বিজয়ের মাসে পথে শোনা কথা

আবিদা নাসরীন কলি

সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 13 Dec 2023

3985 বার পড়া হয়েছে

Shoes

আমাদের নিজেদের বলতে মনে হয় আত্মগরিমা ছাড়া আর কিছুই নেই।চলতে ফিরতে এ বিষয়টাই আমরা বেশী করে প্র্যাকটিস করি।তাই যা ইচ্ছে তা-ই করার প্রবণতা আমাদের অনেক  বেশী।নিজেকে জাহির করাতেই আমাদের সব আনন্দ। তাতে অন্যের কিছু যায় আসে কিনা তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথাও নেই। এসব নিয়ে যারা ভাবে তারা হয়তো অন্যদের চোখে বেশ খানিকটা বোকা।

শীতকাল আমাদের বিয়ের মওসুম।এরই মধ্যে ভারচুয়ালি অনেক বিয়ের কার্ড জমা হয়েছে। সবই বন্ধু-বান্ধবের ছেলে- মেয়ের বিয়ের দাওয়াত।মিস করার উপায় নেই।ছেলে-মেয়েদেরও ডাক,` আন্টি আসবেন কিন্তু।‘ এক বন্ধুর মেয়ের বিয়ের গিফট কিনতে সেদিন উত্তরা আড়ং-এ যাই।গ্রাউন্ড ফ্লোর ঘুরেই আমার বাজেটমতো একটা পছন্দসই উপহার পেয়ে যাই। বেঁচে যাই, আমাকে ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরতে হলো না। বিল চুকিয়ে উপহার সুদৃশ্য মোড়কে আচ্ছাদিত করানোর জন্য যেতে হবে চতুর্থ তলায়। লিফটের সামনে লাইন। বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ সামনে দাঁড়ানো। আমি লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়াই।আমার সামনে মাঝ বয়েসী দু‘জন মহিলা দাঁড়িয়ে। উনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলায় ব্যস্ত। কোনো দিকেই তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। লিফট এলে আমরা সবাই পা বাড়াই।লিফটম্যান জানতে চায় আমরা কে কোন ফ্লোরে যাবো? ঠিক তখনই  সেই দু‘জন মহিলার একজন বলে ওঠেন, আমরা থালা-বাসনের ফ্লোরে যাবো। কথাটা শুনে আমি হতভম্ব। চোখ চলে যায় তাদের দিকে।আমার তাকানো দেখে বুঝি, দু‘জনেই কিছুটা বিরক্ত হয়েছেন সহযাত্রীর বিষ্ময় প্রকাশে। একজন হঠাৎ আমার দিকে কটাক্ষ করে বলেন,`ডিসেম্বর মাস, আমরা বাংলায়-ই বলবো,ইংরেজি  ভাষায় কোনো কিছু বলবো না!‘এবার সঙ্গের মহিলা আরও একধাপ গলা চড়িয়ে বলেন,` বিজয়ের মাসে আমরা যা ইচ্ছে তা-ই বলবো।‘এবার অপর মহিলা তাল মেলান। `এখন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া খুব সহজ একটা পাকিস্তানী মুরগি জবাই করেই মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নেয়া যায়।‘ তাদের এমন কথা শুনে কিছু একটা উত্তর হয়তো দেয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু বলতে পারি না।কারণ ডিসেম্বর মাসে তারা যদি যা ইচ্ছে তা-ই বলতে পারেন তাহলে যা ইচ্ছে তা করতেও  তারা পিছপা হবেন না।অগত্যা চুপ করেই থাকলাম।অন্য সহযাত্রীদের মনের অবস্থা কী তা দেখার জন্যও কারো দিকে তাকালাম না। তবে আমার মতো তারাও চুপ।মনে মনে ভাবলাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন কটাক্ষ এখন অনেকেই হয়তো করেন।জানিনা তারা কেমন পরিবার এবং কেমন পরিবেশে বড়ো হয়েছেন!সেদিন সারাটা সময় আমার মন খারাপ লেগেছে।জানিনা ভবিষ্যতে আমাদের আরও কতো কী দেখতে হবে। কতো কী শুনতে হবে।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199