প্রফেশনাল জেলাসি আর অহংকার এক বিষয় নয়…

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 30 May 2024

2765 বার পড়া হয়েছে

Shoes
আশিকুজ্জামান টুলু

 দেশের প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান এবং গায়ক আশিকুজ্জামান টুলু। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন কিন্তু গানের পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে তার নিয়মিত যোগাযোগ।  লেখালেখির সঙ্গেও তার নিযমিত বসবাস এবার প্রাণের বাংলায় গান আর গান বিষয়ক নানান ভাবনা নিয়ে সময় পেলেই লিখবেন তিনি।

প্রফেশনাল জেলাসি থাকা দুই কলিগ যুগ যুগ একসঙ্গে বসে কাজ করে যেতে পারে, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থাকতে পারে, তারা ব্যাক্তিগত পর্যায়ে নিজস্ব সৃস্টি করতে পারে। এই সুস্ঠু প্রফেশনাল জেলাসি কালজয়ী সৃষ্টিুর অবতারনা করে। বিষয়টার বিস্তার বিশাল অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতিটি অকুপেশনেই প্রফেশনাল জেলাসি আছে এবং তার একটা ইতিবাচক দিকও আছে। ছোট্ট করে উদাহরন দেই- আমাদের নাইন্টিজের মিউজিশিয়ানদের জীবনেই বিদ্যমান। যাঁদের আপনারা নাইন্টিজের মুখপাত্র ভাবেন, তাদের মধ্যে যথেস্ট প্রফেশনাল জেলাসি ছিলো কিন্তু ৯০% ক্ষেত্রে এরা একেবারে এক পরিবারের সদস্যদের মত চলাফেরা মেলামেশা করতো। যখনই কেউ একজন দেখেছে আরেকজন ভালো একটা গান সৃস্টি করেছে, ব্যাস ওর ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। ও কিন্তু হিংসায় জ্বলেপুড়ে অন্য মিউজিশিয়ানদের কাছে তার বদনাম করেনি। বরং ঐ সুন্দর সৃস্টিটার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য আরেকটা সৃস্টি করেছে। প্রকৃতপক্ষে মনের অজান্তে সে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে এবং শ্রোতাকুল আরেকটি অসম্ভব সুন্দর গান পেয়েছে। কিন্তু অহংকার বিষয়টা মোটেই প্রফেশনাল জেলাসি নয়, বরং আনপ্রফেশনাল ফেলাসি বলা যেতে পারে। এটা একটা মানুষকে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। নিজের মধ্যেই তার বিচরন হয় যেহেতু অন্যকে সে মনে মনে কাউন্টও করেনা তাই তার শিক্ষাও এক জায়গায় এসে থেমে যায়। আরেকজন মিউজিশিয়ান আরেকটা বিষয়ে কতটা সমৃদ্ধ হতে পারে, সেটা জানাও হয়না এবং শেখাও হয়না। আমার একটা প্রচ্ছন্ন অনুধাবন- ২০০০ সাল, যখন থেকে মিউজিক বাক্সে বন্দী হয়ে গেলো তখন থেকে এক্সচেন্জ অফ আইডিয়াও লোপ পেলো কারন তখন ইন্ডিভিজুয়ালিজম এমন পর্যায়ে চলে গেলো যে কেউ কারো স্টুডিওতে গিয়ে অন্যের কাজ দেখার সুযোগ কমে যায়। শুধু নিজের কাজ নিয়েই সে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। তাতে যে ভালো কাজ হয়নি, তা নয়। কিন্তু নাইন্টিজের মত একটা বিরাট সঙ্গবদ্ধ পাওয়ারফুল মিউজিসিয়ান গ্রুপ তৈরী হয়নি।

২০০০ সালের ওরা একা একা হিরো হয়েছে এবং যার সংখ্যা হাতে গোনা যাবে। তাতে করে ভালো সৃস্টির সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। এই ইন্ডিভিজুয়ালিজমই একধরনের অহমবোধ এনে দিয়েছে তাদের মধ্যে। তারা শেয়ার এ্যান্ড কেয়ারে মোটেই বিশ্বাসী নয়। একারনেই ২০০০ পরবর্তী জেনারেশনে “আমি সব পারি” বিষয়টা চলে এসেছে। আমিই লিখবো, আমিই সুর করবো, আমিই বাজাবো, আমিই গাইবো, অন্য কাউকে আমার দরকার নাই কিংবা অন্য কাউকে আমি হিরো বানাবো না। গান যেরকম গলাই ডিমান্ড করুক না কেন, আমি আমার আনকনভেনশনাল অ্যামেচার গলা দিয়েই গেয়ে মানুষকে হ্যাবিচুয়েটেড করে ফেলবো আমার এই গলা শুনতে। এই মনোভাবের কারনে অনেক গায়ক ডিপ্রাইভ হয়েছে ভালো ভালো গান থেকে, সঙ্গে শ্রোতারাও। কারন একটা ভালো গান যখন একটা ভালো গলায় ইন্সটল হয়, তখন গানের স্পার্কলটাই অন্যরকম হয় । এরকম একটা আমিত্বের মধ্যে বিরাট শ্রোতাশ্রেনী তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে কারন এক আমি দিয়েতো আমি শুধু আমার প্যাটার্নের শ্রোতা পাবো, বিরাট শ্রোতাশ্রেনী পাবোনা। কালেক্টিভ অ্যাফর্ট মিউজিকে প্রচন্ড ভ্যারিয়েশন আনে যেহেতু সেখানে পাঁচজনের ট্যালেন্টের যোগফলে ইকুয়েশনটা হয়। এক্সেপ্শন নিয়ে কথা বলে লাভ নেই কারন এক্সেপ্শন কোন জেনারেলাইজড বিষয় নয়। আর বর্তমান তো কিছু ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ । ২০০০ সালের গানের মানুষরা তাও বাজাতে শিখতো, নিজের গানে নিজে বাজাতো। আর এখনতো আরেকটা কপি পেস্ট গোষ্ঠির উন্মোচন হয়েছে যারা ভালো টেকনিশিয়ান কিন্তু ভালো মিউজিশিয়ান নয়। এরা রাশিয়ান কিবোর্ডিস্টের কিবোর্ড পিস নিচ্ছে, উরুগুয়ের গিটারিস্টের গিটার পিস নিচ্ছে, ড্রামারের প্যাটার্ন আসছে ভারখয়ানস্ত থেকে, বেইজের প্যাটার্ন নিচ্ছে মালদীপ থেকে এবং গানের সুর আমাদের দাদার আমলের ফোক গান থেকে, ব্যাস হয়ে যাচ্ছে নতুন সৃস্টি যেখানে আমাদের বাংলা গানের মিনিমাম ঐতিহ্য, যা কিনা নাইন্টিজের বাংলা গানে তবুও পাওয়া যেতো, সেটারও বারোটা বেজে যাচ্ছে। তারমধ্যে “জীবনে ভাইরাল হতে হবে কিংবা ফেইসবুক এবং ইউটিউবে মিলিয়ন ভিউজই আমার পরিচয়, আমার গর্ব, আমার অহংকার” বিষয়টা তো আনলামই না। তবে নতুনরা রেডি হয়ে যাও আরেকটা সাইকোলজিক্যাল মাইন্ডগেমের জন্য। অনেক স্মার্ট হতে চেস্টা করো। কারন সামনে আসছে এ আই । হয় এ আই এর সঙ্গে মাইন্ড গেইম খেলে সহঅবস্থান করবে অথবা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

ছবি: গুগল

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199