বিচার চাই…

আবিদা নাসরীন কলি

সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 11 Apr 2019

2035 বার পড়া হয়েছে

Shoes

তার শরীরের অশি ভাগ পুড়ে গিয়েছিলো। শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিলো নানা ধরণের সংক্রমণ, অচল হয়ে আসছিলো হার্ট, কিডনি, ফুসফুস। কিন্তু নুসরাত বাঁচতে চেয়েছিলো, লড়াই করতে চেয়েছিলো, শাস্তি দিতে চেয়েছিলো অপরাধীদের। নুসরাত লড়াই শেষ করতে পারলো না। ছোট্ট একটি প্রাণ ফুল হয়ে ফুটে উঠতে পারলো না তার নিজের আবহে। কোনো বৃষ্টির দুপুর তার ভালো লেগেছিলো? শীত আসি আসি দিনে ভালোলাগায় ভরে উঠতো তার কিশোরী মন? কাচের চুড়ি ভালোবাসতো মেয়েটি? বই পড়তে ভালোবাসতো? গান গাইতে? না, এসব প্রশ্নের উত্তর জানা হবে না কারো কোনোদিন। নুসরাতের সমস্ত ভালোলাগা আর স্বপ্ন তার আশি ভাগ পুড়ে যাওয়া শরীরের মতোই ছাই হয়ে গেছে।

বহু বহু বছর আগে মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছিলো আগুনের ব্যবহার। মানুষের সভ্য হয়ে ওঠার ধারাবাহিক ইতিহাসের পাতায় নতুন করে লেখা হয়েছিলো এগিয়ে যাওয়ার কাহিনি। সে আগুন এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে কি লজ্জায় তার দহন ক্ষমতাকে গুটিয়ে নিতে পারবে? আমরা কি মুখ ঢাকতে পারবো? একটি সমাজের ভেতরে জমে ওঠা অন্ধকারের সংস্কৃতি, যথাযথ শিক্ষার অভাব আর অবক্ষয়ের কাঁধে সব দোষ চাপিয়ে আড়াল করতে পারবো নিজেদের?

মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নীপিড়নের অভিযোগ তুলে মামলা করেছিলো ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাতের পরিবার। মামলা তুলে না-নেয়ায় আগুনে পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে নুসরাতকে। প্রকাশ্য দিবালোকে ঢালা হয়েছে দাহ্যবস্তু নুসরাতের শরীরে, জ্বলে উঠেছে আগুন অপরাধের প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করার উল্লাসে। অপরাধীদের উৎসব মঞ্চে নিতান্তই সামান্য ঘটনা। অপরাধ করা, অপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলতে সামান্য খুন নীপিড়ক আর খুনীদের কাছে চা খেয়ে ঠোঁট মুছে ফেলার মতোই খুব সাধারণ ঘটনা; অন্তত: তারা তো সেভাবেই ভেবেছে। সামাজিক প্রভাবের উল্লাস, রাজনৈতিক ক্ষমতার গর্ব আর নৈতিকতার তলানীতে বসে তাদের উন্মত্ততা আঁধারকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।আমরা সবাই দর্শকের আসনে স্থির।

এই লেখা এখানেই থেমে যাওয়া উচিত। কী হয় এরকম শব্দের পর শব্দ জোড়া দিয়ে? নুসরাতের হত্যাচেষ্টা এবং তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা স্ট্যাটাস দিচ্ছি, প্রতিবাদে মুখর হচ্ছি, টেলিভিশনের পর্দায় অনর্গল কথা বলে যাচ্ছি। কিন্তু তারপর? তারপর এই কলংকজনক অধ্যায়ের উপর নামবে স্থায়ী যতিচিহ্নের পর্দা। সামনে পহেলা বৈশাখ। উৎসবের রঙ তো পুড়ে যাওয়া প্রাণহীন দেহকে ধারণ করে না।

কত ইস্যুতে এই দেশে হরতাল হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জীবনের চাকা। অবরোধে অচল হয়ে যায় সবকিছু। কিন্তু নুসরাতের মৃত্যুতে কি সব অচল করে দেয়া হরতাল ডাকবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো? দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে এই খুনের ঘটনার অপরাধী আর সংগঠকরা? অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা হয়তো সাজা পাবে। কিন্তু তার পেছনে বসে তাকে মদদ যোগানো রাজনৈতিক শক্তি? তারা হয়তো বহাল তবিয়তে রাজত্ব করবে। নুসরাতের পুড়ে যাওয়া প্রাণহীন শরীরের ছবিটা আমাদের অনেকের মনে আরো কিছুদিন অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে।কারণ আমরাও তো আশি ভাগেরও বেশি পুড়ে যাচ্ছি, গিয়েছি।

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199