সৈয়দ শামসুল হক ৮৯ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 27 Dec 2024

4255 বার পড়া হয়েছে

Shoes
Shantanu
শাহরিয়ার আদনান শান্তনু 

তোমাদের ভেতর দিয়েই তো সর্বকাল 

চলে গেছে  আমার পথ, 

এবং সর্বকাল আমি দাঁড়িয়েছি আমি 

আবার নিয়েছি পথ।।।

( আমি একটু খানি দাঁড়াব।। সৈয়দ শামসুল হক)

বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে সৈয়দ শামসুল হক যে একজন প্রতিভাধর মানুষ,  তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কারণে তিনি সব্যসাচী লেখক হিসেবেই অধিক পরিচিত।

আমার তখন তরুণ বয়স। চট্টগ্রামে অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছি। ১৯৯১/৯২ সালে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা নাটক " তোরা সব জয়ধ্বনি কর"- এর পাণ্ডুলিপি অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়কে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের  মুক্তিযুদ্ধের নাটক। একজন সাধারণ মানুষ,  নাম নজরুল ইসলাম। তাকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সন্দেহ করে আটক করে পাক বাহিনী। চালায় নির্যাতন। পরে হত্যা। এই নাটকের কাহিনীটা এমন জমজমাট যে, গল্পের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্থিরচিত্র, যা স্লাইড প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখাতে হয়েছে। আবার ১৬ মি.মি. প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে "লিবারেশন ফাইটার্স" এবং "নাইন মান্থস অফ ফ্রিডম " তথ্যচিত্রের খণ্ডিত অংশ। সেই সঙ্গে ছিলো প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার অডিও ক্লিপ। সব মিলিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আমার উপর দায়িত্ব ছিলো ১৬ মি.মি. প্রজেক্টর চালানো। ঐ সময়ে ডিএফপি থেকে তথ্যচিত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। মাসখানেক মহড়ার পর নাটক মঞ্চায়ন হয়েছিলো । এমন

সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আমি

নাটক চট্টগ্রামে আর হয়নি। যে নাটকে একইসাথে স্লাইড, প্রজেক্টর মেশিনের ব্যবহার।  মনে আছে, পাঁচটি প্রদর্শনীর পর সৈয়দ শামসুল হক চট্টগ্রাম এলেন নাটক দেখতে। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা খানিকটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম। নাটক শেষে আলাপে বসলেন আমাদের নিয়ে। সবার শেষে জানতে চাইলেন, প্রজেক্টর চালিয়েছে যে - সে কোনজন? হাত তুলে বলি: হক ভাই, আমি।  উনি চেয়ারে বসা থেকে উঠে এসে হাত মিলিয়ে বললেন, "বেশ করেছো। টাইমিং-এর হেরফের ঘটেনি। " উনার কথা শুনে মনে হলো, বিশাল পাথর বুক থেকে সরে গেল। সৈয়দ শামসুল হকের "তোরা সব জয়ধ্বনি কর" নাটকটি খুব সাহসী। বিশেষ করে ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে।

১৯৯৮ সালে সৈয়দ শামসুল হকের সাথে আবারও দেখা হলো। আমি তখন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস ( বিটা) - এ কর্মরত। সেবার বিটার উদ্যোগে আয়োজন করা হয়, তৃণমূল মানুষের সাংস্কৃতিক উৎসব। সৈয়দ হক ভাই এলেন বিশেষ অতিথি হয়ে। আমার উপর দায়িত্ব ছিল সৈয়দ শামসুল হকের সাথে থাকা। চট্টগ্রামের গোল্ডেন ইন হোটেলে ছিলেন। আমিও হক ভাইয়ের সাথে। আমাদের সাথে ছিলেন মরহুম আবদুর রব ভাই। যিনি ঐ সময়ে প্রশিকা'র সাংস্কৃতিক বিভাগের সমন্বয়কারী ছিলেন। যাহোক,  সৈয়দ হকের সাথে এবার সাহস করে আলাপ করি। উনার লেখা গান, কবিতা, উপন্যাস, কাব্যনাটক, অনুবাদ - কোন বিষয়ই বাদ যায়নি। 

"বড় ভালো লোক ছিল " নামে একটি বাংলা সিনেমা নির্মিত হয়েছিল। এই সিনেমায় হক ভাইয়ের লেখা একটি গান আছে। " হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস"। আলম খানের সুরে এনড্রু কিশোর গেয়েছেন। হিট গান। আমার কাছে ঐ সময়ে অবাক লেগেছিল, বাংলা গানে "ঠুস" শব্দটা নিয়ে। কারণ, আগে কখনো শুনিনি। কেউ লেখেওনি। সৈয়দ শামসুল হক হেসেই বললেন: এক্সপেরিমেন্ট বলতে পারো। ফানুস, ঠুস, হুঁশ - গান লেখার সময়ই চলে এলো। দর্শক - শ্রোতাও তো পছন্দ করেছে। উনার কথা হচ্ছে : তুমি যে কাজই করো না কেন, তা যেন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে। তাদের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছাতে পারলে, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিকৃত হবে না।

তো, এই হলো আমার সাথে সৈয়দ শামসুল হকের মত সব্যসাচী লেখকের টুকরো স্মৃতি। উনার সাথে আলাপচারিতা পরবর্তীতে আমাকে ঋদ্ধ করেছে অনেক। সৈয়দ হক ভাইয়ের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

আজ সৈয়দ শামসুল হকের ৮৯ তম জন্ম বার্ষিকী। তাকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ভালোবাসা।

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199