাও আমি তুলে রাখি
14 Nov 2024
2290 বার পড়া হয়েছে
বিদায়ী অভিবাদন, রাজনীতির শুদ্ধ ব্যক্তিত্ব অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী
17 Oct 2024
2080 বার পড়া হয়েছে
পূজার ছুটিতে…
10 Oct 2024
2050 বার পড়া হয়েছে
অর্থহীন ভাবনার ভেতর দিয়েই কখনও কখনও বেরিয়ে আসতো মূল ভাবনা
27 Jun 2024
2610 বার পড়া হয়েছে
ষাটের পথে ষাটের স্মৃতি …
27 Jun 2024
2460 বার পড়া হয়েছে
প্রফেশনাল জেলাসি আর অহংকার এক বিষয় নয়…
30 May 2024
2745 বার পড়া হয়েছে
সুর করা…
3 May 2024
3945 বার পড়া হয়েছে
আমার বৃক্ষের…
25 Apr 2024
5095 বার পড়া হয়েছে
ব্যান্ড করার ফর্মুলা
14 Mar 2024
2940 বার পড়া হয়েছে
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
29 Feb 2024
3210 বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর আকাশে এক পশলা বৃষ্টি
22 Feb 2024
4815 বার পড়া হয়েছে
জন্মস্থানে লালগালিচা সংবর্ধনা পেলেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি
22 Feb 2024
2855 বার পড়া হয়েছে
আমাদের ব্যান্ডের গান কি সম্পূর্ণ ওয়েস্টার্ন
8 Feb 2024
2935 বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর আকাশে এক পশলা বৃষ্টি
8 Feb 2024
3135 বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর আকাশে এক পশলা বৃষ্টি
1 Feb 2024
3020 বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর আকাশে এক পশলা বৃষ্টি
25 Jan 2024
4185 বার পড়া হয়েছে
প্রিয় আজম ভাই...
18 Jan 2024
3615 বার পড়া হয়েছে
সেই এক ট্রেনের গল্প
18 Jan 2024
2765 বার পড়া হয়েছে
স্টেজ পারফর্মেন্সর জন্য প্রযোজনীয় কিছু কথা…২
11 Jan 2024
2845 বার পড়া হয়েছে
অন্তরালে অসাধারণ রাশিদ খান…
11 Jan 2024
2280 বার পড়া হয়েছে
স্টেজ পারফর্মেন্সর জন্য প্রযোজনীয় কিছু কথা…
4 Jan 2024
3110 বার পড়া হয়েছে
বিকেলে বউ বাজার
28 Dec 2023
4355 বার পড়া হয়েছে
মানুষ ডাহুকও বটে
16 Dec 2023
2085 বার পড়া হয়েছে
বিজয়ের মাসে পথে শোনা কথা
13 Dec 2023
3975 বার পড়া হয়েছে
জীবন যেখানে যেমন...
7 Dec 2023
4510 বার পড়া হয়েছে
আবেগের লাগাম না হারানো শোভন, হারানোটা অনিরাপদ
17 Nov 2023
4400 বার পড়া হয়েছে
পাতা-ঝরার দিনগুলো
19 Oct 2023
6065 বার পড়া হয়েছে
একজন সোহান ভাই…
14 Sept 2023
4955 বার পড়া হয়েছে
চিঠিতে জানাবেন মোহন ভাই
1 Jun 2023
8905 বার পড়া হয়েছে
ভারতের ডুয়ার্সে বার্ডিং…
20 Apr 2023
4155 বার পড়া হয়েছে
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের আতিথেয়তা ও ভোজন
13 Apr 2023
5050 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৩৪
10 Nov 2022
3035 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৩৩
27 Oct 2022
2585 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৩২
13 Oct 2022
2710 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৩১
29 Sept 2022
2395 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৩০
22 Sept 2022
2400 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২৯
15 Sept 2022
2270 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২৮
8 Sept 2022
2080 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২৭
1 Sept 2022
2815 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২৬
25 Aug 2022
3090 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২৫
18 Aug 2022
2235 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২৪
7 Jul 2022
2085 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২৩
23 Jun 2022
2760 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২২
16 Jun 2022
2220 বার পড়া হয়েছে
শব্দ করে পড়ার বৈচিত্রময় গুরুত্ব বিশ্বকে বুঝতে হবে
12 Jun 2022
1700 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২১
9 Jun 2022
2015 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২০
12 May 2022
2220 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১৯
21 Apr 2022
2190 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১৮
15 Apr 2022
2185 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১৭
