একজন সোহান ভাই…

আবিদা নাসরীন কলি

সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 14 Sept 2023

4970 বার পড়া হয়েছে

Shoes

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়। এমন কথা সবাই বলেন। তবে আমি তাদের সঙ্গে একমত নই। কারণ যিনি চলে গেলেন, আমার জীবনকালে তার সঙ্গে কি আর দেখা হওয়া সম্ভব!!একেবারেই না। আর যদি পরকালের কথা বলেন সে না হয় তখন দেখা যাবে। ভাবা যাবে।আদৌ কী কেউ কাউকে চেনবো, না জানবো।তাই এতে আমি এতোটা বিশ্বাসী নই ,তা আপনারা যা-ই বলুন না কেনো।

স্ত্রীর সঙ্গে সোহানুর রহমান সোহান

গত পরশু সোহান ভাইয়ের স্ত্রী চলে গেলেন। ২৪ ঘন্টাও পেরুলো না সোহান ভাইও অসীমে মিলিয়ে গেলেন।এ আমাদের সবার জন্যই অবাক করা ঘটনা। আমিও শুনে স্থম্ভিত হয়ে বসে থাকলাম।এমনও কি হয়!!! হয়,হয়তো প্রকৃতির কৃপায় সবই সম্ভব হয়।

৯০য়ের দশকের শুরুতে সোহানুর রহমান সোহান নামটা সিনেমা প্রেমীদের মুখে মুখে ছিলো। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত ’ সোহান ভাই বাংলায় বানাচ্ছেন।চারিদিকে খবর চাউর।আর সবচেয়ে বড়ো চমক তার কল্যানে আমরা পাচ্ছি এক জোড়া নতুন মুখ।এই জোড়া মুখ সর্বকালের সব নতুন মুখেরই ইতিহাস গুড়িয়ে দিচ্ছে।চারি দিকে সালমান-মৌসুমীর নাম।সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের যেনো তর সইছিলো না।

সাংবাদিকতার সূত্রে তখন আমার বিএফডিসিতে একটু-আধটু বিচরন ছিলো। ইমনের (সালমান)সঙ্গে আমার পারিবারিক পরিচয় থাকায় শ্যুটিং ফ্লোরে আমার যাতায়াত ছিলো।তখনই সোহান ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় তা-ও ঘনিষ্ট হই ইমনের কল্যানে।এমন ভদ্র আর অমায়িক একজন মানুষ তিনি, তার পরিচয় আমি তখনই পাই। সব সময়ই পাশের চেয়ারে বসতে দিতেন।চা খাওয়াতেন। একটু-আধটু গল্প করতেন কারণ তার নজর তখন ছবি ঘিরেই।

ইমন তখন সদ্য বিবাহিত। জানতেন সোহান ভাই আর জানতাম আমি। তবে ইমনের কথা, ‘আপা ভুলেও একথা কোথাও উচ্চারন করোনা।এ কথাটা  তোমার মাধ্যমেই আমি সবাইকে জানান দেবো’। সত্যি ইমন ইমনের কথা রেখেছিলো।

ছবিটা রিলিজ হওয়ার পর একদিন সোহান ভাইয়ের মোহাম্মদপুরের বাসায় আমি আমার ছোট বোনকে নিয়ে তার একটা ইন্টারভিউ নিতে যাই। অনেক কথা হয়। খাওয়া-দাওয়া হয়।তবে তখন সোহান ভাইয়ের বাইরে যাওয়ার তাড়া ছিলো। ভাইয়ের তখন গাড়ি ছিলোনা।আমরাও রিক্সা করে গিয়েছিলাম।এবার সোহান ভাই জানতে চান আমরা কোথায় যাবো? বললাম,উত্তর ধানমণ্ডি।সোহান ভাই একটা বেবীট্যাক্সি ডাকলেন আর আমাদেরও উঠতে বললেন। আমরা তার সঙ্গে উঠে বসলাম উনি তখন আমাদের গন্তব্যে নামিয়ে দিয়ে উনার গন্তব্যের উদ্দেশে চলে গেলেন। এমনই একজন মানুষ ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান।তারপর এ মানুষটার সঙ্গে কতো  জায়গায় কতোবার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে কম তবে কুশল বিনিময়ে তিনি কখনও কার্পন্য করেন নি।

গতকাল তার চলে যাওয়ার সংবাদটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে মন চাইছিলো না। মনে মনে ভাবছিলাম, এ যেনো মিথ্যে সংবাদ হয়। কিন্তু তা হলো না। সত্যি আমি এখনও মানতে পারছি না।

আজ জানতে পারলাম উত্তরাতেই বহুদিন ধরে সোহান ভাইয়ের আবাস ছিলো। এত বছরে আমার তা-ও জানা ছিলো না। না হলে হয়তো বাড়ি বয়ে গিয়ে আরো অনেক ভাবে উনাকে জানতে পারতাম।আসলে যান্ত্রিক এই জীবনে আমরা পাশের বাড়ির মানুষের খবরও ভালো করে নিতে পারি না। আর এলাকার মানুষ তো দূরতক। তাই বলবো সোহান ভাই আপনি আজ সবকিছুর ওপারে চলে গেলেও সম্ভব হলে ছোট বোনটাকে ক্ষমা করে দেবেন।অনন্তে ভালো থাকবেন।হয়তোবা কখনো দেখা হয়ে যেতে পারে।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199