ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লতা মুঙ্গেশকর

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 4 Jan 2024

1875 বার পড়া হয়েছে

Shoes

৫ ফেব্রুয়ারি সকালে বিদায় নিলেন তিনি। সুরের আকাশের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র লতা মঙ্গেশকরের বিদায়ে গানের জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তিনি তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে কোটি কোটি মানুষকে গত আট দশক জুড়ে যেভাবে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন তা কিন্তু সাধারণ কোনো বিষয় নয়। তার এই বিশেষ গুণের কারণে তিনি বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের কাছে, নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। জড়িয়ে আছেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন।

না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লতাজীকে কোনো সম্মানে ভূষিত করেননি। করতে পারতেন নানা কারণে। যেমনটি তারা করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে, কাজী নজরুল ইসলামকে কিংবা শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে। লতাজীকেও করতে পারতেন সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য। যাহোক লতাজী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র প্রাঙ্গনে এসেছিলেন কিন্তু গান গাইতে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ভারতীয় সৈন্যরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার দা সূর্য সেন হলে থাকছিলেন অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে, তখন লতাজী তাদের মনোরঞ্জনের জন্য একদল সঙ্গীত শিল্পীদের সঙ্গে এসেছিলেন। তিনি হলের ভিতর একটি মাঝারি আকারের মাঠে জড়ো হওয়া সৈন্যদের আনন্দ দিতে গান করেছিলেন। সেদিন লতাজীকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে গিয়েছিলাম সূর্য সেন হল।

একাত্তর সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের শেষে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনী হিসেবে যুদ্ধ করে যায়। ১১ দিনের যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে হানাদার বাহিনীকে তারা পরাজিত করে। সে বছর ১৬ ডিসেম্বর জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।তখন ভারতীয় বাহিনীর হাজার হাজার যোদ্ধা ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং আবাসিক ভবনে এসে আশ্রয় নেয়।তখন পরাজিত পাকিস্তানী সৈন্যরা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি হিসেবে থাকছিলো।

তখন আমি এইটের ছাত্র। বাবার চাকরির সূত্রে থাকতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত আবাসিক এলাকায়। বিকেল হলে বন্ধুদের নিয়ে খেলতে যাই মহসীন হলের খেলার মাঠে। সেখানে ভারতীয় সৈন্যরা আমাদের সঙ্গে বিকেলে ফুটবল খেলে। মাঠের একদিকে ট্যাংক আর বিরাট বিরাট কামান সাজানো ছিলো। প্রতিদিন বিকেলে ভারতীয় সৈন্যদের সঙ্গে খেলায় বেশ সখ্য গড়ে ওঠে। তারা আমাদের ফল, চকলেট খেতে দিতো।

হঠাৎ একদিন বিকেলে দেখি ভারতীয় সৈন্যরা খেলার মাঠে আসেনি। কেউ একজন বলল সূর্যসেন হলে লতা মঙ্গেশকর এসেছে। সেখানে গান পরিবেশন হচ্ছে। আমরা বন্ধুরা ছুটে যাই সূর্যসেন হলে। কামাল, তসমি, নবাব, কলি আমরা সবাই গিয়ে দেখি হইচই কা-। সৈন্যতে ভরে গেছে ক্যাম্পাস। সূর্যসেন হলের ভেতর থেকে গান বাজনার আওয়াজ ভেসে আসছে। আমরা তখন হাফপ্যান্ট পড়তাম। বহিরাগত বলে আমাদের হলের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অগত্যা লতাজীকে একনজর দেখার জন্য গেটের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকি।

অনুষ্ঠান শেষে দেখি একদল ভারতীয় শিল্পী কলাকুশলী হলের ভেতর থেকে বের হয়ে যার যার গাড়িতে উঠছেন। ভারতীয় সৈন্যরা মুর্হুমুহু হাততালি ধ্বনি দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যদের অবদানের জন্য এই মনোরঞ্জনের আয়োজন করা হয়। সেদিন সম্ভবত ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ লতাজী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। ভারতীয় সৈন্যদের মাঝে লতাজীর জনপ্রিয়তা দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই। সৈন্যরা সবাই লাইন করে দঁড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত তাদের সম্মান দিয়েছিলো। সেদিন এভাবে শেষ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লতা মঙ্গেশকরের প্রোগ্রাম। আর আমি ও আমার বন্ধুরা সেদিন সেই ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে থাকি।

স্বপন কুমার দাস
সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199