7 Apr 2022
2430 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১৬
31 Mar 2022
1950 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১৫
24 Mar 2022
1975 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১৪
17 Mar 2022
2675 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১৩
3 Mar 2022
2125 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১২
24 Feb 2022
2110 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১১
17 Feb 2022
2135 বার পড়া হয়েছে
আমার মুক্তি এই আকাশে
10 Feb 2022
2720 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১০
3 Feb 2022
2265 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৯
30 Dec 2021
2015 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৮
23 Dec 2021
1955 বার পড়া হয়েছে
দুলছে হাওয়ায়
9 Dec 2021
2155 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৭
9 Dec 2021
2230 বার পড়া হয়েছে
আঁধার রাতের জাহাজ
2 Dec 2021
2530 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৬
2 Dec 2021
2085 বার পড়া হয়েছে
কান্না- হাসির দোল-দোলানো
25 Nov 2021
2835 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৫
25 Nov 2021
2140 বার পড়া হয়েছে
কাঠের সেই উটটি
18 Nov 2021
2260 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৪
18 Nov 2021
3130 বার পড়া হয়েছে
নাম না জানা মেয়েটি
11 Nov 2021
1955 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ৩
11 Nov 2021
1945 বার পড়া হয়েছে
সবারে আমি নমি
4 Nov 2021
1835 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ২
4 Nov 2021
2825 বার পড়া হয়েছে
ফেলেই দিলে
28 Oct 2021
1900 বার পড়া হয়েছে
ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তন ১
28 Oct 2021
2455 বার পড়া হয়েছে
জীবন জীবনেরই জন্যে
21 Oct 2021
2020 বার পড়া হয়েছে
তার আর পর নেই
7 Oct 2021
1895 বার পড়া হয়েছে
মরচে ধরা টর্চ
23 Sept 2021
1945 বার পড়া হয়েছে
পাতা-ঝরার দিন
16 Sept 2021
2800 বার পড়া হয়েছে
চমকে উঠলাম – ভেতরটা নাড়িয়ে দিল দৃশ্যটা
9 Sept 2021
2080 বার পড়া হয়েছে
আলো-আঁধারির আলেখ্য
2 Sept 2021
1605 বার পড়া হয়েছে
একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে
30 Aug 2021
2035 বার পড়া হয়েছে
আছে-নাই এর আলেখ্য
26 Aug 2021
1625 বার পড়া হয়েছে
জীবন-ছোঁয়া মেয়েটি
12 Aug 2021
2085 বার পড়া হয়েছে
যেতে তো হবেই
5 Aug 2021
2130 বার পড়া হয়েছে
সুতো
29 Jul 2021
1985 বার পড়া হয়েছে
মানুষের খোলস
15 Jul 2021
2085 বার পড়া হয়েছে
মনে আছে তো
8 Jul 2021
1850 বার পড়া হয়েছে
শেকড়ের সন্ধানে
1 Jul 2021
1635 বার পড়া হয়েছে
নীড়ে ফেরা পাখী
17 Jun 2021
1740 বার পড়া হয়েছে
কনে দেখা আলো
10 Jun 2021
2005 বার পড়া হয়েছে
দ্বীপের সেই সব মানুষেরা
3 Jun 2021
2000 বার পড়া হয়েছে
যে দ্বীপের বয়স চার’শো বছর
20 May 2021
1805 বার পড়া হয়েছে
অচেনা দ্বীপের পথযাত্রা
6 May 2021
2030 বার পড়া হয়েছে
আমার প্রতিবাদের ভাষা...
8 Oct 2020
3315 বার পড়া হয়েছে
আয় আয় চাঁদ মামা...
23 Jul 2020
3455 বার পড়া হয়েছে
করোনাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য ...
10 May 2020
3350 বার পড়া হয়েছে
দ্বিতীয় সুবীর নন্দী আর পাবে না বাংলাদেশ
7 May 2020
1810 বার পড়া হয়েছে
বাড়ি বদলের আগুনে মিথিলা…
7 Nov 2019
1995 বার পড়া হয়েছে
বিচার চাই…
11 Apr 2019
2025 বার পড়া হয়েছে
মনখারাপের সঙ্গে আড়ি…
25 Dec 2018
2160 বার পড়া হয়েছে
আবার শিব্রাম চক্কোত্তি
20 Dec 2018
3700 বার পড়া হয়েছে
সন্দেশ ১০০
6 Dec 2018
4555 বার পড়া হয়েছে
সেই হাসিমুখ আর দেখবো না…
22 May 2018
2040 বার পড়া হয়েছে
তিলোত্তমা ও একজন...
17 May 2018
1865 বার পড়া হয়েছে
সেটুকু বাকী জীবন মিস করবো
3 May 2018
2400 বার পড়া হয়েছে
প্রাণের মানুষ, কাছের মানুষ
23 Nov 2017
2675 বার পড়া হয়েছে
স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।
Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]
Phone: +8801818189677, +8801717256199