পূজার ছুটিতে…

ইরাজ আহমেদ

সাহিত্য সম্পাদক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 10 Oct 2024

2060 বার পড়া হয়েছে

Shoes

মনে মনে ভাসতে ভাসতে কতদূর চলে যাই! কত কী মনে পড়ে। বহুদিন আগে ট্রেনে চড়ে গিয়েছিলাম এক ছোট্ট মফস্বল শহরে। পূজার ছুটি। তখন এত হৈ হল্লায় ভরে ওঠেনি চারপাশ। নির্জন শহরে পূজার ছুটির দিনগুলো কাটিয়ে দেয়া আত্মীয়দের সঙ্গে। মনে পড়ে, কাঠের বাড়িটার কথা। যার ছাদ ছিলো লাল টালিতে ছাওয়া। শরীরে সবুজ রঙ। পাশে খোলা মাঠ। মাঠে একটা বড় শিউলি গাছ। ভোরবেলা গিয়ে দেখি সাদা আর কমলা রঙে আলো হয়ে আছে পুরো মাঠ। দূরে রেল কলোনীর মণ্ডপ থেকে ভেসে আসছে ঢাক বাজার শব্দ। বাড়িটোর সামনে ট্রেন লাইন। ট্রলি ট্রেন চলে যায় লাল নিশান উড়িয়ে। চারপাশে জেগে থাকে বর্ষাপীড়িত ম্লান রোদ। বিকালে সবার সঙ্গে শহরে পূজা মণ্ডপ দেখতে বের হওয়া। বাতাসে কেমন কুয়াশার ঘ্রাণ। ছোট শহরের গান যে অন্যরকম হয় এখন তা বুঝতে পারি।  তখন সেই শহরের সরু রাস্তা, বাগান দিয়ে ঘেরাও ছোট ছোট বাড়িঘর আর অদ্ভত নৈঃশব্দ মনে অচেনা লেখকের চিঠি পাঠিয়েছিলো। চিঠিটা আজও রয়ে গেছে।

একটা খোলা মাঠে পূজার প্যান্ডেল। ভিতরে দেবীর মূর্তি। মণ্ডপে সেই প্রথম আমার প্রতিমা দেখা। খুব বেশি ভিড় ছিলো না। সামনে কয়েক সারিতে ডেকোরেটর্সের ভাঁজ করা কাঠে  চেয়ার পাতা। কিছু মানুষ বসে আছে। ধূপের গন্ধে চারপাশ আচ্ছন্ন। তবুও সেই অল্প ভিড়ের মধ্যে আমি হারিয়ে গেলাম। চারদিক কৌতুহলী দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে কখন দেখি একটা উৎসব-কানা গলিতে এসে দাঁড়িয়েছি। কয়েকটা দোতলা একতলা বাড়ি গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়ানো। সাদা অ্যাসফল্টে মোড়া রাস্তা। আর হাতের পাঁচ হিসাবে আছে নির্জনতা। কোন পথ ধরে কোথায় দাঁড়ালাম! ফিরবো কেমন করে? জট পাকিয়ে গেলো সব মাথার মধ্যে। মণ্ডপের মাইক থেকে ভেসে আসা গানটা বেশ অনেকটা দূরে সরে গেছে বলেই মনে হচ্ছিলো। বুঝলাম, আমি পথ হারিয়েছি। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ। তাকিয়ে দেখি এক বালিকা। তার সাজ বলে দিচ্ছে গন্তব্য নিশ্চিত ভাবে পূজার মণ্ডপ। আমাকে এদিক-ওদিক তাকাতে দেখে তার প্রশ্ন ছিলো, কোথায় যাবো আমি? পথ হারিয়েছি জেনে জানতে চেয়েছিল, কোথায় যাবো? শহরে অতিথি আমি তার কী জানি!আত্মীয় বাড়ির বিবরণ শুনে সে চিনেছিলো পাড়াটা। রেল কোয়ার্টার। চলো, আমি চিনি। তারপর এ রাস্তা-সে রাস্তা টপকে ফিরে আসা বোগেনভিলিয়ার ঝাড়ে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা সেই সাদা রঙ করা নিচু কাঠের গেটের কাছে। ততক্ষণে বাড়ির বারান্দায় স্বজনদের উদ্বিগ্ন পায়চারি ঝরে পড়ছে সশব্দে।

পৌঁছে দিয়ে ফিরে গিয়েছিলো সে। আর কোনোদিন দেখা না হওয়ার আশঙ্কা পেছনে রেখে। সত্যিই আর দেখা হয়নি কোনোদিন। সেই ছোট্ট মফস্বল শহরটাতেও আর কোনোদিন ফিরে যাওয়া হয়নি আমার। ট্রলি ট্রেন, লাল নিশান, বোগেনভিলিয়ার ঝাড়, পূজা মণ্ডপে ধূপের সুঘ্রাণ আর পদ্মফুলের মতো রাত্রির পুকুরে হঠাৎ ফুটে ওঠা তাকেও আর দেখিনি কোনোদিন। তবু পূজার ছুটি পড়ে গেলে মনে পড়ে। আবার সেই শহরটায় ফিরে গেলে কেমন হতো? সরু গলির ভিতরে আজও কি তার ছায়া পড়ে আছে চারপাশ থৈ থৈ করা ধূপের ঘ্রাণের মধ্যে?

ছবিঃ ইনস্টাগ্রাম, গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199