আমি একাই লড়াইটা লড়বো

প্রাণের বাংলা ডেস্ক

এডমিন ডেস্ক, ঢাকা থেকে

প্রকাশ: 7 Nov 2024

2410 বার পড়া হয়েছে

Shoes

জন্মের শতবর্ষে পা রাখতে আর এক বছর বাকি রইলো ঋত্বিক ঘটকের। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী রাত ১১টার দিকে মৃণাল সেন সুরমা ঘটককে খবর পাঠিয়েছিলেন, ‘ঋত্বিক আর নেই।’ এক ভবঘুরে চলচ্চিত্রকার তার সমস্ত অতৃপ্তি, ক্ষোভ আর যন্ত্রণা নিয়ে চোখ বন্ধ করেছিলেন সেই গভীর রাতে। চিরকালের জন্য বিদায়। কিন্তু ঋত্বিক ঘটককে বাংলা সিনেমার পৃথিবী কি বিদায় বলতে পেরেছে? তার ভাবনার জগত, চিন্তার তীব্রতা দিয়ে প্রবাহমান সময়ের ময়নাতদন্তের ভিতরে টেবিলে ম্লান আলো জ্বেলে, ছুরি-কাঁচি হাতে যে ঋত্বিক বেঁচে রইলেন তাকে সময় গ্রহণ করলো বরপুত্র হিসেবে। আর তাই হয়তো রাজশাহী জেলায় গত আগস্টে ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা তার পৈত্রিক বাড়ির অজস্র বিধ্বস্ত ইঁটের ফাঁকে জ্বলে উঠলো অসংখ্য মোমবাতি।

ঋত্বিক ঘটকের জন্ম ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর। পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস লেনে জন্ম হয় যমজ ভাই-বোন, ঋত্বিক-প্রতীতির। দু‘জনের ডাকনাম ছিল ভবা আর ভবী।
শৈশব থেকে আমৃত্যু জীবনকে তিনি নিজের মতো করে গড়েছেন, ভেঙেছেন, তারপর আবার নতুন করে গড়েছেন। ভয়ংকর এক উল্টো স্রোতের যাত্রী। রাজনীতি করেছেন। কমিউনিস্ট পার্টির সভ্য ছিলেন। গণনাট্যের কর্মী ছিলেন। নাটক লিখেছেন, অভিনয় করেছেন। ঋত্বিক সাহিত্যিক ছিলেন– গল্প লিখেছেন, ছাত্রাবস্থায় ‘অভিধারা’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করতেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে আজও আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সিনেমাওয়ালা ঋত্বিক কুমার ঘটক।

এক রাতে তীব্র অস্থিরতা আর আচ্ছন্নতার মাঝে ঋত্বিক ঘটকের মনে হলো দারুণ এক চিত্রনাট্য মাথায় ভর করেছে। সেই রাতে লেখার জন্য গোটা বাড়ি খুঁজে বের করলেন কলম আর কালির দোয়াত। কিন্তু কাগজ? কাগজ তো বাড়িতে নেই। কিন্তু লেখার তীব্র তাড়না তখন মানুষখেকো বাঘের মতো পিছু নিয়েছে ঋত্বিকের। খুঁজতে খুঁতে শেষে হাতে পেলেন বোনের পূজার লাল পাড় দেয়া সাদা শাড়ি। শাড়ির ওপরেই লিখতে শুরু করলেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ছিবির চিত্রনাট্য।

সকালবেলা বোন শাড়ি খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করলো সেটার ওপর গোটা রাত ধরে লেখা হয়েছে চিত্রনাট্য। হতবাক সহদোরাকে আস্বস্ত করে সেদিন ঋত্বিক বলেছিলেন, ‘তোর শাড়ি শুধু শাড়িই থাকতো। দেখিস, তোর শাড়ি একদিন ইতিহাস হবে।’

ঋত্বিক ঘটক ঝড়ের ইতিহাস মাথায় নিয়ে পঞ্চাশের দশকে ঢুকে পড়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে। সবকিছু ওলট পালট করে দেয়ার স্বপ্নে তার ডানার ঝাপটে খসে পড়েছে অনেক তুষার, অনেক রৌদ্র। শুধু মানুষের কাছে থাকার জন্য, তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ক্যামেরা নিয়ে বিপ্লবের ব্রত গ্রহণ করেছিলেন। বলেছিলেন, ইমিডিয়েট সাকসেস শিল্পের শেষ কথা নয়। শিল্প মানে লড়াই।’ লড়াইটা ঋত্বিক কুমার ঘটক লড়েছিলেন। দৃপ্ত কন্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি একাই লড়াইটা লড়বো।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
ছবিঃ গুগল

 

মন্তব্য করুন

Share Article

আরো পড়ুন

আরো পড়ুন

স্বত্ব © ২০১৬ - ২০২৩ প্রাণের বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: আবিদা নাসরীন কলি।

Email: Article: [email protected], Avertising: [email protected]

Phone: +8801818189677, +8801717256199